Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু আজ

অন্য রকম আনন্দ প্রবল দ্বীপজুড়ে

শামসুল হক শারেক/ মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৯, ২:২২ এএম

নীল নীল পানিঘেরা অথৈ সাগরের মাঝে বিন্দুর মত স্থির এক ভূখন্ডের নাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। মহান আল্লাহর অশেষ রহমত সাগর বক্ষে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের অস্তিত্ব। দেশের শেষ ভূখন্ড টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সাগর পথে এর দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। সাগর বক্ষে এটি কখন জেগে উঠেছিল তার সঠিক কোন তথ্য জানা যায় না। তবে ইতিহাসবিদ ও ভূতত্ত্ববিদদের মতে ৪ হাজার বছর আগে থেকেই এটি দাঁড়িয়ে আছে সাগর বক্ষে। দুই যুগ আগেও সেন্টমার্টিন দ্বীপে একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম ছিল সেকেলে কাঠের নৌকা আর ইঞ্জিনবোট। কালের পরিবর্তনে এখন সেন্টমার্টিন যাতায়াতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল জাহাজ। এতে করে দেশি বিদেশি পর্যটকদের প্রবল আকর্ষণের স্থান এখন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।

চলতি পর্যটন মৌসুমে আজ থেকে শুরু হচ্ছে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল। এতে পর্যটন নির্ভর সেন্টমার্টিনে দেখা দিয়েছে অন্যরকম আনন্দ। সাগর বক্ষে অবস্থিত ৯ বর্গ কিলোমিটারের সেন্টমার্টিন দ্বীপের টেকনাফ থেকে দুরত্ব ৩২ কিলোমিটার। টেকনাফের কেয়ারী ঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন পৌঁছাতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা।

সাড়ে ৭ হাজার জনসংখ্যার সেন্টমার্টিন দ্বীপ নারিকেল জিনজিরা হিসেবে খ্যাত এখানে নারিকেল ও পেঁয়াজ প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। দ্বীপের ভেতরে আরো দুটি দ্বীপ আছে যেগুলো ছেরাদিয়া ও মাঝের দিয়া হিসেবে পরিচিত। কেয়া বনের ঝোঁপ ঝাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সেন্টমার্টিন এখন ভরে যাচ্ছে কনক্রিটের দালান কোঠায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দ্বীপে গড়ে উঠেছে ২ শতাধিক হোটেল মোটেল স্থাপনা।

আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণিতে প্রাকৃতিক ঝড়ঝাপটায় কোন সময় সেন্টমার্টিনে দুর্যোগ হয়েছে বলে ইতিহাসে নেই। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, সেন্টমার্টিনের প্রায় চার পাশে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবেই পাথরের বাঁধ। ভাটার সময় দিগন্ত বিস্তৃত তা দৃশ্যমান হয়ে থাকে।
নাফ নদীর কেয়ারী ঘাট থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাতায়াতের সময় দেখা যায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের আদি ভূমি এককালের সুখ-শান্তি ও ধন সম্পদের আবাসস্থল মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য।

গত কয়েক বছর ধরে পর্যটন মৌসুমে সেন্টমার্টিনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দেশি বিদেশি হাজারো পর্যটক। এসব পর্যটক বহনে যুক্ত হয়েছে অর্ধ ডজন বিলাসবহুল জাহাজ। প্রবল চাহিদার কারণে আজ ১ নভেম্বর থেকেই টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে চলাচল শুরু করছে একাধিক জাহাজ। তবে এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেয়েছে পর্যটকবাহি জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন এবং দ্যা আটলান্টিক নামের তিনটি জাহাজ।

গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এসব জাহাজ চলাচলে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অবশ্যই এর আগে এ তিনটি জাহাজ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি পেয়েছে বলেও জানা গেছে । টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহি জাহাজ কেয়ারী সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক শাহ আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা ও স্থানীয় প্রশাসন থেকে অনুমতি সাপেক্ষে ১ নভেম্বর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, সাগর কিছুটা উত্তাল থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এতদিন জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। আবহাওয়া ভালো থাকলে ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, পর্যটক বরণে দ্বীপে পর্যটন ব্যবসায়ীরা হোটেল ও কটেজগুলো সাজিয়েছেন। চলতি পর্যটন মৌসুমে লাখো পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আসতে পারেন বলে দ্বীপবাসি আশা করছেন। পর্যটন নির্ভর সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের খবর দ্বীপে পৌঁছানোর পর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে বর্তমানে জেটির অবস্থা খুবই কাহিল, পর্যটকবাহি জাহাজ ভিড়ার উপযোগী নয়। জেটি এবং পল্টুন উভয়টির খুব খারাপ অবস্থা। বিষয়টি নিয়ে টেকনাফ উপজেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হলেও জেটি মেরামতের উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত ও সেন্টমার্টিন- সোনাদিয়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এখানকার সৌন্দর্য ও আকর্ষণে এখানে প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন। তিনি বলেন, পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পর্যটন মৌসুমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে প্রশাসন। তবে পর্যটকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে মাদকের বদনাম ঘুচাতে মাদকের ছড়াছড়ি রোধেও নজর রাখা হবে।
এদিকে দ্বীপের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনীর ষ্টেশন থাকলেও সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছ বিজিবির স্বতন্ত্র একটি ফাঁড়ি।



 

Show all comments
  • মজদুর জনতা ১ নভেম্বর, ২০১৯, ৭:২১ এএম says : 0
    ।পর্যটন হয়ে উঠুক সরব।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ