Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গুলশানের বাসায় অভিযান আজিজ মোহাম্মদ ভাই থাকেন বিদেশে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৫ এএম, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯

চলচ্চিত্র প্রযোজক ও আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গতকাল রোববার বিকালে গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বর বাসায় এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বাসার কেয়ারটেকারসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

তবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ৩৯দিন পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এ অভিযান লোক দেখানো বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাই কয়েক বছর আগে থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ সময় পর চালানো এ অভিযান নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশানের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের অভিযানকে সারাদেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু এক মাসের অধিক সময় পর আলোচিত ব্যক্তি আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এ অভিযান নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। এতদিন পর যদি বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়, তাহলে আগে অভিযান চালানো হলে কী হতো তা বলা মুশকিল। অভিযানের নামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নাটক করেছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো (উত্তর) অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. খুরশিদ আলম বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল, গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডে আজিজ মোহাম্মদের বাসায় মদের মিনি বারে অবৈধ মাদক বিক্রি ও সেবন করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযানে এসে বাড়ির ছাদে একটি মিনি বারের সন্ধান পাই। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, গাঁজা ও এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। রয়েছে সিসার বার। তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও এই ভবনে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যেমন- কয়েন, কার্ড ও গুটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আজিজ মোহাম্মদ ভাই বাসায় নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রোর রমনা অঞ্চলের পরিদর্শক এ কে এম কামরুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। সেখানে মদের কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই বাসা থেকে ৬০০ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, দু’টি জুয়ার বোর্ড, ৫ কেজি সিসা ও ২০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই বাসা থেকে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তবে অভিযানের সময় আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওই বাসায় ছিলেন না। তিনি বিদেশে বলে জানা গেছে।

ইউকিপিডিয়া বলছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসেন। ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়।

আজিজ মোহাম্মদ ভাই তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইস্পাত প্রযোজকের পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্সের আজীবন সদস্য। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা।

আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে এরশাদের আমলে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাকে মুক্ত করতে আগা খান, প্রিন্স করিম আগা খান নিজেই বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৯৭ সালে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। যদিও হত্যাকান্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। কিন্তু সেটাকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহের পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকান্ড। স¤প্রতি আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকছেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। তার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।

সালমান শাহের মৃত্যুর দুই বছর পর ১৯৯৯ সালে ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকান্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তাকে ইয়াবা ট্যাবলেট তৈরির জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এই একই অপরাধে ২০১৩ সালে তার ভাতিজা আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।

আজিজ মোহাম্মদের ছোট ভাইয়ের বাসায় অভিযান
চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসার পর এবার তার ছোট ভাই রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলশান-২ এর ৫৭ নম্বর রোডের ১১/এ আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসার ভবনের দ্বিতীয় তলায় রাজা মোহাম্মদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান জানান, রাজা মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বেশ কিছু বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। রাজা মোহাম্মদ ভাই মারা গেছেন। তার স্ত্রী বাসাটিতে থাকেন বলে জানা যায়। তবে অভিযান শুরুর সময় বাসাটিতে কেউ ছিলেন না।



 

Show all comments
  • Abeer Rahman Akther ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
    এই আজিজ মোহাম্মদ সালমান সাহ্ হত্যার সাথে জড়িত আমি মনে করি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarokhossain Mubarok ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    শুধু আজিজ ভাইকে না সুফিকুল হক হিরা ও তার মেয়ে রিমান্ড নিয়া হক সব বের হয়ে আসবে
    Total Reply(0) Reply
  • Younus Rana ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    এই সাথে সালমান শাহ হত্যার বিচার করা উচিত এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই সালমান শাহ কে হত্যা করেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Humayun Kabir Hira ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    এ ব্যর্থতা কার? এটা তো প্রশাসনের নেকনজরেই হয়েছে। ঐ এলাকার থানা পুলিশ, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তা তাদের যদি অজানা থাকে তাহলে বুঝে নিতে হবে কেন অজানা। আর যফি না জেনে থাকে তাহলে কোন্‌ যোগ্যতায় পুলিশের পোষাক পরে মাসে মাসে জনগণের করের টাকায় বিপুল বেতনসহ কতোশত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে?
    Total Reply(0) Reply
  • Ahsan Mohmmad ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    মহানায়ক সালমান শাহ্ কে হত্যার মূল হুতা এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাকে গ্রেফতার করে সালমান শাহ্ হত্যার বিচার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • MMKhan ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    Didn't the team as well know that Aziz Bhai was out of the country at the time?
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    "অভিযানের সময় আজীজ মোহাম্মদ ভাই ওই বাসায় ছিলেন না। তিনি বিদেশে বলে জানা গেছে।" - সত্যিকার ভাবেই গ্রেফতার করতে চাইলে তার দেশে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    উনার নামের শেষে ভাই! এই ভাইয়ের অর্থ বুঝলাম না।
    Total Reply(0) Reply
  • Ariful Islam ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    এই একজন ব্যক্তি যাকে আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে শুধু অনৈতিক কাজ করে যেতেই দেখলাম। মাঝে তার ভাগ্নেও এসেছিল নোংরা পথে কিন্তু মামার মত চৌকস না হওয়ায় এখন জেল খাটছে।
    Total Reply(0) Reply
  • M HASAN FUAD ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    এই লোক অনেক অপরাধের সাথে জড়িত। সালমান শাহ ও সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় সেই ছোট বেলা থেকে উনার নাম শুনে আসছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ