পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী-‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে অনিয়ম-দুর্নীতি ঘুষ বানিজ্য এবং গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধের নতুন উদ্যাগ নিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৮০টি সমিতিতে গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে উঠান বৈঠক আয়োজনের পাশাপাশি ঘুষের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাগেরহাট, ফেনী, ময়মনসিংহ ও ঝিনাইদহে গ্রাহকদের কাছে নেয়া ঘুষের টাকা ফিরিয়ে দেয়া শুরু করেছে আরইবি। আগামীতে সারাদেশে শুরু করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)র চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধের নতুন উদ্যাগ শুরু হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের অধীন এলাকার ৯৪ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়ে গেছে। বাকি মাত্র ৬ শতাংশ। ২০২০ সালের জুনের মধ্যেই ১০০ ভাগ মানুষই বিদ্যুৎ পেয়ে যাবে। এখন আমাদের মূল সমস্যা গ্রাহক হয়রানি। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গিয়ে এক শ্রেণির দালালের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দালালরা ফাঁক দিয়ে বেঁচে যায়। মাঝখানে আমরা দোষী হচ্ছি। এই দালালদের সঙ্গে আরইবির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরও যোগসাজশ থাকতে পারে। আমাদের ঠিকাদারও জড়িত থাকতে পারেন। মইন উদ্দিন বলেন, আমরা দেশের ৮০টি সমিতিতে গ্রাহকদের অভিযোগ শুনতে উঠান বৈঠক করতে শুরু করেছি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য গ্রাহকদের নিয়ে উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে আমরা নিজেদের কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছি। পাশাপাশি দালালদের কাছ থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। দুর্নীতিগ্রস্ত ঠিকাদারদের ঠিকাদারি বন্ধ করছি।
জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী-‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে বাপবিবোর ‘মুজিববর্ষকে সেবা বর্ষ’ হিসেবে পালন, জনগণের শতভাগ বিদ্যুৎ পাওয়া নিশ্চিত করা, গ্রাহক হয়রানি নিরসনে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কর্মস‚চী অব্যাহত রাখা, গ্রাহক সেবায় পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠক,‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি জোরদার করা,‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে‘ পেপারলেস অফিস’ চালু করা, পরিবেশ বান্ধব ২০০০ সোলার সেচ পাম্প স্থাপন,তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’ অর্জনে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করা শুরু হয়েছে। বর্তমানে আরইবির গ্রাহক-সংখ্যা ২ কোটি ৭২ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী ৯৪ ভাগ। আরইবি দেশের ৪৬১টি উপজেলার মধ্যে ৩৪১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়িত করেছে। অবশিষ্ট ১২০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। ২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। আর আরইবি বলছে, আগামী বছরের মধ্যেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। তবে, বিদ্যুতের দ্রুত স¤প্রসারণে ঘুষ বাণিজ্যে ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে আরইবি। স¤প্রতি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের বেতকাটা, জিয়লমারী ও মিরাখালী গ্রামে নতুন বিদ্যুৎ লাইন থেকে সংযোগ দেওয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে দালালচক্র অতিরিক্ত ৫০ হাজার ৮০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়ার মাধ্যমে দুই দালাল লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে আরইবিতে।ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মইন উদ্দিনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে ১২৭ জন ব্যক্তির কাছ থেকে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে নিয়েছে বলে প্রমাণ মেলে। ফলে, গত ১ অক্টোবর ১২৭ জন গ্রাহককে মোট ৫০ হাজার ৮০০ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেওয়ার নামে নেওয়া ঘুষের দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর জেনারেল ম্যানেজার মকবুল হোসেন। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুতের অভিযুক্ত কর্মচারী আবুল বাশারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চার বছর আগে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের চারটি পাড়া থেকে পল্লী বিদ্যুৎ ফুলবাড়িয়া জোনাল অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবুল বাশার মোল্লা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে ৮৭ জন গ্রাহকের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন। দীর্ঘ দিনেও ওই গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় উঠান বৈঠকে গ্রাহকরা অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ময়মনসিংহ-১-এর ডিজিএম (কারিগরি) মোস্তাফিজুর রহমান। তদন্তে আবুল বাশার মোল্লার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর ফেনীর ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আদায় করা ঘুষের টাকা বাবদ ২০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীদের ফেরত দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ফেনী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) কার্যালয়ে গ্রাহক ফিরোজ আহাম্মেদ ও সবুজের হাতে এ টাকা তুলে দেওয়া হয়।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার গাবতলা গ্রামের কাজিবাড়ির জমির উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ আহাম্মেদ ও একই গ্রামের হাজি বাড়ির শাহ জাহানের ছেলে সবুজ মিয়া বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য নীলক্ষী গ্রামের ফোরকান নামে এক ইলেকট্রিশিয়ানের কাছে যান। ফোরকান ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইনম্যান মীর খাদেমুল ইসলামের সহায়তায় লাইন ও মিটার বাবদ বিলবিহীন অবৈধ সংযোগ দেন। এ সময় লাইনম্যান খাদেম ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে দুই গ্রাহক থেকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে গ্রাহকদের মিটারে বিদ্যুৎ বিল না আসায় বিষয়টি ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের জানান। এরপর সমিতির পক্ষ থেকে সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সাদেক মিয়া ও আনিসুর রহমানকে দিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘুষ নেওয়ার প্রমাণ পান তিনি।
চলতি বছরের ২০ জুন ঝিনাইদহের শৈলকুপা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন খুলুমবাড়িয়া গ্রামের গ্রাহকরাও টাকা ফেরত পেয়েছেন। বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ১২৬ জনের কাছ থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ টাকা নিয়েছিলেন ওই এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক পরিচালক। এই ঘটনা দুই বছর আগের। দুই বছরেও বিষয়টির কোনও সমাধান না হওয়ায় অভিযোগ যায় আরইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। প্রধান কার্যালয় থেকে ওই পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ অনুযায়ী গত ২০ জুন বৃহস্পতিবার লাইনে দাঁড় করিয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেন ওই পরিচালক। পরিচালকের বিরুদ্ধেও পরে ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে আরইবি জানায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।