Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৩৫ কাউন্সিলরকে নোটিশ

আত্মগোপনে থাকায় ডিএনসিসির বোর্ড সভায় অনুপস্থিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ক্যাসিনোকান্ডে অভিযানের গ্রেফতার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অসংখ্য নেতা। কেউ কেউ পালিয়ে বিদেশ গেছেন; কেউ বা দেশেই রয়েছেন আত্মগোপন করে। এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যে কাউন্সিলর অপরাধ করেছেন তিনি পার পাবেন না। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, কাউন্সিলদের অপরাধের দায় সিটি কর্পোরেশন নেবে না। কাউন্সিলরদের সিটি কর্পোরেশনের সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নোটিশও দেয়া হয়। কিন্তু গ্রেফতার আতঙ্কে কাউন্সিলরদের অনেকেই সভায় থাকছেন অনুপস্থিত।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নিয়ম অনুযায়ী পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ জন কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোশেনের (ডিএসসিসি) ২১ জনকে নোটিশ দেয়া হয়। এর আগে একই কারণে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪ জন কাউন্সিলর নোটিশ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্যাসিনো-কেলেঙ্কারিতে নাম আসায় বিদেশে পালিয়েছেন ডিএসসিসি ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। পরপর তিনটি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকায় তাকেও ‘কাউন্সিলর পদ’ থেকে অপসারণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ডিএসসিসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ এই ব্যবস্থা নেয়। তিনি গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার আগেই দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশ যান। গ্রেফতারের ভয়ে দেশে ফেরেননি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতারের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। কারণ ক্যাসিনোকান্ডে যুবলীগের যারা গ্রেফতার হয়েছেন তারা সকলেই ক্যাসিনোর ক্যাশিয়ার সাঈদের নাম বলেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গতকাল ডিএসসিসির যে ২১ জন কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় তাদের মধ্যে পরপর তিনটি বোর্ড সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ১৯ জন সাধারণ কাউন্সিল এবং ২ সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর। আবার এদের মধ্যে ১৮ জন আওয়ামী লীগের এবং ৩ জন বিএনপির নেতা। ২০১৫ সালের এপ্রিলে মেয়র নির্বাচনের পর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২০টি সভা হয় ডিএসসিসিতে।

অন্যদিকে সভায় অনুপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে ডিএনসিসি কাউন্সিলররাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ডিএনসিসি’র অনেক কাউন্সিলরদের মধ্যেও গ্রেফতার আতঙ্ক। ডিএনসিসির ১৪ জন কাউন্সিলর পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগের, ১ জন জাতীয় পার্টির এবং ১ জন বিএনপির সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর রয়েছেন বলে জানা গেছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ডিএনসিসিতেও ২০টি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ডিএসসিসি’র ২১ জন কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছি। জবাব সন্তোষজনক না হলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, কোনো মেয়র অথবা কাউন্সিলর পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তাকে অপসারণ করা যাবে।
ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর এ পর্যন্ত কাউন্সিলরদের ২০টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু ১৫টি সভাতেই অনুপস্থিত ছিলেন। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসান ছিলেন হাজির হননি ১৪টি সভায়। ১২টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম আশরাফ তালুকদার এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তবা জামান। ১১টি সভায় অনুপস্থিত ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম সজীব এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিল্লাল শাহ। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ১০টি সভায় অংশ নেননি। এছাড়া ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আরিফ হোসেন ৯টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম রাসেল এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন আহমেদ দুজনই ৮টি করে সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম হোসেন, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন টিপু, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সারোয়ার হাসান আলো ৬টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল বাসিত খান ৫টি সভায়, ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছিম মিয়া ৫টি সভায়, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আউয়াল হোসেন ৪টি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ১৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন মনি ১২টি এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোসাম্মদ শিউলী হোসেন ৯টি সভায় অংশ নেননি।

এদিকে টানা তিন সাধারণ সভায় অনুপস্থিত থাকায় ডিএনসিসি’র ১৪ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ডিএনসিসির সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়–য়া বলেন, পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকায় ১৪ কাউন্সিলরের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদেরকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর মেয়র মহোদয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্যাখ্যা না দিলেও তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। স¤প্রতি অভিযানের মধ্যে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় ও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন দুই সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর; কয়েকজন আছেন আত্মগোপনে।

ডিএনসিসি’র কারণ দর্শানোর নোটিশ যাদের দেয়া হয় সেই কাউন্সিলররা হচ্ছেন সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেগম মেহেরুন্নেসা হক, খালেদা বাহার বিউটি, আলেয়া সারোয়ার ডেইজি, ইলোরা পারভীন, সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, আবদুর রউফ, রজ্জব হোসেন, নাছির, শেখ মুজিবুর রহমান, শামীম হাসান, নুরুল ইসলাম রতন, শফিকুল ইসলাম, তৈমুর রেজা ও মোতালেব মিয়া।

জানতে চাইলে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যারা যারা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন তাদেরকে চিঠি পাঠিয়েছি। জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে আমরা সেটি মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবো। স¤প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেও মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএনসিসি। মেয়র বলেন, এদের ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, আইন অনুযায়ী পর পর তিনটি বৈঠকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর না অনুপস্থিত থাকলে তা নিয়মবহিভর্‚ত বলে গণ্য হবে। এ বিষয়ে প্রত্যেক কাউন্সিলরকে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন নোটিশ করবে। কাউন্সিলরদের জবাবও খতিয়ে দেখা হবে। সেখানেও নিয়মের ব্যতয় ঘটলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।



 

Show all comments
  • Shaikh Fuad Hasan ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৪ এএম says : 0
    সুখী সমৃদ্ধ সুন্দর ডিজিটাল বাংলাদেশ!!!
    Total Reply(0) Reply
  • F.i. Rashed ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    যারা জেলে আছে তাদের নোটিশ কি জেলে যাবে? যদি যায় সেটা কি ঠিক হবে? নোটিশের কি দোষ? সে জেলে যাবে কেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Atm Abdur Rahim ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    দূর্নীতি চলে আসছে এটাই মানুষের সবসময়ের ধারণা! কিন্তু সেটা দৃঢ়তার সাথে দমন করার দুঃসাহস দেখাতে পেরে শেখ হাসিনা জনগণের মনে নিজেকে অনেক উচ্চ স্তরে প্রতিষ্ঠিত করে নিলেন! সাফল্য কামনার সাথে ধারাবাহিকতা আশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Aminur Rahman ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    সহজ সমীকরন এতো দিন উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন এবারে শুদ্ধি অভিযান। এরপর কাউন্সিলারদের সম্পত্তির একটা হিসাবও নেওয়া প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Hãsäñ Måhmūd ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
    এই দুর্নীতি বাজদের সমস্ত টাকা পয়সা উদ্ধার করে এই টাকা ও সম্পদ দিয়ে দেশের সমস্ত বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Fahana ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    এই নিউজটি করায় দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার আহমেদ ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
    যাদের বিরুদ্ধে এলাকায় দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর পরিচালনা, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তারা রীতিমত গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • দীনমজুর কহে ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৮:৩৭ এএম says : 0
    * হটাও দুর্নিতীবাজ বাচাঁও দেশ * * শিল্প বাচাঁও দেশবাচাঁ শ্রমিক বাচাঁও * *দুর্নিতীবাজদের অর্থসম্পদ বাজেয়াপ্ত কর* *নতুন শিল্পগড় বেকারত্ব দুর কর * * পায়রা বন্দর এলাকায় শিল্পগড় * * ঢাকার উপর চাপ কমাও*
    Total Reply(0) Reply
  • SK kabir ২৮ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:২০ এএম says : 0
    Still extortion is going on in khilgaon tempu stand by people of Seraj. Police is doing nothing.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ