Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কথা রেখেছেন পরিবার ও গ্রামবাসী রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন

লিখে যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার সেই চিঠি

দিনাজপুর অফিস | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের প্রতি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অমানবিক আচরণের ঘটনায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তাদের অশোভনীয় ও অমানবিক আচরণের নির্মমতা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূর্য সন্তানের প্রতি কতটা অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে তা তার মৃত্যুর পূর্বক্ষণে লিখে যাওয়া চিঠিতে প্রতীয়মান হয়েছে। আর এটাইতো স্বাভাবিক জীবন দশায় প্রাপ্ত অধিকার ও মর্যাদা যে পায়নি সে কিভাবে মৃত্যুর পরের মর্যাদা গ্রহণ করবে। 

জীবন বাজী রেখে দেশকে স্বাধীন করার পর সেই দেশের জনগণের অর্থে লালিত কর্মকর্তাদের দ্বারা ঠুনকো অজুহাতে সন্তানের থাকা-খাওয়ার অবলম্বন কেড়ে নেয়ার ঘটনা দেখতে হয় তাহলে সেই মুক্তিযোদ্ধা বাবার প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। মৃত্যুর দু’দিন আগে দিনাজপুর সদরের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ এম ইকবালুর রহিমের বরাবরে লেখা চিঠিতে তার অপমান ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন।
লিখেছেন এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি ছেলেকে চাকুরিচ্যুত ও বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে। তাই মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা হিসেবে তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে চাইনা। তার চিঠির প্রতি মর্যাদা রেখেছে তার স্ত্রী, সন্তান ও গ্রামবাসীরা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে যাওয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ফিরিয়ে দিয়েছে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীরা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের জন্য সম্মান ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করে চলেছেন সেখানে জেলা পর্যায়ের দৃষ্টতা অমার্জনীয় নয় কি !!!!
দিনাজপুর সদর উপজেলার ৬ নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের যোগীবাড়ী গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাররে এমন একটি চিঠি লিখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন। তার মুক্তিবার্তা নং ০৩০৮০১১০০২, ভাতা বই নং -৮১৯।
তার লিখে যাওয়া চিঠি উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সুপারিশে ছেলে নুর ইসলামের নো ওয়ার্ক নো পে ভিক্তিতে এসিল্যাÐের গাড়ী চালক হিসাবে চাকুরি হয় গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সেই সুবাদে নুর ইসলাম সদর এ্যাসিল্যান্ডের গাড়ী চালাতেন। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে এসিল্যান্ড তাকে বিভিন্ন অজুহাতে চাকুরিচ্যুত করেন। পরে বিষয়টি হুইপ ইকবালুর রহিমকে জানালে তিনি বিষয়টি এডিসিকে দেখতে বলেন। কিন্তু এরপরেও চাকুরি ফেরত না পাওয়ায় জেলা প্রশাসককে জানাতে গেলে জেলা প্রশাসক তার উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি আরো লিখেছেন, জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে নিয়ে করা স্বাধীন দেশে আমার ছেলের রুজি রোজগারটুকুও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া হল। গত ২১.১০.২০১৯ ইং তারিখ থেকে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল দিনাজপুরের কার্ডিওলজি বিভাগে, ওয়ার্ড নং -২,বেড নং -৪৪ এ ভর্তি অবস্থায় আছি। জীবণ মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হঠাৎ যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা হয়। কারণ এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি যারা আমার ছেলেকে চাকুরিচ্যুত, বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে, তাদের সালাম/ স্যালুট আমার শেষ যাত্রার কফিনে আমি চাইনা।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, ২২ অক্টোবর চিঠিটিতে তিনি স্বাক্ষর করে ডাক যোগে ঢাকায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির বরাবরে প্রেরণ করেন। পরের দিন ২৩ অক্টোবর সকাল ১১ টার সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবস্থায় মারা যান। পরে তাকে গার্ড অব অনার দেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ আসলেও তাদেরকে ফেরত দেন পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী।
মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে না পারাটা দেশের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের জন্য কতটুকু মর্যাদা হানিকর তা বিচার করা জরুরি বলেই সচেতন মহল মনে করেন। আর এ জন্য যে সকল কর্মকর্তা দায়ী তাদের ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Azad Patwary ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    সন্তানের চাকরির নিশ্চয়তা নাই - মুক্তি যোদ্ধার জীবিত অবস্থায়ই সন্মান -দেখাতে রাষ্ট্রীয় কোন - কোন - সংহস্থার অনৈতিক আচার -আচরণ বড়ই অসম্মান জনক। আর মৃত মুক্তি যোদ্ধা কে নামের সন্মান দিতেও প্রশাসনের এত অনীহার কারণ কি ? হয়তবা এরা মুক্তি যোদ্ধাদের বীরত্বে আতঙ্কিত-- না হয়তো--এইসব হছেছ কি ?
    Total Reply(0) Reply
  • AMM MURAD ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    ভূয়াদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হয়না বলেই এই অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Iqbal Hossain ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
    মাশাল্লাহ ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • Asad tarafder ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 1
    একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার এমন অভিমানই প্রমান করে, কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শুধু রাজনৈতিক কার্ড হিসেবেই ব্যবহার করার জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 0
    আমার বাবা ও তার বড় ভাই এক সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়েছিল এখন আমার বড় আব্বা মুক্তিযোদ্ধা আর আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এর চেয়ে বড় আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে আমার বাবার মামা মুক্তিযোদ্ধার আহ্বায়ক ছিলেন তিনিও মুক্তিযোদ্ধার লিষ্ট জায়গা পাননি । এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে একজন মুক্তিযোদ্ধার। আজ যখন বাবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের গল্প গুলোর শুনি তখন বাবাকে নিয়ে খুব গর্ব হয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা । বাবা সরকার স্বীকৃত মুক্তিযুদ্ধা নয় কিন্তু আমরা তো জানি তিনি মুক্তিযোদ্ধা এতোটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট। কাউকে ছোট করার জন্য কথাগুলো বলিনি শুধু নিজের মনের ভাব প্রকাশ করলাম তাই নাম টা গোপন রাখলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Pirates King ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
    স্যালুট আপনাকে বীর, সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের পক্ষ থেকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamruzzaman Biplob ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    বোঝা গেছে,উনি ভারতে নয় মাস পালিয়ে থকে স্বাধীনতার পর টাকা খরচ করে সার্টিফিকেট কেনা মুক্তিযোদ্ধা নন!উনি প্রকৃত দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা।। আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুন-আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahmudul Islam ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    অভিমান ক্ষোভ নিয়েই পরপারে চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা । আমরা আপনার কাছে লজ্জিত বীর মুক্তিযোদ্ধা, আমরা জাতি হিসাবে দিন দিন নির্লজ্জতে পরিনত হচ্ছি । ক্ষমা করবেন আমাদের ।
    Total Reply(0) Reply
  • Risur Rahman ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    সব যায়গায়ই আজ মুক্তিযোদ্ধা আর তার পরিবারের সদস্যরা অবহেলিত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nasiruddin Bappy ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    আসল মুক্তিযুদ্ধারা অবেলায় মরে,টাকা দিয়ে হওয়া মুক্তিযুদ্ধারা'ই বিলাসবহুল জীবন ভোগ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Samsu Khan ২৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
    সত্যকে এড়িয়ে প্রশাসন,দেশ জাতির সাথে বেইমানী করেছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোশীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Torikul islam ২৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:১৭ এএম says : 0
    সালাম আপনাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে,,,,,।এর থেকে বর আশ্চাআশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, বর্তমানে এমন কিছু লোক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায়, যাদের জন্ম হয়েছে যুদ্ধের পরে বা ৭১এ তাদের বয়স ছিল ৪/৫বসর।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ