Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিনিয়োগকারীদের পাওনা শোধে বিক্রি হবে -শাহ মোহাম্মদ সগীরের লাইসেন্স

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্য প্রতিষ্ঠান শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের টাকা ও শেয়ার আত্মসাতসহ নানা অপরাধে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর ওই লাইসেন্স বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা থেকে শোধ করা হবে বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত অর্থ।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
কমিশন শাহ মোহাম্মদ সগীরে বিনিয়োগকারীদের টাকা আত্মাসাতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে ডিএসইকে নির্দেশ দেবে বিএসইসি। গতকালকের কমিশন এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ, দীর্ঘদিন ধরে ডিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠান শাহ মোহাম্মদ সগীরে নানা অনিয়ম চলেছে। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিএসইর নিয়মিত পরিদর্শন ও তদারকী না থাকায় এসব অনিয়ম অনেক দিন পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটি পর পর দু’বার লেনদেন নিষ্পত্তিতে ব্যর্থ হলে ডিএসই প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন স্থগিত করে। চলতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির ভৈরব শাখার বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন তাদের বিও হিসাবে যে পরিমাণ শেয়ার থাকার কথা তা নেই। অনেকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের হয়ে রিং শাইন নামের একটি কোম্পানির আইপিওতে আবেদনের নামে তাদের একাউন্ট থেকে টাকা নিলেও বাস্তবে আবেদন করেনি। আর টাকাও ফেরত দেয়নি। এ নিয়ে অর্থসূচক শাহ মোহাম্মদ সগীরের বিরুদ্ধে গ্রাহকের শেয়ার ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। এদিকে গত ১৩ অক্টোবর বিএসইসি প্রতিষ্ঠানটির ডিপি লাইসেন্স স্থগিত করে। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বিক্রিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন অভিযোগ জানানোর জন্য সম্প্রতি কাস্টমার কমপ্লেইন্ট এড্রেস মডিউল চালু করা হয়েছে। তাতে শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে ৪৮ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই আইপিও আবেদনের টাকা নিয়েও সেগুলো জমা না দেওয়া সংক্রান্ত। এছাড়া বিএসইসির নির্দেশে ডিএসইর পরিচালিত এক পরিদর্শনের প্রতিবেদনেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। কমিশন শাহ মোহাম্মদ সগীরে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) ভুমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, শাহ মোহাম্মদ সগীরের গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিএসইসি গত ১৭ অক্টোবর ডিএসই ও ডিবিএকে দুটি আলাদা চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি কোনো উদ্যোগই নেয়নি।
তবে উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন ডিবিএ সভাপতি মো: শাকিল রিজভী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এর অংশ হিসেবে শাহ মোহাম্মদ সগীরের চেয়ারম্যান তাহমিনা জামানকে নিয়ে মিটিং করেছি আমরা। তাকে অনুরোধ করেছি, বাজারের স্বার্থে দ্রুত বিনিয়োগকারীদের টাকা ও শেয়ার ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। আমাদের ইসি সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তাদের ( শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কো) কারণে সব ব্রোকারের বদনাম হচ্ছে। বাজারের উপর আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি।

শাকিল রিজভী বলেন, বৈঠকে ব্রোকারহাউজটির চেয়ারম্যান তাহমিনা জামান তাদের বলেছেন, তার হাতে কোনো টাকা নেই। তাই এই মুহুর্তে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি ব্রোকারহাউজটি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। বিক্রি হয়ে গেলে সবার টাকা ফেরত দিয়ে দেবেন।
ডিবিএ সভাপতি বলেন, আসলে ডিবিএর হাতে তো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার মত কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের পক্ষে কেবল সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ জানানো, বুঝানো ইত্যাদি করা সম্ভব। আর এর সবগুলোই তারা করেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি টেলিফোনে বিএসইসিকে জানানো হয়েছে। রোববার নাগাদ চিঠি দিয়েও জানানো হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ