পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের নৌসীমানায় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ থামছেনা। গত ৯ অক্টোবর থেকে আগামি ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নিষিদ্ধ রয়েছে মাছ শিকার। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নৌসীমার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় জেলেরা ফিসিং ট্রলার নিয়ে অনুপ্রবেশ করে বিপুল পরিমাণ ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই ভারতীয় এসব জেলেদের অনুপ্রবেশের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের জেলেরা।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, আসন্ন মৌসুমে ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশি জেলেদের মাছ শিকারের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, চলতি অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ৫টি ট্রলারসহ ৬৩ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করেছে নৌ-বাহিনী। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের নৌসীমা থেকে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকা কাছে হওয়ায় সেখানকার বিপুল সংখ্যক জেলে এদেশের নৌসীমায় মাছ ধরতে আসে। প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারি-মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশি জেলেরা বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় ট্রলার ও নৌকায় করে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা ধরনের মাছ আহরণ করে থাকে। সমুদ্র শান্ত থাকায় এ সময়টা জেলেদের মাছ আহরণের উপযুক্ত মৌসুম।
সুন্দরবন উপকূলের মোংলা, রামপাল, শরণখোলা ও দাকোপ উপজেলার কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে জানান, ভারতীয় জেলেদের উৎপাত দিন দিন বেড়ে চলছে। একসময় ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের নৌসীমা ঘেষে বা কিছুটা ভিতরে ঢুকে ইলিশ শিকার করতো। শীত মৌসুম পুরোপুরি শুরু না হতেই বর্তমানে সুন্দরবন উপক‚লীয় এলাকার কাছাকাছি এসে ফিসিং বোট নিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে ভারতীয় জেলেরা। অধিকাংশ সময়ই তারা গোপনে মাছ শিকার করে চলে যায়। বিদেশী জেলেরা বাইনোকুলার দিয়ে ট্রলারে বসে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে।
তারা আরো বলেন, নিষিদ্ধ কালীন সময়ে যখন দেশীয় জেলেরা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকছেন সে সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা এ দেশের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। দেশীয় নৌসীমায় সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বেশি এবং মাছ খেতে সুস্বাদু -তাই এ সময়টাই মাছ লুণ্ঠনের টার্গেট থাকে ভারতীয় জেলেদের। আর সেই সুযোগ বুঝেই ভারতের জেলেরা অত্যাধুনিক ট্রলার ও মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে বাংলাদেশের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে। তারা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর তৎপরতায় চোখ রাখে এবং নৌ-বাহিনী আসতে দেখলেই দ্রæত পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ভারতীয় জেলেরা আধুনিক অত্যাধুনিক ট্রলার, ওয়ারলেস, অত্যাধুনিক জাল, জিপিআরএস ব্যবহার করে থাকে। এসব ছাড়াও ভারতীয় জেলেদের কাছে রয়েছে ‘ফিস ফাইন্ডার’ যন্ত্র। যা দিয়ে সহজেই মাছের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
সুন্দরবন অঞ্চলে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন দুবলা ফিসারম্যান গ্রæপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রায় সারা বছরই ভারতীয় জেলেরা সাগরে টহলরত বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর জাহাজ ও সরকারি বাহিনীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশীয় নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করে থাকে। তবে বর্তমানে এসব জেলেদের উৎপাত কয়েকগুন বেড়েছে। এসব ভিনদেশী জেলেরা অনেক সময় দেশীয় জেলেদের মারধর করে মাছ লুট করেও নিয়ে নেয়।
মংলাস্থ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরের অপারেশন কর্তকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, দেশীয় জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরেত পারে। আর ভারতীয় দেশীয় সমুদ্রসীমার প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। তারা দ্রæতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এসব জেলেদের ধরতে নৌ-বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও সাগরে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
কয়েকজন আইনজীবী জানায়, মাছ শিকারে অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় জেলেরা ট্রলারসহ ধরা পড়ার পর আদালতে সাধারণত দিক ভুল করে এ দেশে প্রবেশ করেছে বলে ক্ষমা চেয়ে দেশে ফিরে যায়। প্রায়ই দীর্ঘ সময় এ দেশের কারাগারে আটক থাকতে হয় না বলে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে অবাধে মাছ শিকারে উৎসাহিত হয় বলে মন্তব্য করেন।
মংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর ভোরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা থেকে একটি ট্রলারসহ ১৪ ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌ-বাহিনীর টহল দল। এর আগে গত ১ অক্টোবর ১টি ফিসিং বোটসহ ১৫ জন, ৪ অক্টোবর ২টি ফিসিং বোটসহ ২৩ জন ও ১৪ অক্টোবর ১ টি ফিসিং বোটসহ ১১ জন ভারতীয় জেলেকে বাংলাদেশ নৌসীমা থেকে আটক করা হয় এবং মাছ শিকারের অপরাধে আটক জেলেদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে এ পর্যন্ত আটক জেলেদের সবাই ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ২২ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।