পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের অনেক দেশকে পেছনে ফেলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলার কৃষি দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ কৃষিতে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের গর্ব ও অহংকারের ব্যাপার। দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। আদিকাল থেকেই কর্মবীর কৃষকরা নিরলস পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে দৃষ্টান্তস্থাপন করে চলেছেন।
বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কৃষকের নিজস্ব প্রযুক্তি সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি ঈর্ষণীয় সাফল্যের সাথে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যসহ কৃষি অগ্রযাত্রার সুফল না পাওয়ায় দিনে দিনে পিছিয়ে পড়ছেন কর্মবীর কৃষকরা।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। বিশাল এই সেক্টরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্যে সমন্বয় ও উল্লেখযোগ্য দৃষ্টি দেয়ার অভাবে কৃষকরা কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিনে দিনে এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। কৃষকরা আর্থিকভাবে দুর্বল হলে একপর্যায়ে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কৃষির উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষকের আর্থিক উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।
কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’ ৫৬ হেক্টর। বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদনে ইতোমধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ ৩য় ও চালে ৪র্থ অবস্থানে পৌঁছানোর কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. আব্দুল মুঈদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কৃষি সম্প্রসারণ ও উৎপাদনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কৃষকের সংখ্যা মাত্র ৩%। ফসল আবাদের ক্ষেত্রে সিলিং করে দেওয়ার সুযোগ আছে। তাতে তারা যে ফসলের মূল্যে কখন কতটা লাভবান হবেন তার হিসাবে চাষাবাদ করতে পারে। সেখানে লোকসান হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশে কৃষকের সংখ্যা ৬৫%। বিদেশিদের মতো চাষাবাদের কন্ট্রোল করা ডিফিকাল্ট। তবুও কৃষকরা আমাদের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে যে ফসলে লাভবান হয় কৃষকরা সেই ফসল ধান পাটের বদলে সবজি ও ভুট্টায় ডাইভার্ট করে আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। তারপরেও কৃষির অগ্রগতির স্থায়ীত্বে অবশ্যই ফসলের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির বিষয়টিতে নজর দেওয়া উচিত।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। কৃষি আরো এগিয়ে নেওয়া যেত যতগুলো বিভাগ আছে তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকলে। বাাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে আশানুরূপ উন্নতি হলেও ফুড ম্যানেজমেন্ট ও আধুনিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। যার জন্য যার জন্য কর্মবীর কৃষকরা প্রায়ই উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পান না।
মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, মাঠের যেসব সমস্যা আছে তা নিরসন করে কৃষক ও সামগ্রিক কৃষির উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে বাংলার কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। সূত্রমতে, বাংলাদেশ কৃষিপণ্য উৎপাদনে অইেশ দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু ফসল ও ফল উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা সায়েন্টিফিক্যালি না হওয়ায় বিদেশিদের কাছে ব্যাড রেপুটেশন রয়েছে। সব দেশেই ফসল ও ফল উৎপাদনে নির্দিষ্ট ডোজের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যা পোকামাকড় জীবানু ধ্বংস করার পর কীটনাশক নিজেও ভ্যানিস হয়ে যায়। থাকে না ন্যূনতম কার্যকারিতা। আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি গড়ে উঠেনি। যার জন্য কৃষিপণ্য আশানুরূপ রফতানি হচ্ছে না। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ফুড প্রসেসিং ব্যবস্থাটা সন্তোষজনক নয়। আম, পেয়ারা, স্টবেরি, ছবেদা, বাউকুলসহ ফল এবং সবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে অব সিজনে ব্যবহারের মত কোন ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়নি। আবার প্রসেসিং পদ্ধতিও উন্নতমানের নয়।
খুলনার ডুমুরিয়ার রবিউল ইসলাম ও যশোরের শার্শার বাবুল আকতারসহ মাঠের সাধারণ কৃষকদের কথা, নানা কারণে মাঝেমধ্যেই কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েন। যখন দেখেন উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না কৃষিপণ্যের। মনটা বিষিয়ে উঠে। কর্মবীর কৃষকরা রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না। হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসল অনেক সময় ঘরে তুলতে পারেন না বিনা পুঁজির ব্যবসায়ী মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের কথা, বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার অভাবেই এটি ঘটছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছরে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের হার বেড়েছে। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগ এবং শ্রমশক্তির ৬০ ভাগ কৃষিতে নিয়োজিত। দারিদ্র্য বিমোচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিশিল্পের উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৭৬ লাখ ৮শ’ ৪টি। তাদের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৪ দশমিক ৭৫%। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দেশের ৬৪টি জেলা, ৪শ’ ৮৫টি উপজেলা ও ১২হাজার ৬শ’ ৪০টি বøক রয়েছে। স¤প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা হলেও সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িতরা আবাদ ও উৎপাদনে অনেক ক্ষেত্রে মার খাচ্ছেন। আবার ভালো ফলন ফলিয়েও মধ্যস্বত্বভোগী, মুনাফালোভী পাইকারদের দাপটে লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে কৃষকদের। দেশের প্রায় সবখানেই এনজিও ঋণের জালে জড়িয়েও কৃষকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।
সুত্র জানায়, উন্নত বিশ্বের ন্যায় অনলাইন বাজার ব্যবস্থার প্রচলন করা যেতে পারে। উন্নত বিশ্বের অনেক স্থানে কৃষকের মাঠ থেকে কৃষি পণ্য ক্রয় করে নিয়ে তাঁদের হাতে শুধু একটা টোকেন দেয়া হয়, পরে সেই টোকেনটি নির্দিষ্ট ব্যংকে জমা দিলে সেখান থেকে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যয্য মূল্য পেয়ে যান। ঐসব দেশে কৃষকের কাজ হলো কৃষি পণ্য উৎপাদন করা আর সেটাকে লাভজনক করা সরকারি সিদ্ধান্তের ব্যাপার, কৃষকের নয়। সে ধরনের একটা বাজারের প্রত্যাশা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।