Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে পানি

মন্ত্রণালয়-টিসিবির উদ্যোগে প্রভাব নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাণিজ্যমন্ত্রীর বাগাড়ম্বর, ভারত-মিয়ানমার-মিসর-থাইল্যান্ড থেকে আমদানি, টিসিবির বিতরণ কোনো কিছুতেই পেঁয়াজের ঝাঁজ কমছে না। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে লুটে নিচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান কোনো কিছুতেই সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। পেঁয়াজের দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। আর পেঁয়াজের বাজারে গিয়ে ক্রেতারা ফেলছেন চোখের পানি।
নানামুখী উদ্যোগের পর পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি এখন ১১০ থেকে ১১৫ টাকার ঘরে। আর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম উঠেছে ১২০ টাকায়। গতকাল শুক্রবার পাইকারি বাজার কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পচা পেঁয়াজ একশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ। কাওরান বাজারের পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ১০০ টাকার ওপরে। কোনো কোনো মোকামে ১১৫ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজ। ভারতীয় পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজিতে। তবে প্রায় সব দোকানেই ভিন্ন ভিন্ন দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারাও চান পেঁয়াজের দাম কমে যাক।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম আবার বেড়েছে। আর কমবে বলে মনে হচ্ছে না। বাজারে নতুন পেঁয়াজ উঠতেও অন্তত দুই মাস বাকি আছে। তখন হয়তো পেঁয়াজের দাম কমবে।’ আরেক বিক্রেতা আগুন বলেন, ‘মিসরের পেঁয়াজ এখন ৯৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাসখানেক আগে যখন আমদানির সুযোগ দেয়া হয় তখন এই পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৬০ টাকা।’ আনোয়ার নামের এক ক্রেতা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য এক মণ পেঁয়াজ কিনতে কাওরান বাজার এসেছেন। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যর্থতার কারণে জনগণকে এত বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আসলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

কাওরান বাজারের লাকসাম বাণিজ্যালয়ের মালিক মো. হাবিবুর রহমান মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম খুব বেশি ওঠা-নামা করছে। মোকামগুলোতে দাম বেড়েই চলছে। বেশি দামে কিনে আনায় আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ আগের চেয়ে এখন পেঁয়াজের বিক্রিও কম। দাম বাড়তি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও জানান আশফাক নামের আরেক বিক্রেতা।

আব্দুল খালেক নামের পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ নেই। দাম কম থাকলেও এর স্বাদ তেমন ভালো না। তাই ক্রেতারা তা তেমন পছন্দ করেন না।’ বাজারে ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ আসা শুরু করেছে জানিয়ে আরেক পাইকারি বিক্রেতা লেকবর আলী বলেন, ‘শ্যামবাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।’

কাওরান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ফার্মগেটের বাসিন্দা রহিম বলেন, ‘দাম বাড়ায় আগের চেয়ে এখন পেঁয়াজ কম কিনতে বাধ্য হচ্ছি। আগে দুই কেজি পেঁয়াজ সাপ্তাহে লাগতো, এখন এক কেজি কিনছি। কম কেনার পরও তো আগের চেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে। বাজার খরচ সামাল দিতে গিয়ে এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রী বক্তব্য দিয়েই খালাস। দাম কমবে বলে মন্ত্রী যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন তা অনেক আগেই চলে গেছে।
এ দিকে, যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারেও দেখা গেল একই চিত্র। একশ’ টাকার কমে কোনো পেঁয়াজ পাওয়াই যায় না। শনির আখড়া বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেল। এক বিক্রেতা জানান, এই দাম আগামী এক মাসে কমবে বলে মনে হয় না। গতকাল মহাখালীর বউবাজারে পেঁয়াজ কিনেছেন এমন একজন জানান, ওই বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিনি নিজেও ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি ১১০ টাকা দরে কিনেছেন। মহাখালী বাজারের পেঁয়াজের বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে পেঁয়াজের দাম আরও ১০ টাকা বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ না উঠলে বাজারে হয়তো আর দাম কমবে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাতিরপুল, বিজয় সরণির কলমিলতা বাজার, নিউমার্কেট, ফার্মগেট ইন্দিরা রোডের মাহবুব প্লাজার নিচতলার বাজার, ফকিরেরপুল-আরামবাগ বাজার, সেগুনবাগিচা বাজারে ১২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।



 

Show all comments
  • মো: মুরাদুজ্জামান ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৭ এএম says : 0
    গতকাল গাজিপুর,মাওনা থেকে ১২০/-টাকা কেজি দরে পিঁয়াজ কিনেছি। জনগনের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা না থাকার কারনে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ