Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাহারি বেলুনে প্রাণঘাতী বিস্ফোরক

হাইড্রোজেন গ্যাস

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। সুতা দিয়ে বাঁধা। গ্যাস ভর্তি বেলুন। দেখতে খুব সুন্দর। এসব খেলনা বেলুন ছেয়ে গেছে কুমিল্লাসহ সারাদেশ। এ বেলুন ফুলিয়ে রাখতে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরিতে অ্যাসিড ব্যবহারের কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকলেও বেলুন বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। বরং এ বেলুনের বেচাকেনা বেড়েছে দ্বিগুণ।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। হাইড্রোজন গ্যাস ভর্তি এসব বাহারি বেলুন আসলেই হতে পারে প্রাণঘাতী বিষ্ফোরক। ঝলসে যেতে পারে যে কোন মানুষের মুখসহ সারা শরীর। আর এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবার আশঙ্ক রয়েছে শিশুদের। গত বুধবার ঢাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায় গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ৭ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে যাবার পরও থেমে যায়নি এসব বেলুন কেনাবেচা।

গতকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মোড়ে মোড়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে এইসব বেলুন। শিশুরা দেখলেই বায়না ধরে কিনার জন্য। অভিভাকরাও আদরের শিশুর হাতে এটি তুলে দিতে কার্পণ্য করছেন না। শিশুদের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে এসব বেলুন। শুধু শহরে নয় হাতে হাতে গ্রামেও ছড়িয়ে যাচ্ছে এসব বেলুন। অসাবধানতার কারণে কোনো শিশুর হাত থেকে ছুটে গেলেই এসব বেলুন উড়ে যায় দূর আকাশে! অভিভাবকরা হয়তো ভাবতেই চান না এই সুন্দর খেলনাটি শিশুর শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর! এমনকি বেলুনের ভিতরে থাকা গ্যাসের কারণে মৃত্যুও হতে পারে।

কুমিল্লাা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান উপরোক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ার তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়াম থেকে অপেক্ষাকৃত হালকা এবং আকাশে আরও বেশি উচ্চতায় যেতে পারে বলে এর ব্যবহার করা হয় বেলুনে। তবে আগুনের সংস্পর্শে আনলে তা বিস্ফোরিত হবে। হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তত করা খুবই সহজ। পানিকে ইলেক্ট্রলাইট করলেই হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস অতি দাহ্য বা সহজেই জ্বলে ওঠে। আচমকা কোনো বেলুন ফেটে গেলে পাশে ধূমপানরত কোন ব্যক্তির সিগারেটের আগুনই যথেষ্ট। এ থেকেই ঘটতে পারে মারাত্মক অগ্নিকান্ড। অনেকটা পেট্রোল বোমার মত। যতক্ষণ গ্যাস থাকবে ততক্ষণ আগুন স্থায়ী হবে।

বেলুনগুলো প্লাস্টিক ও জরি কাগজ দিয়ে তৈরি মনে হলেও ওগুলো আসলে পলিথিনেরই আরেকটি সংস্করণ। যা কোনভাবেই পচনশীল নয়। দেশে এ ধরণের পলিথিনের ব্যবহার সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী স¤প্রতি চীন থেকে প্লাস্টিকের আদলে তৈরি এসব পণ্য দেদারসে দেশে আনছে বিভিন্ন কৌশলে। কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও গড়ে উঠেছে বেলুন কারখানা। গত কয়েক মাসে কুমিল্লায় গ্যাস ভরা ঢাউস বেলুন ফেটে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

গত বুধবার কুমিল্লার পুনাক শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে এসে স্কুল শিক্ষক মিজান এর পুত্র জিসান মানুষের দেখাদেখি সেও একটি বেলুন কিনে দেওয়ার জন্য তার বাবার কাছে বায়না ধরে। মিজানের পরিবার মেলায় কেনাকাটা শেষে মেলা গেইট থেকে বের হয়ে রাস্তা থেকে একটি বেলুন কিনে নেয়। বাসায় গিয়ে জিসানসহ পাশের বাসার রয়েল, জান্নাত, সাইফা বলুনটি নিয়ে খেলারত অবস্থায় বেলুনটি ফুটে গিয়ে গ্যাসের দুর্গন্ধে জিসানসহ ও তার বন্ধুরা আহত হয়।

কুমিল্লা শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জসীম উদ্দীন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন একটি বেলুনে যে পরিমাণ গ্যাস ভরা থাকে তা অতিমাত্রায় দাহ্য। এতে আগুন লাগলে একটি ৫ বছর বয়সী শিশুর শরীরের ১০ ভাগ পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সরাসরি সালফিউরিক অথবা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার হচ্ছে বেলুন ফোলানো হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরিতে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে মারাত্মক এসব অ্যাসিডের বিক্রি বা উৎস কোথায়? পরিবেশ ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স এবং নিয়মনীতি না মেনে অ্যাসিড বিক্রি ও মজুদ আইনত দন্ডনীয় হলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে চলছে এই বেচাকেনা ও তার অপব্যবহার?

কুমিল্লা পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিকারক ও বিপদজ্জনক বেলুন বিক্রি বন্ধ করা প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর তাইতো সাধারণ মানুষের দাবি অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এর লাগাম টেনে ধরতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ