Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভাসমান লাল কার্পেট

উজিরপুরের শাপলার বিল সংরক্ষণে উদ্যোগ প্রয়োজন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বর্ষার শুরু থেকেই বরিশালের উজিরপুরের সাতলা বিল এলাকা শাপলার অনাবিল সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল এবারো। এখানকার দিগন্ত বিস্তৃত শাপলা বিলের সৌন্দর্য সকাল ও সন্ধ্যার সূর্যের সোনালী আভাকেও হার মানিয়েছে। বিলের পানিতে লতাপাতা গুল্মে ভরা শত সহস্র লাল, সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে বাহারি রঙের এক নকশিকাঁথা। কেউ কেউ বলছেন দিগন্ত বিস্তৃত ভাসমান লাল কার্পেট।
তবে শাপলা বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে আসা স্থানীয় ও দূর দূরান্তের পর্যটকদের যথেচ্ছ পদচারণায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এখানকার জলজ উদ্ভিজ। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দেশি নৌকা নিয়ে উজিরপুরের শাপলা বিলগুলোতে ভ্রমণে আসা শত শত পর্যটক এ বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে তাদের সচেতনতার অভাব রয়েছে যথেষ্ট। যথেচ্ছ নৌকা চালানোয় বৈঠার আঘাতে শাপলার কান্ড ও মূল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপরন্তু পর্যটকদের খাবার নিয়ে আসা পলিব্যাগ ও প্লাস্টিকের পানির বোতল ছাড়াও বিভিন্ন শুকনো খাবারের প্যাকেটগুলোও বিলের মধ্যে ফেলায় পরিবেশের ক্ষতি তড়ান্বিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের। বছরের ৭ মাস সময় ধরে শতশত একর জমির পানিতে জন্ম নেয়া অগণিত নানা রংয়ের শাপলা এক নজর দেখার জন্য সকাল দুপুর সন্ধ্যায় হাজারো মানুষ ভিড় জমাচ্ছে শাপলা বিলগুলোতে। পর্যটকদের আনাগোনায় দিনদিন মুখরিত হচ্ছে শাপলার রাজ্য সাতলা এলাকা। বিল এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো একসময় অনাহার অর্ধাহারে দিন কাটিয়েছে আয়ের কোন উৎস না থাকায়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে শাপলা তোলাকে। তারা সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে নেমে পড়ে বিলের শাপলা তুলতে। শাপলা বিলই এ অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবিকা হয়ে উঠেছে। আর এখানকার সুস্বাদু শাপলা শুধু বরিশালই নয়, যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারেও।
স্থানীয়দের মতে, প্রায় দুশ’ বছর ধরে সাতলার বিলে শাপলা জন্মাচ্ছে। তবে সা¤প্রতিককালেই এলাকার মানুষের কাছে শাপলার কদর যথেষ্ট বেড়েছে। এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষই এখন শাপলার চাষ ও বিপণনে জড়িত। স্থানীয়রা শাপলা বিলের যথাযথ সংরক্ষণ, উত্তোলন ও পরিবেশ সহনীয় পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সিকদার বাচ্চু সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের জন্য কালবিলা এলাকায় ছোট পরিসরে একটি আবাসন ব্যবস্থার জন্য স্থান নির্ধারণ করেছেন। তিনি জানান, সাতলা দিনে দিনে পর্যটন এলাকায় পরিণত হওয়ায় শাপলা বিলকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। বরিশালের জেলা প্রশাসকও শাপলা বিলে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচির সুপারিশ করেছেন মন্ত্রণালয়ে।
সাতলা ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আজাদ জানিয়েছেন, একসময় শাপলার তেমন কোন চাহিদা না থাকায় পানিতে জন্মে তা পানিতেই মরে পঁচে যেত। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ। এখন প্রায় সারা বছর ধরেই শাপলা পাওয়া যাওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের তালিকায় এ জলজ সবজিকে প্রাধান্য দিচ্ছে।
শাপলা তোলার কাজে জড়িত দিনমজুর বেলায়েত (৩৮) জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে তার সংসার চলছে। প্রতিদিন ৩-৪শ’ টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তার মত বিলের বহু মানুষ। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনোদন ও প্রকৃতি প্রেমী মানুষের কাছে নানা সামগ্রী বিক্রি করেও অর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে আরো বহু পরিবার।
সাতলার শাপলা বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে প্রাকৃতির মাঝে হারিয়ে যাচ্ছেন। গ্রীষ্মের শেষ থেকে বর্ষা-শরৎ হয়ে শীতের শুরু পর্যন্তই উজিরপুরের শাপলা বিলে প্রকৃতির ভাসমান লাল কার্পেট সবাইকে মোহিত করে।
ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক সুমান্ত (২২) জানিয়েছেন, তিনি প্রকৃতির এ সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এতদূর ছুটে এসেছেন। বরগুনার আমতলীর সুমনও (২৫) শাপলা বিলের সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।
সাতলা ছাড়াও আশপাশের আরো কয়েকটি বিলেও বছরের বেশিরভাগ সময় অফুরন্ত শাপলা যেমনি এলাকার মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করছে, তেমনি পর্যটকদের কাছেও তা যথেষ্ট আকর্ষনীয়। তবে সচেতন মহল এ বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার পাশাপাশি শাপলার বংশ বিস্তার নির্বিঘ্ন রাখতে এখানকার পর্যটন ব্যবস্থাকে পরিবেশ বান্ধব রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ