পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে জাপানি এক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে এনেছিলেন ১০০ কোটি টাকা। জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেডের মালিক সেলিম প্রধানের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করতে তিনি এই বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু বিনিয়োগ না হওয়া সেই টাকা এফডিআর করা হয় রূপালী ব্যাংকে।
জাপানি সেই নাগরিক অর্থ ফেরত নিতে গিয়ে পড়েছেন মামলার জটে। এতে ইন্ধন ছিল সেলিম প্রধানের। ব্যাংক সূত্র জানায়, হয়রানির কারণে বিদেশি এই নাগরিকের কাছে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন প্রকল্পে অর্থায়নে সেলিম প্রধানের প্রস্তাবে সমর্থন দেন জাপানি নাগরিক ইউতাকা আকানি। এজন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০০ কোটি টাকার সমমানের ডলার আনেন। সেই অর্থ বিনিয়োগ করতে সময় নেন সেলিম প্রধান। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেলিম প্রধান নতুন প্রকল্প শুরু করেননি। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে জাপানি বিনিয়োগকারী আকানিকে বোঝানো হয়Ñবেশকিছু নিয়ম ও আইন মেনে অনুমোদন নিতে হয়। এছাড়া প্রকল্পের জমি উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণে কিছুটা সময় লাগবে। তখন এই অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন সেলিম প্রধান।
নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে সেলিম প্রধানের প্রস্তাবে রাজি হন আকানি। রূপালী ব্যাংকে আকানির নামে অনিবাসি হিসাব খোলা হয় ২০১২ সালে। এই হিসাবে পরিচয়দানকারী ছিলেন সেলিম প্রধান। শতকোটি টাকার এফডিআর করা হয়।
ব্যাংকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে এফডিআর করতে পারেন না। বিদেশি বিনিয়োগের অর্থও এফডিআর করা যায় না। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ম লঙ্ঘন করেই শতকোটি টাকার এফডিআর করেছেন জাপানি বিনিয়োগকারী আকানির নামে।
সূত্র জানায়, সেলিম প্রধান রূপালী ব্যাংকের একজন ঋণখেলাপি। শত কোটি টাকার ঋণ নিয়ে এখনও ফেরত দেননি। এদিকে নির্ধারিত সময়ে সেলিম প্রধানের কাঙ্খিত প্রকল্প শুরু হয়নি। একাধিকবার সময় বৃদ্ধির পরও প্রকল্প শুরু না হওয়ায় আকানি নিজ অর্থ ফেরত নিয়ে যেতে চান জাপানে। কিন্তু এতে বাদ সাধেন সেলিম প্রধান। কোনোমতে রাজি করতে না পারায় উচ্চ আদালতে তিনি আকানির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এতে রূপালী ব্যাংকে থাকা অর্থ তুলতে পারেননি আকানি। ব্যাংকও আকানিকে টাকা দিতে গরিমসি করে। নিরুপায় হয়ে অর্থ ফেরত নিতে জাপানি নাগরিক আকানি দ্বারস্থ হন বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। লিখিত অভিযোগে সবকিছু জানান। পরে বিষয়টির তদন্তে নামে দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
সূত্র জানায়, বিএফআইইউ দেখতে পায়, বিদেশি বিনিয়োগের নামে অর্থ এনে দেশীয় ব্যাংকে এফডিআর করা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত। এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও উচ্চ আদালতে জমা দেয়া হয়। আদালতে সেলিম প্রধান যুক্তি দেখান, প্রকল্পের ফাইল তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজে তার ১০ কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। এই অর্থ সেলিম প্রধানকে দিতে হবে, নয়তো অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে সেলিম প্রধান ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় আট কোটি টাকা পান। একই সঙ্গে রূপালী ব্যাংককে আকানির অর্থ পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। বর্তমানে এফডিআরের মুনাফা ও সেলিম প্রধানকে দেওয়া অর্থ বাদে আকানির হিসাবে থাকা টাকার পরিমাণ দঁড়িয়েছে ১০৬ কোটি টাকার উপরে।
এদিকে প্রথম আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই নতুন মামলা করা হয় আকানির বিরুদ্ধে। এবার উচ্চ আদালতে মামলা করেন আকানির নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, মামলা পরিচালনায় তার ফি ও চার্জ দেননি জাপানী নাগরিক আকানি। আদালত পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এ বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বলেন। অনেকের ধারনা, এ মামলার পেছনেও সেলিম প্রধানের হাত থাকতে পারে। অর্থ ফেরত নিতে মামলা জটে এখনও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জাপানী নাগরিক আকানি। সূত্র জানায়, বিষয়টি এখন সমাধানের পর্যায়ে পৌঁছালেও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত আকানি। বাংলাদেশে এলে তার বড় ধরনের ক্ষতি এমনকি জীবন নাশ করা হবে বলেও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে তাকে। এ জন্য অর্থ ফেরত নিতে বাংলাদেশে আসতেও ভয় পাচ্ছেন তিনি। অবশ্য এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, সেলিম প্রধান এক সময় জাপানে ছিলেন। সেখান থেকে কয়েকটি দেশে বিভিন্ন ব্যবসা করেছেন। একপর্যায়ে দেশে এসে সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে উত্থান হয় তার। সবশেষে জড়িয়ে পড়েন অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এই মাফিয়ার ভয়ে বাংলাদেশে আসতে পারছেন না আকানি। সম্প্রতি সরকারের শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন ব্যবসায়ী থেকে মাফিয়া লিডার হওয়া সেলিম প্রধান। তার বাসা রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে। সেলিম প্রধান অনলাইনে ক্যাসিনো পরিচালনাকারী এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রধান। তিনি ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেরও সহসভাপতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।