কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক প্লেসগুলোতে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার’ এবং ‘বেবী কেয়ার কর্ণার’ কেন স্থাপন করা হবে না-এই মর্মে রুল নিশি জারি করেছেন হাইকোর্ট। রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। আগামি চার সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে রুলের জবাব দিতে হবে।

আদালত সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর নিরাপদ পরিবেশে ও স্বাচ্ছন্দ্যে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে ৯ মাসের শিশু উমাইর বিন সাদিকের পক্ষে তার মা ইশরাত হাসান এই রিট দায়ের করেন। রিটে কর্মক্ষেত্র, শপিং মল, এয়ারপোর্ট, বাসস্টেশন, রেলস্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপনের নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে বলা হয়, এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন করতে হবে, যেখানে কোনও মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনও অস্বস্তি বোধ করবেন না। যৌন হয়রানিরও শিকার হবেন না।

আদালত থেকে বেরিয়ে ইশরাত হাসান বলেন, অনেক কর্মস্থলে বা বাস, ট্রেনস্টেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে অনেক সময় যৌন হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ভয়ে মায়েরা অনেক সময় শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। অথচ একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ও পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। আমার মতো হাজার হাজার মা এই সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ব্রেস্ট ফিডিংয়ের নানা অসুবিধার তথ্য উল্লেখ করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন পিটিশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে যে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দেন। এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ করে কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন। সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বীমা-ব্যাংক, শপিং মল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিং মলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্ণার স্থাপন করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন মাতৃদুগ্ধ পান কর্মসূচি বিঘিœত হচ্ছে অন্যদিকে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রিটে পিটিশনারের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।