Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাতারবাড়িতেই গভীর সমুদ্রবন্দর

ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা, নির্মাণ শেষ হবে ২০২৪ সালে

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়ার কাছে মাতারবাড়িতেই হচ্ছে অপার সম্ভাবনার গভীর সমুদ্র বন্দর। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম এ গভীর সমুদ্র বন্দর। ২০২৪ সালে বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হলে মহেশখালী হবে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল। বদলে যাবে গোটা কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য। 

জানা গেছে, সরকারের ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ (বিগ-বি) এর আওতায় মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত স্থান নির্ধারিত হয়েছে। জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে জাপানের অর্থায়নে মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে এ গভীর সমুদ্রবন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দরের দিন দিন অতিক্রান্ত সক্ষমতা ও বড় আকারের জাহাজ প্রবেশের সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে এ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রস্তাবিত এ গভীর সমুদ্র বন্দরে ১৬ মিটার গভীরতার এবং ৮ হাজার কন্টেইনারবাহি জাহাজ সহজে যাতায়াত করতে পারবে।
সূত্রে জানা যায়, জাইকা মূলতঃ মাতারবাড়িতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জেটি নির্মাণ করতে গিয়ে উক্ত স্থানে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাবনা দেখতে পায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জেটি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা গেলে নির্মাণ ব্যয়ও অনেক কমে যাবে বলে তাদের অভিমত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সোনাদিয়ায় কোন ধরণের শিল্প কারখানা স্থাপন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করে বলেছেন, কক্সবাজারের এ দ্বীপে শুধু ইকো ট্যুরিজম উন্নত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ অক্টোবর তার কার্যালয়ে (পিএমও) ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ এর ওপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা উপভোগকালে সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা প্রদান করেন। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান। এতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়টি সোনাদিয়ায় নয় মাতারবাড়িতেই চ‚ড়ান্তভাবে রূপ পাচ্ছে। জানা যায়, জাপানের অর্থায়নে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ৪৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার জেটি এবং ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। প্রায় ১৬ মিটার গভীরতা মাদার ভেসেল ওই জেটিতে ভিড়তে পারবে। পারবে ৮ হাজার কন্টেইনারবাহি জাহাজ বন্দরে ঢুকতে।

জানা গেছে, মাতারবাড়িতে বন্দর স্থাপন কাজে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চ্যানেলও তৈরি করবে জাইকা। প্রধান ন্যাভিগেশনাল চ্যানেলটি হবে ৩৫০ মিটার চওড়া। সে সাথে বন্দরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে ১০০ মিটার দীর্ঘ জেটি। গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক কন্টেইনারবাহি জাহাজ, খোলা পণ্যবাহি জাহাজ ও তেলবাহি ট্যাংকারকে জেটিতে ভেড়ার উপযোগী করে তোলা হবে। বন্দরের সাথে সড়ক পথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া হাঁসের দীঘি এলাকা দিয়ে মাতারবাড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫/৩০ কিলোমিটারের একটি প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে।
সরকারের রূপকল্প ২০৪১ সালে দেশে বার্ষিক কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৪ মিলিয়ন এবং জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮ হাজার ২০০টিতে। এ বিপুল সংখ্যক কন্টেইনার ও জাহাজ হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা দেশের বর্তমান বন্দরগুলো দিয়ে সম্ভব নয়। তাছাড়া, দেশে বর্তমানে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় ডিপ ড্রাফটের জাহাজ এ সকল বন্দরে ভিড়তে পারে না। মাদার ভেসেল থেকে গভীর সমুদ্রে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে বন্দরে নিয়ে আসা হয়। এতে সময় নষ্ট ও খরচ বাড়ে বেশি।
দেশের ও আঞ্চলিক দেশ সম‚হের চাহিদার সঙ্গে মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্পাঞ্চলের পণ্য পরিবহনে সহযোগিতা করাই এ বন্দরের ম‚ল উদ্দেশ্য। এ বন্দর স্থাপনের ফলে মহেশখালী উপজেলা গড়ে উঠবে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পাঞ্চল হিসেবে। যেখানে সারা বিশ্বের বাণিজ্যের জন্য বড় বড় জাহাজগুলো এসে সকল প্রকার বাণিজ্যিক পণ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে থাকবে আমদানি-রফতানির সব সুযোগ সুবিধা।
সংশ্লিষ্ট স‚ত্র জানায়, জাইকার উদ্যোগে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে জাইকার বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উপযোগিতার বিষয় তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে জাপানের কাশিমা বন্দরের আদলে এ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে জাইকা।
জানা যায়, জাইকা মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে আগামী বছরের (২০২০ সালের) জুন মাসে চ‚ড়ান্ত আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষর করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ করার টার্গেটও নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে জাইকা মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। ইতোপ‚র্বে মহেশখালীর সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর এগোয়নি। স‚ত্রমতে ২০২২ সালের নভেম্বর গভীর সমুদ্র বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল কন্টেইনার জাহাজের জন্য প্রস্তুত হবে। একই বছর আগস্টের মধ্যে একটি কয়লা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে ১৮ হেক্টর জমিতে নির্মিত হবে কন্টেইনার টার্মিনাল। থাকবে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ বার্থ। এটি সক্ষম হবে ৮ হাজার টিইইউ জাহাজ ধারণ করতে। আর এর বার্ষিক সক্ষমতা হবে ৬ লাখ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউ। পরে, কন্টেইনার টার্মিনাল প্রসারিত করা হবে, ৭০ হেক্টর জমিতে। তখন ১ হাজার ৮৫০-মিটার একটি বার্থ থাকবে এবং এর বার্ষিক সক্ষমতা হবে ২.৮ মিলিয়ন টন।
এ প্রসঙ্গে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় মহেশখালীতে হচ্ছে, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ দেশি বিদেশি ২২ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার কাজ। এতে মহেশখালী হবে দেশের সবচে বড় শিল্পাঞ্চল। বদলে যাবে গোটা কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ রমিজ ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    উন্নয়নের অগ্র যাত্রায় সামিল হোন। শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    মাতারবাড়ীতে জাপান আর পায়রা বন্দরে চীন, ২ টা গভীর সমুদ্রবন্দর হলে তা হবে দারুন ব্যাপার !! দুর ভবিষ্যত চিন্তা করলে আমাদের ২ টাই লাগবে। সপ্ন দেখতে হবে বড়। আর এই সপ্নটা খুবই হাতের নাগালে। তাহলে অযথা দেরী কেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • ডাঃ মোহাম্মদ ইকবাল রনি ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
    যারাই করুক, বাংলাদেশের উচিত এই বন্দর বানানোর কাজ শুরু করা এবং তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। এ ধরনের একটি সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কতটা জরুরি, সেটা আমাদের নীতিনির্ধারকদের অজানা নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
    সব অস্মভব কে সম্ভব করা আওয়ামীলগের পক্ষেই সম্ভব/ দেশ স্বাধীন করা, নিজ খরচে পদ্মা সেতু বানানো, রাজাকারদের বিচার,কম সময়ে বিদ্যুৎ খাতের অভাবনীয় সাফল্য / আর এই প্রকল্পের জন্য তো বিশ্ব ব্যাঙ্ক সহ আরও অনেকে টাকা নিয়া সাধ তাছে/বিএনপি আইলে অবশ্য সব পায়রার মতো উইড়া যাইব কিছুই হইবো না
    Total Reply(0) Reply
  • Manirul ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:২৬ এএম says : 0
    Go ahead, Bangladesh. Love my country .....
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ সেলিম আলদীন ২৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৮ পিএম says : 0
    দেশে এখন পিঁয়াজ সংকট চলছে বানিজ্য মন্ত্রী কি করছে? কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাহার মনে হয় পদত্যাগ করা উচিৎ। এত এত পিঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছলো কিছু দেশদ্রোহী ব্যবসায়ী উক্ত পিঁয়াজ কি করলো, গুদামজাত করলো না তো? উক্ত বিষয়ে তদন্ত করা হয় না কেন? আমি ও তৃণমূল পর্যায়ের অলিখিত আওয়ামী কর্মী। দয়াকরে বানিজ্য মন্ত্রীর ব্যাপারে দেশবাসীর বিপক্ষে সংবাদ প্রচার করবেন কি?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ