পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সারাদেশে আগাম শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। ‘ভেজিটেবল জোন’ যশোর, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, মেহেরপুর, রাজবাড়ি, ফরিদপুর ও দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠ ভরে গেছে সবজিতে। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও বাড়ির আঙ্গিনায় এক ইঞ্চি জমিও ফেলে রাখেননি চাষিরা।
যেদিকে চোখ যায় শুধু সবজি আর সবজি। শিম, বাধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, লাউ, কচুরমুখী, পেপে, ধনেপাতা, বরবটি ও টমেটোসহ রকমারি সবজি চারিদিকে। মাঠে সবজির ফলন দেখে চাষীদের বুক ভরে যাচ্ছে। দাম মোটামোটি ভালো পাচ্ছেন। ভোক্তারাও আগাম শীতকালীন স্বাদ পাচ্ছেন।
তবে মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা হলে উৎপাদক চাষি এবং ভোক্তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। সবজি চাষিদের কথা, ‘কষ্ট করি আমরা আর ফল খায় মুনাফাখোররা, এর বিরুদ্ধেব কোন ব্যবস্থা হলো না, তাদের দাপট চলছেই’। সেজন্য জোরালোভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণের দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নজর দেওয়া জরুরি বলে কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিস উইং এর পরিচালক এবং ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক কৃষিবিদ চন্ডিদাস কুন্ডু গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সারাদেশে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন দু’টি মৌসুমে সবজি আবাদ হয় ৭ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। মোট উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬০লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বড় অংশই হয় শীতকালে। এবার শীতকালীন সবজি উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বেশ আগেভাগেই শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে।
এই মুহুর্তে শীতকালীন প্রায় ২ লাখ হেক্টর এবং আগাম প্রায় ১ লাখ হেক্টর মোট ৩ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি রয়েছে। হালকা ছিটেফোঁটা বৃষ্টির কারণে সবজির উৎপাদন খুবই ভালো হচ্ছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। চলতি মৌসুমে অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে আগাম সবজির বাম্পার ফলনের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা মেহেরপুরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ হতে বিভিন্ন ধরনের অডিও ভিজুয়াল হাইটেক প্রশিক্ষণ দেওয়ায় চাষিরা নিত্য নতুন লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তাছাড়া ধান ও পাটের উপযুক্ত মূল্য না পাওয়ায় সবজিসহ অন্যান্য ফসল আবাদের দিকে ডাইভার্ট হচ্ছে।
যশোর এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর নাসিম রেজা জানান, সবজি চাষিরা এখন সবজি উৎপাদনে বিরাট লাভবান হচ্ছেন। তবে সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠলে আরো লাভবান হতেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও অর্থনীতিবিদ সূত্র জানায়, শীতকালীন সবজিকে ঘিরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এবার আগাম সবজির লেনদেন ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে। সাধারণত অন্যান্যবার এই লেনদেন নভেম্বর থেকে শুরু হয়। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এই সময়টাতে সবজি চাষিদের হাতে অর্থ আসছে। যা গতবছরও কল্পনা করতে পারেননি চাষিরা। তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি হচ্ছে চাঙ্গা।
যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরার এলাকায় অভাবনীয় ফলন হয়েছে সবজির। সবজির বড় হাট বারীনগরের সবজি চাষি আসলাম জানালেন, সবজিতে মাঠ ভরে গেছে। এতা সবজি কয়েকবছরে এই সময়ে দেখিনি। দাম পাচ্ছি তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছে বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সবজি যাচ্ছে ঢাকা। যশোরের বারীনগরের সবজির পাইকারী বাজারটি শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে অবস্থিত। এক কেজি সবজি পরিবহন খরচ লাভসহ সর্বোচ্চ ৫ টাকা হলেও খুব বেশি হেরফের হওয়ার কথা নয়। মাঠে এক কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। প্রতিকেজিতে ২৫ টাকা যাচ্ছে মধ্যস্ত¡ভোগেীদের পকেটে। ফলে লাভবান হতে পারছেন না দেশের মোট সবজি চাহিদার প্রায় ৬৫ ভাগ সরবরাহকারী অঞ্চলটির চাষিরা।
বগুড়ার তথা উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম পাইকারি সবজির হাট ও আড়তে ইতোমধ্যেই মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, ধনেপাতাসহ মৌসুমি শাক উঠছে প্রচুর পরিমাণে। বর্তমানে বগুড়ার রাজা বাজার, ফতেহ আলী বাজার, কলোনী বাজার, নামাজগড়সহ সব খুচরা সবজির বাজারে প্রতিকেজি ফুলকপি প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পাতাকপি ৩০-৪০ টকা, মুলা ১৫-২০টাকা, পটোল ৪০ টাকা, সিম ৬০-৮০ টাকা , করলা ৬০-৮০ টাকা, লাল শাক ৪০ টাকা, পালংশাক ৪০ টাকা, এবং ধনে পাতা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে যোগাযোগ করে জানা গেছে , এ মৌসুমে জেলার ১২ উপজেলায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের এবং উৎপাদনের টার্গেট দুই লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন ধার্য করা হয়েছে। উৎপাদিত এ শাকসবজির সম্ভাব্য গড় বাজার মূল্য ধরা হয়েছে ৫শ’ ২৮ কোটি টাকা।
অন্য এলাকার মতো রংপুর অঞ্চলের কৃষকরাও চলতি বছর শীতকালীন সবজি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি চাষ করা হয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের শাক-সবজি কৃষকের ঘরে উঠবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সমতল ফসলি জমি ছাড়াও তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র, দুধকুমার, যমুনেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলের শত শত একর জমিতেও চাষ করা হয়েছে নানা জাতের সবজি। চাষিরা জানান, তাদের চরাঞ্চলের জমি অসমতল ও বালির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ইরি-বোরোর পরিবর্তে একই জমিতে একই সাথে ছয়-সাত প্রকার সবজি ও রবিশস্য চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তৃীর্ণ ফসলি মাঠজুড়ে শীতের সবজির সবুজ বিপ্লব ঘটবে। এবারে কুমিল্লার কৃষিপ্রধান গ্রামগুলোতে শীতের সবজির বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ বছর সবজি চাষের জন্য কুমিল্লা অঞ্চলের আবহাওয়া ছিল অনুক‚লে। অগ্রাহায়ণের মাঝামাঝি থেকে পৌষের সময় পর্যন্ত কুমিল্লার সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, ব্রাক্ষ্রণপাড়া, চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলার উঁচু এলাকায় চাষকৃত শাক-সবজি এখানকার সর্ববৃহৎ সবজি বাজার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন নিমসারের আড়তে স্থান পাবে। আবার কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, চকবাজার, রাণীরবাজারেও সদর উপজেলা ও সদর দক্ষিণ উপজেলার শাক-সবজি ঠাঁই পাবে। কুমিল্লার উৎপাদিত সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ফেনী, নোয়াখালী, লহ্মীপুর, বি-বাড়িয়া, চাঁদপুর জেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা সদরের পাঁচথুবি ইউনিয়নের চাঁনপুর, সূবর্ণপুর, জালুয়াপাড়া, শাহাপুর, গোলাবাড়ি, আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমপুর, জামবাড়ি, বাশমঙ্গল এবং সদর দক্ষিণের কোটবাড়ি, লালমাই, বিজয়পুর, ভুশ্চিসহ অন্যান্য গ্রামে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে শীতের শাক-সবজি।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দিলীপ কুমার অধিকারি জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের নজরদারি ও উপজেলা পর্যায়ে চাষীদেরকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সবধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ায় এবং আবহাওয়া সময়োপযোগী হওয়ায় এবারে কুমিল্লা জেলায় শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।
এদিকে শাক-সবজির জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ধুম পড়ে গেছে। নরসিংদীতে উৎপাদিত শাকসবজি রাজধানী ঢাকা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশেপাশের জেলাগুলোর কমবেশি ৪০ ভাগ চাহিদা পূরণ করে। এ বছর নরসিংদী জেলায় ৩৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। নরসিংদী শাকসবজির শুধুমাত্র দেশের বাজারে বিক্রি হয় না। এখানকার শাকসবজি আকাশ পথে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। নরসিংদী শীতকালীন প্রধান সবজি হচ্ছে আশ্বিনী শিম। মাচায় উৎপাদিত একেকটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। ছোট আকারের লাউও ৪০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। লাল শাক বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে। পালং শাক বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কোন দরে। এছাড়া বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বাগানেও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।