পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষা শেষ হতে না হতেই বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামজুড়ে আবার শুরু হয়েছে পাহাড়-টিলাগুলোতে অবৈধ খোঁড়াখুঁড়ি ও দখলবাজি। কেটে-খুঁড়ে ছেঁটে পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে একেকটি পাহাড়। সমতল হয়ে যাচ্ছে উঁচু ভূমি। এর নেপথ্যে তৎপর ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। পাহাড়ের ঢালে তারা রাতারাতি গড়ে তুলছে অবৈধ স্থাপনা। সারি সারি বস্তিঘর বানিয়ে ভাড়া তুলছে। সবকিছু চলছে প্রশাসনের চোখের সামনেই। অধরাই থেকে যাচ্ছে পাহাড়খেকোরা।
অথচ প্রতিবছরের রুটিন দায়িত্ব পালনের মতোই মাত্র মাসখানেক আগেও দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরত দরিদ্র ও নিম্নআয়ের হাজারো মানুষকে ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে নেয়ার জন্য মাইকিং, ওদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু, অবৈধ বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ প্রশাসনের নানামুখী তোড়জোড়। চট্টগ্রামে পাহাড় টিলা কেটে-খুঁড়ে ফেলা যেন ‘স্বাভাবিক’ ব্যাপারে পরিণত হয়ে গেছে। অধিকাংশ পাহাড়ের মালিক সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), জেলা প্রশাসন, রেলওয়ে, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) ও বিভিন্ন সরকারি বিভাগ বা সংস্থা। অথচ ভূমিগ্রাসীদের কবল থেকে পাহাড় টিলাগুলো সুরক্ষা করতে পারছে না সরকারি এসব সংস্থাও। এর পেছনে একদিকে দুর্নীতির যোগসূত্র আর কর্তাদের অবহেলার অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে সরকার দলীয় নাম-পরিচয়ধারী প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দাপট। এ অবস্থায় পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রামের সুশোভিত ভূ-প্রাকৃতিক মানচিত্র।
স্থলভাগে মানুষের বসবাস। “ভূমির উপর পেরেক স্বরূপ পাহাড় টিলা শিলারাশি” আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির অসীম মহিমায় মানবজাতির বসবাসের উপযোগী ভারসাম্য সুরক্ষা করছে। অথচ নির্বিচারে সেই পাহাড়-টিলারাজি ধ্বংস করছে একশ্রেণির অতিলোভী মানুষ। ডেকে আনছে মহাবিপদ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়গুলোর চিত্র দিন দিন ওলোট-পালট হয়ে যাচ্ছে। ভ‚মিগ্রাসীরা কেটে খুঁড়ে ছেঁটে পাহাড়ের গায়ে এমনকি তলায় সারি সারি বসতঘর তৈরি করছে। সেসব ঘর ভাড়া দিচ্ছে গরীব দিনমজুরদের কাছে। কিছুদিন পর পুরো একটা পাহাড়-টিলা কেটে আরও সমতল করে সেখানেই নির্মিত হচ্ছে পাকা ভবন।
পাহাড় কেটে বালিমাটির ব্যবসা জমজমাট। চট্টগ্রামে এখন আর কোনো পাহাড় অক্ষত খুঁজে পাওয়া যাবে না। গরীব জনগোষ্ঠি পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবার-পরিজনের সাথে বসবাস করছে। যাদের সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি। বর্ষা শেষ হয়ে এলেই পাহাড় দখল ও কাটাখোঁড়ার যেন মহোৎসব শুরু হয়। শুষ্ক মওসুম জুড়ে চলে পাহাড় ধ্বংসযজ্ঞ। বর্ষার আগে মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে ভূমিদস্যুরা অবাধে পাহাড় টিলা কেটে-খুঁড়ে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় ফেলে রাখে।
আর বর্ষায় বৃষ্টিপাত শুরু হলেই সেসব কাটা-ভাঙা, ভঙ্গুর এবং ক্ষতবিক্ষত পাহাড় টিলার মাটির ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। তখনই পাহাড়ের মাটি নরম ও শিথিল হয়ে একে একে পাহাড়-টিলায় এবং পাহাড়ের ঢালু ভূমিতে ধস নামতে শুরু করে। এই অপকৌশলের কারণে ভূমিদস্যুদের জন্য পাহাড় বিরান করা আরও সহজ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের জীবন ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়। পাহাড়গুলো পরিণত হয় মুত্যুকুপে।
এ প্রসঙ্গে ভূ-তাত্তি¡ক বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোর ভৌগোলিক ও ভূ-প্রাকৃতিকভাবে গঠন বা গড়ন শক্তিশালী নয়। এখানকার পাহাড়গুলো প্রধানত বালুমাটির। যা নরম ও শিথিল। এতে করে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ভাঙা বা কাটা পাহাড়ের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই পাহাড়ধসের কারণে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, পাহাড় ধসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে হলে যার পাহাড় তাকে দায়-দায়িত্ব নিয়ে সুরক্ষা করতে হবে। চট্টগ্রামে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, গণপূর্ত, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি ব্যক্তিগণ যারা পাহাড়ের মালিক তাদেরকেই যথাযথ উপায়ে পাহাড় সুরক্ষায় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। পাহাড়ধসের টেকসই সামাধান দরকার। এরজন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগতভাবে পাহাড় সুরক্ষা করতে হবে।
ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাহাড় কেটে অপরিকল্পিত বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়। বর্ষায় পাহাড় ধুয়ে আসা বালিমাটি পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে নালা-নর্দমা ভরাট ও অকেজো করে দিচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হলেও তা টিকবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পাহাড় কাটা এবং ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ না হয়।
বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলো মূলত বালুমাটির গঠন। এক থেকে দেড় ফুট নিচেই বালুর লেয়ার রয়েছে। এতে পানি প্রবেশ করলেই পাহাড় ধসে যেতে পারে। তাছাড়া পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডের পরিণতিতে পাহাড়ের ভেতরে অনেক ফাটল, গর্ত বা ছিদ্র তৈরি হয়। বৃষ্টিতে ব্লক আকারে পাহাড়ের ধস হতে পারে।
চট্টগ্রাম মহানগরী ও শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় টিলা কেটে ফেলার কারণে বিশেষ করে দক্ষিণ খুলশী, কৈবল্যধাম, নাসিরাবাদ, বায়েজিদ, আকবর শাহ, সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস-লালখান বাজার মতিঝরণা পাহাড়, টাঙ্কির পাহাড়, মোজাফফর নগর পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোল পাহাড়, বন গবেষণাগার সংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, বাটালি হিল, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি পাহাড়, গরিবউল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়, জালালাবাদ পাহাড়, জঙ্গল সলিমপুর পাহাড়, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার পাশের পাহাড়, ফৌজদারহাট ইত্যাদি এলাকায় পাহাড়-টিলা ধ্বংসের সাথে সাথে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলায় সীতাকুন্ড, মীরসরাই, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজার জেলার অনেক এলাকায় এবং তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানে পাহাড় ধ্বংস ও বেদখলের পাশাপাশি ধসের ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়েছে।
এদিকে ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড় ধস ট্র্যাজেডির (নিহত ১৩৬ জন) পর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি পাহাড়ধসের পেছনে ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে। পাহাড়ধস রোধে সরকারের কাছে ৩৬ দফা সুপারিশ পেশ করে কমিটি। কিন্তু এক যুগ পরেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। তাছাড়া ২০১৭ সালে গঠিত ২৭ সদস্যের অপর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় বিশিষ্ট ভ‚তত্ত¡ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম এবং অধ্যাপক আবদুল হক অভিমত প্রদান করেন, ‘পাহাড়কে পাহাড়ের মতোই থাকতে দিতে হবে। পাহাড়ের সম্পদ ও সম্ভাবনাকে পরিকল্পনা সহকারে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজে লাগাতে হবে।
কিন্তু তা করা হয়নি। পাহাড়ধস বন্ধে শক্তিশালী আইন প্রয়োজন। পাহাড়ে যাতে আর একটি কোদালও ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি ছাড়া না পড়ে সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের বিভিন্ন পাহাড়ের ভ‚-প্রাকৃতিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য একরকম নয়। এরজন্য অবিলম্বে একটি দীর্ঘমেয়াদি জরিপের মাধ্যমে সমস্যার গভীরে যেতে হবে’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।