পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপারের দৃশ্য সবারই দেখা। পথচারি চলছেন সড়কে কিন্তু চোখ মোবাইলের স্ক্রিনে। এক হাতে চালাচ্ছেন সাইকেল কিন্তু অন্য হাতে মোবাইলে কথা বলছেন। ফুটওভার ব্রিজ আছে, তারপরেও ব্যস্ত সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলার প্রতিযোগিতা। রাজধানীসহ সারাদেশেই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে অহরহ। এতে করে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানী। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজন পথ চলায় সতর্কতা।
পক্ষান্তরে সড়কে বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিংয়ের অশুভ প্রতিযোগিতা, যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করানো, চলার পথে চালকদের সিগনাল না মানার প্রবনতাও হরহামেশাই দেখা যায়। এসব কারণেই প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানী। দুর্ঘটনারোধে তথা নিরাপদ সড়কের জন্য সংশোধন করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন। যাতে নতুন কিছু ধারা উপধারা সংযোজন করা হয়েছে। বহুল আলোচিত সেই আইনটি কার্যকর হচ্ছে আগামীকাল থেকে। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, সড়ক পরিবহন আইনটি যেভাবে সংসদে পাস হয়েছে, সেভাবেই কার্যকর করা হচ্ছে। এই আইনে কোনো দাঁড়ি-কমা কিছুই পরিবর্তন করা হয়নি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা লাগবে। পুলিশের ভয় দেখিয়ে আইনটি কার্যকর করা সমীচীন হবে না। তবে তিনি বলেন, আইন মেনে চলার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি প্রয়োজন।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর গেজেট জারি করা হলেও তার কার্যকারিতা এতদিন ঝুলে ছিল। এর আগে ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে আগের আইন কঠোর করে ২০১৮ সালে এই আইনটি করা হয়েছিল।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আগস্টে আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার। জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর গেজেট প্রকাশ হয়। এই আইন অনুযায়ী, মোটরযান চালনাজনিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দন্ডবিধি-১৮৬০ এর এ সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। তবে দন্ডবিধির ৩০৪বি ধারাতে যাই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। আইনের ১১৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন অপরাধের তদন্ত, বিচার, আপিল ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি (১৮৯৮) প্রযোজ্য হবে। আইনের ৬ ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর, পেশাদারদের ক্ষেত্রে ২০ বছর। একই ধারার (গ) উপধারায় বলা হয়েছে, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস।
পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারায় মালিক শ্রমিকদের আপত্তি নেই। আইনের বিষয়ে শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে-সড়ক পরিবহন আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির বদলে পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, এই আইনের সব ধারাকে জানিযোগ্য করতে হবে। যে কোনও মামলা যে কোনো মালিকের বিরুদ্ধে হতেই পারে। তবে জামিন পাওয়া তাদের অধিকার। আদালত মনে করলে জামিন দেবেন। কিন্তু আইনে সেই সুযোগ না থাকলে তা হবে অবিচার। তিনি বলেন, এ সেক্টরে এখনও শিক্ষিত চালক বা হেলপার পাওয়া যায় না বিধায় আমরা চালক হেলপারদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি শিথিল করার সুপারিশ করেছিলাম।
এদিক, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য শুধু পরিবহন শ্রমিককে দায়ী করা হলেও এজন্য পথচারিরাও কম দায়ী নয়। পথচারিদের অসচেতনতার জন্যও অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলো সে চিত্র দৃশ্যমান। একইভাবে রাজধানীতে মতিঝিল থেকে গুলশান-বনানী রুটে চলাচলকারী ৬ নম্বর বাসের চালক হামিদ আলী বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর পরেও অনেক সময় পথচারিদের ভুল বা অসচেতনার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে, মানুষ মারা যায়। এজন্য চালকদের দায়ী করা ঠিক হবে না। আইন করার পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন করতে হবে।
এদিকে, নতুন এ আইনটি কার্যকর করতে পুলিশ কতোটা ভূমিকা রাখবে বা রাখতে পারবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, আমি কিছু বললে পুলিম তা দুই মাস মনে রাখে। তারপর ভুলে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এ আইন কতোটা কার্যকর হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে পুলিশের উপর। প্রথম দিন থেকেই পুলিশ এ আইনটি কার্যকরের জন্য সচেষ্ট হলে অবশ্যই ভাল ফল মিলবে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার আশরাফুজ্জামান বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বা দুর্ঘটনা কমানোর জন্য পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবে শুধু পুলিশের উপর নির্ভর করলে চলবে না। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পথচারিদের অসচেতনতা ও অবহেলাও দায়ী। তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা চেষ্টা করবো আইনটি যাতে সবাই মেনে চলে। এজন্য কর্মসূচীও নেয়া হয়েছে।
এদিকে, গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন। সেসব নির্দেশনা হচ্ছে-১. দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখতে হবে। ২. একজন চালক দৈনিক পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালাবেন না, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি করতে হবে। ৫. অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৬. চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া সম্প্রতি নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ওই সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় ও নিসচার যৌথ উদ্যোগে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ চালককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহন আইন যেন সব চালক মেনে চলেন, তার জন্য ২০২৫ সালের মধ্যে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রশিক্ষণের প্রকল্পটি আগামী ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে। ৬০ ভাগ চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। বাকি ৪০ ভাগ চালকের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।