পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পরিচ্ছন্ন ইমেজ এবং সাফল্যের শিখরে উঠে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে জনগণকে দেখাতে চান তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্যই রাজনীতি করেন। এ লক্ষ্যে দলকে পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোও দৃশ্যমান করে দেখাতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। যার জন্য সকল মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মেগা প্রকল্পের পরিচালকদের সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প দৃশ্যমান করতে চান।
পরিচ্ছন্ন ইমেজ গড়তে গৃহীত উন্নয়ন মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ যাতে ব্যহত না হয় এবং দুর্নীতি ও ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিকল্পিত সময়ক্ষেপণ না হয় সেজন্য জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় লোক, আত্মীয়স্বজন কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। ইতোমধ্যে তিনি সে ঘোষণাও দিয়েছেন। ডেসটিনি চূড়ান্ত করে অগ্রসর হওয়ায় উন্নয়ন কাজে টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিতর্কিত নেতাদের লাগাম টেনে ধরতেই শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। অভিযান অব্যাহত থাকবে সে ঘোষণা দিয়ে দলীয় নেতা ও মন্ত্রী-এমপিদের তিনি বার্তা দিয়েছেন চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির মাধ্যমে কোনো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। উন্নয়ন কর্মকান্ড নিজস্ব গতিতে চলবে। প্রধানমন্ত্রীর এই ডেসটিনি বাস্তবায়নে প্রশাসন যন্ত্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সজাগ হয়ে উঠেছে।
দক্ষ মাঝির মতোই শেখ হাসিনা ‘প্রশাসন যন্ত্র’ নামক সরকার তথা নৌকার হাল ধরেছেন। ঝড়ঝঞ্ঝা, তুফান সবকিছু মোকাবেলা করেই তিনি সাফল্যের চ‚ড়ায় দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করতে চান। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বিশ্বের প্রভাবশালী নেতা ও রাষ্ট্রনায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিদেশীদের অভিযোগ ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’-এর মাথায় দাঁড়িয়ে থেকেই উন্নয়ন উপহার দিতে চান। দেশের মানুষকে দেখাতে চান জনগণের জন্যই তিনি।
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজগুলো সময়মতো এগিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত সময়ে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারে না এবং তাদের কাজের মান ভালো নয়, তাদের আর কোনো সরকারি কাজ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সকল মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রকল্পের পরিচালকদের সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রæত সময়ে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালক-৬ শামীম আহম্মেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটে (সিপিটিইউ) পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। ফাস্ট ট্রাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির সভায়ও একই নিদেশনা দেয়া হয়।
সম্প্রতি আলোচিত গৃহায়ন ও গণপূর্তের ঠিকাদার জি কে শামীমের কোম্পানির মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পে গতিহীনতা এবং মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, একাধিক প্রকল্প নিয়ে যারা কাজের মান ও সময় ঠিক রাখতে পারে না, প্রাপ্ত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো কাজ তারা পাবে না। কাজের গুণগত মান ও নির্ধারিত সময়ে শেষ করেছে কি না, সে বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের সক্রিয় হতে হবে।
গত মাসে গ্রেপ্তার জিকে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গণপ‚র্ত অধিদপ্তরের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার কাজ ছিল তার হাতে। তার হাতে থাকা ৫৩ প্রকল্পের মধ্যে ২৫টির কাজই সময়মতো শেষ হয়নি। এর মধ্যে শূন্য অগ্রগতির প্রকল্পও রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ২০১৩ সালে শেষ হওয়া সরকারি কর্মকমিশন (দ্বিতীয় পর্যায়) ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে, স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে। এসব প্রকল্পের মান নিয়েও নানা সময়ে প্রশ্ন এসেছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ থেকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ না করার আহ্বান পরিকল্পনামন্ত্রীর এ অবস্থায় একাধিক কাজ নিয়ে যারা কাজের মান ও সময় ঠিক রাখতে পারে না, তাদের নতুন কোনো কাজ না দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সিপিটিইউর উপ-পরিচালক মৌসুমী হাবিব ইনকিলাব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিপিটিইউতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে সময়ের মধ্যে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে পারেনি এবং যেসব প্রতিষ্ঠান মানসম্পন্ন কাজ করেনি, তাদেরকে নতুন করে কোনো প্রকল্প না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা এ চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
মৌসুমী বলেন, পিপিআর এর আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা বা কাজ দেয়ার মতো দরপত্র আহ্বান করলেও ওই কোম্পানির অতীতের রেকর্ড খারাপ থাকলে ওই কোম্পানিকে কাজ না দেয়ার বিধান রয়েছে। এখন আমরা সেই বিধান অনুসরণ করব।
সরকারের অগ্রাধিকারের প্রকল্পগুলো
আগের ছয়টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প। গত বছরের জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ওই মাসেই ছয়টি প্রকল্পকে অগ্রাধিকারের তালিকায় এনে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। আগের ছয়টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপালে কয়লাভিক্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
পদ্মা সেতু প্রকল্প
২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা তা এখনো হয়নি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ ও ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এছাড়া পুনর্বাসন কার্যক্রম ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের তদারকি চলছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
৫ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে এক হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। সেটি এখনো শেষ করতে পারেনি।
২০১১ সালের নভেম্বরে পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে একটি ‘সহযোগিতা চুক্তি’ সই করে। ওই চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, জনশক্তি উন্নয়ন ও আইনি কাঠামো তৈরিসহ বাংলাদেশকে সব ধরনের সহায়তা দেবে রুশ সরকার।
চুক্তির আওতায় রূপপুরে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট থাকবে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান ফেডারেশনের এ পর্যন্ত তিনটি চুক্তির কাজ শুরু হয়েছে এবং চতুর্থ চুক্তির কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
মেট্রোরেল
২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেট্রোরেলের আংশিক অংশ ২০১৯ সালের মধ্যেই চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে জুলাই ২০১২ থেকে ২০২৪। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদশে সরকার দেবে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা; বাকি টাকা দেবে জাইকা।
পায়রা সমুদ্রবন্দর
মন্ত্রিসভায় ২০১৩ সালের পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আইনের চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেয়ায় পরে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এরপর কাজ শুরু হয়। আগামী ২০২২ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।