পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মৎস্য উৎপাদনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বাংলাদেশে। মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এ অর্জন ৪ বছর পূর্বেই সম্পূর্ণ হয়েছে। গত বছরে ৪২ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরে উৎপাদন হয়েছে ৪২ দশমিক ৭৬ লাখ ৬৪১ মেট্রিক টন। জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ইনকিলাবকে বলেন, আমরা মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, এটা গোটা জাতির জন্য অনেক বড় অর্জন। মাছ আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
বর্তমানে দেশে মোট নদী-নালা-হাওর-বাওরের পরিমাণ ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর। তার মধ্যে ২৬ হাজার হেক্টর পুকুর, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর বাঁওড় এবং ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ হেক্টর চিংড়ি খামার। প্র্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বা ১১ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্যখাতে জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে প্রায় ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে এই মৎস্য সেক্টরে। আগামী বছরে এর পরিমাণ প্রায় অর্ধলাখ টনে বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এখন চ্যালেঞ্জ বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ উৎপাদন। বিলুপ্ত ৬৪ প্রজাতির মাছ উৎপাদনে ব্যাপক সাড়া মিলছে। ইতিমধ্যে ১৯ প্রজাতির মাছ উৎপাদন ও চাষাবাদ পযুুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি বিলুপ্ত ৪৫ প্রজাতির মাছ উৎপাদনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ চলছে। আগামী ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বে যে চারটি দেশ মাছ চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের পরিবেশ মিঠা পানির মাছ চাষের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট কাজ করছে বলে জানা গেছে। চলতি বছর জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯’র উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি- আমাদের যত ডোবানালা, পুকুর, খাল, বিল রয়েছে সেগুলোকে আমরা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনবো, যাতে করে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সঙ্গে বাড়ির আশপাশের ডোবা, পুকুর ও জলাশয়কে ফেলে না রেখে মাছ চাষ করার আহŸান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেছি। এখন দৃষ্টি পুষ্টির দিকে। বিল, ঝিল, হাওর, বাঁওড়, নদীনালায় পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ করতে হবে। মাছের চাইতে এত নিরাপদ আমিষ আর নেই।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজ ইনকিলাবকে বলেন, দেশে মোট জলাশয়ের পরিমাণ ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর। তার মধ্যে ২৬ হাজার হেক্টর পুকুর, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর বাঁওড় এবং ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ হেক্টর চিংড়ি খামার। প্র্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বা ১১ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্যখাতে জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে প্রায় ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে এই মৎস্য সেক্টরে। এখন চ্যালেঞ্জ বিলুপ্ত প্রজাতির মাছ উৎপাদন। এখন মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। গত বছরে ৪২ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছরে হয়েছে ৪২ দশমিক ৭৬ লাখ ৬৪১ মেট্রিক টন।
মৎস্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, মাছ চাষে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে প্রথম-দ্বিতীয়ও হতে পারে। ১৯৯০ সালে ১ লাখ ৯৩ হাজার টন মাছ উৎপাদন দিয়ে শুরু হয়। ২০০০ সালে তা বেড়ে হয় ৬ লাভ ৫৭ হাজার টন। ২০২ সাল থেকে ২০০৪ সালে ৪২ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন। এর পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন। মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪১.৩৪ লাখ মেট্রিক টন। ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭.৫৪ মেট্রিক টন। ৩৪ বছরের ব্যবধানে ২০১৭-১৮ সালে এই উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪২.৫০ লাখ মেট্রিক টন। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) সর্বশেষ সমীক্ষায় অনুযায়ী উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশই এখন বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করছেন মাছ চাষিরা। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাড়তি চাহিদা, প্রযুক্তির উন্নয়ন, যোগাযোগ অবকাঠামো, লাখ লাখ পুকুর মালিক এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন দ্রæত বেড়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভিশন ২০২১-এ দেশের মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়েছে যা বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে ১০ লাখ টন বেশি। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনার পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ আহরণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্রে মাছ আহরণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ২৫তম। বঙ্গোপসাগরে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি ছাড়াও প্রায় ৫০০ প্রজাতির অর্থকরি মাছ রয়েছে। এ মাসের অতি সামান্যই মাত্র আহরিত হয়। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রজয়ে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরার আইনগত অধিকার পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ পর্যায়ক্রমে বাড়বে। প্রতিবছর অব্যবস্থাপনা ও অবহেলায় উৎপাদিত মাছের একটা বড় অংশ, প্রায় ১০ লাখ টন নষ্ট বা অপচয় হয়ে যায়। এটা রোধ করতে পারলে মাছ উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে। মাছের দাম সাধারণ ক্রেতাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকায় গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ প্রায় শতভাগ বেড়েছে। ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপ অনুযায়ী বছরে বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খায়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিলুপ্ত প্রায় ছোট মাছগুলো আবারো সাধারণ মানুষের খাবারের টেবিলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তাদের উদ্ভাবিত চাষপদ্ধতির কারণে টেংরা, গুলশা, পাবদা, শিং ও মাগুর মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব মাছের কেজি আগে ৮০০ টাকার নিচে পাওয়া যেত না। এখন তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। এমন আরো ১৮টি মাছের আধুনিক চাষ পদ্ধতি ও মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে গবেষণা করছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
দেশে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে বিশ্বে পঞ্চম থেকে চতুর্থ স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয়। বাংলাদেশের আগের দুটি অবস্থানে রয়েছে চীন ও ভারত। দেশে মোট কৃষিজ আয়ের ২৩ দশমিক ৮১ শতাংশ আসে মৎস্য খাত থেকে। জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান এখন তিন দশমিক ৫৭ শতাংশ। কৃষিজ জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের বেশি ১ দশমিক ৮২ কোটি মানুষ মৎস্য আহরণে সম্পৃক্ত। যার মধ্যে প্রায় ১৫ দশমিক ৫ লাখ নারী।
অপর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়,চাষের ও প্রাকৃতিক উৎসের মাছ মিলিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। চার বছর ধরে বাংলাদেশ এই অবস্থানটি ধরে রেখেছে। আর শুধু চাষের মাছের হিসাবে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সাতটি দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের অর্ধেকেরও বেশি আসে মাছ থেকে। প্রাণিজ আমিষের ৫৮ শতাংশ মাছ দিয়ে মিটিয়ে শীর্ষস্থানীয় দেশের কাতারে বাংলাদেশ।
উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় দেশের মানুষ গড়ে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মৎস্য গ্রহণ করছেন। জাটকা নিধন ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ায় ২০১৭-১৮ সালে প্রায় পাঁচ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে প্রায় ৬৯ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।
নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরসহ জলাধারের সংখ্যা হ্রাস পেলেও আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য উৎপাদন বিস্ময়করভাবে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। দেশে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৪১ হেক্টর। তার মধ্যে ২৬ হাজার হেক্টর পুকুর, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর বাঁওড় এবং ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৫৩ হেক্টর চিংড়ি খামার। দেশের প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ বা ১১ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্যখাতে জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে প্রায় ৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে এই মৎস্য সেক্টরে।
ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে
প্রতিবছরই বাড়ছে ইলিশের উৎপাদন। বিবিএস জরিপ অনুযায়ী, মাছের সামগ্রিক উৎপাদনে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার প্রভাবও পড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল পাঁচ লাখ টন। ২০০৮-৯ সালে ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। আর ২০১৮- ২০১৯ সালে ৫ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টন। যা গত নয় বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ২ দশমিক ১৯ লাখ মেট্রিক টন। দেড় দশকের ব্যবধানে এ সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২ লাখ টনে। ইলিশ রফতানির মাধ্যমে আসে দেড়শ থেকে তিনশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যার অর্থমূল্য আনুমানিক সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। ১০ বছর আগে দেশের ২১টি উপজেলার নদনদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদনদীতে এই মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ
চাঁদপুর জেলার ডাকাতিয়া নদীতে থাইল্যান্ডের প্রযুক্তি অনুকরণে ২০০২ সাল থেকে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী ও ল²ীপুর জেলায় মেঘনা নদীর রহমতখালী চ্যানেলে সাড়ে চারশ এবং পাঁচশ খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া করা হচ্ছে। যা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে বছরে ৭০০ টন রপ্তানিযোগ্য তেলাপিয়া। আনুমানিক ৭৫০ বছর আগে চীনের ইয়াংঝি নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। দেশে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় খাঁচায় মাছ চাষ ক্রমাগতভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।