Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে দু’হাতে উড়াতেন সম্রাট

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৪ এএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৯

ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন খাত থেকে প্রাপ্ত চাঁদার একটি বড় অংশ জুয়া খেলে উড়াতের ‘ক্যাসিনো কিং’ খ্যাত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। প্রতিমাসে একবার তিনি জু’য়া খেলতে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ক্যাসিনোতে যেতেন। সঙ্গে লাগেজ ভর্তি ডলার নিয়ে যেতেন। তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বিমানে উঠতেন। দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে জুয়া ও নারীর পেছনে দু’হাতে টাকা উড়াতেন তিনি। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছেন সম্রাট। অন্যদিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।

একটি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঢাকার ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের আদ্যোপান্ত সবিস্তারে খুলে বলছেন। তার গডফাদার কে? কিভাবে তিনি এ জগতে পদার্পণ করলেন এবং এসব জুয়ার টাকা কোথায় আছে? কারা সম্পৃক্ত রয়েছে সবকিছুই তিনি খুলে বলেন। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী তালিকা তৈরী করেছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। যাচাই-বাছাই শেষে নামের তালিকা পাঠানো হচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সম্রাট সর্বশেষ আগস্ট মাসের ২৬ তারিখে সকাল সাড়ে ১১ টায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে গেছেন। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করে গত ২৫ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে গেছেন। এছাড়াও তিনি সিঙ্গাপুরে গেছেন ২৯ জুন রাত সাড়ে ১১টার রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে। গত ২৯ মে ভোর সাড়ে ৪টার ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। ২৪ এপ্রিল রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। ২৮ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টায় রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তিনি সিঙ্গাপুরে যান। এছাড়াও ২৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১ টায় সিঙ্গাপুরে এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে সিঙ্গাপুর যান সম্রাট। প্রতিবারই তিনি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন। সম্রাট তার দলবল নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের চ্যামেলী ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতেন। তিনি যখন সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনো খেলতে যেতেন তখন তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার জন্য তার সঙ্গে আরও দুইটি গাড়ি যেতো। সেই গাড়িতে অন্তত ১০ জন যেতেন।

হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে খালেদ
রাজধানীর খিলগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় খিলগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত চলাকালেই খালেদকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো-পূর্বক রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত গ্রেফতার দেখানো-পূর্বক সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা ইসরাইল হোসেন ও তার ছেলে সায়মন ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানী মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৩৮ লাখ টাকা তোলেন। পরে গাড়িতে করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে খিলগাঁঁও থানাধীন তালতলা এলাকায় গাড়ি থেকে নামলে তিন-চার ছিনতাইকারী তাদের গুলি করে টাকার দুটি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ বাবা-ছেলেকে স্থানীয় খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইদিন সেখানেই সায়মনের মৃত্যু হয়। পরে ইসরাইলকে রাজধানীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে (পঙ্গু) নেয়া হয়। এই আঘাতের জেরেই তিনি ২০১৬ সালে মারা যান। এ ঘটনায় সায়মনের চাচা মজিবুর রহমান ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় দন্ডবিধির ৩০২, ৩৯৪ ও ৩৪ ধারায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার আসামি খালেদ। এ মামলায় ২০১৬ সালে ডিবি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তবে আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে স্বপ্রণোদিত হয়ে পিবিআইকে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

ক্যাসিনোকান্ডে কয়েক দফা রিমান্ডের পর কারাগারে ছিলেন খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে তার গুলশানের বাসা থেকে অস্ত্রসহ আটক করে র‌্যাব। পরদিন তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

যে সব অভিযোগ
রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন এই যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াংমেনস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করেন। প্রতিটি ক্লাব থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ টাকা নেন। এসব ক্লাবে সকাল ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত ক্যাসিনো বসে। খিলগাঁও-শাহজাহানপুর হয়ে চলাচলকারী লেগুনা ও গণপরিবহন থেকে নিয়মিত টাকা দিতে হয় খালেদকে। প্রতি কোরবানির ঈদে শাহজাহানপুর কলোনি মাঠ, মেরাদিয়া ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করেন। খিলগাঁও রেল ক্রসিংয়ে প্রতিদিন রাতে মাছের একটি হাট বসান এ নেতা। সেখান থেকে মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা আদায় করেন। একইভাবে খিলগাঁও কাঁচাবাজারের সভাপতির পদটিও দীর্ঘদিন তিনি ধরে রেখেছেন। শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমি দখল করে দোকান ও ক্লাব নির্মাণ করেছেন।

৭ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ
জানা যায়, মতিঝিল, শাহজাহানপুর, রামপুরা, সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ এ নেতার হাতে। এসব এলাকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যথাক্রমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), রেল ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ বেশিরভাগ সংস্থার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন এ নেতা।



 

Show all comments
  • Jamaluddin Mondal ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    আশা ভোসলের কন্ঠের সেই সু বিখ্যাত গানটির কথা মনে পড়ে গেল - এমন করে ধরছ কেন? আমি তো আর চোর নয়, মুঠো মুঠো টাকা ওরাও উড়িয়ে দেবো ওড়না!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ismail ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    গডফাদারদের দ্রুত সামনে নিয়ে আসেন,
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Momin ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
    ক্যাসিনো গ্রেফতার প্রক্রিয়া যখন চলে তখন ২/৩ দিনপর কেন সম্রাটকে গ্রেফতার করা হল। তাকে তার সমস্ত অপরাধের চিহ্ন বা যাবতীয় আলামত সরানোর সুযোগ করে দেওয়া সহায়তা মত কাজ নয় কি?তাহলে লোক দেখানো এসব নাটক করে লাভ কি? জাতির কাছে আরো স্পষ্ট করূন।
    Total Reply(0) Reply
  • Younus Morol Putra Unikers ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    প্রভাবশালীরা ধরা ছোয়ার বাইরে চোলে গেলো শেষমেশ সম্রাট ই অপরাধি রয়েগেলো হে আল্লাহ বড় বড় অপরাধির বিচার কি হবেনা..?
    Total Reply(0) Reply
  • Lutfor Mazi ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    যারা তার কাছথেকে টাকা নিছে তাদের বিচার করা হোক।সবার আগে পোশাসন এর বিচার চাই।যুব লীগ চেরমেন ঠীক বলছে আপনারা কি আংগুল চুষছেন?
    Total Reply(0) Reply
  • Manik Manik ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৮ এএম says : 0
    আমার প্রশ্ন। ক্যাসিনো ব্যবসার অনুমোদন কে বা কোন সরকার দিয়েছে ও ক্যাসিনোর সরমজাম বিদেশ থেকে এনেছে তখন কি কাস্টম দেখে নাই। আমার দাবী ক্যাসিনোর জুয়ারি ব্যবসার উদপ্তি থেকে সম্রাটের গ্রেফতার পর্যন্ত সবাইকে শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা।
    Total Reply(0) Reply
  • র্ব্যত জীবন ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    বৌয়াল মাছ গুলুকেও দরতে হবে৷ অবশ্যই দরতে হবে৷
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য বলবো ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    কি বলল সেটা সাধারন মানুষ কেন জানতে পারবে না সাধারণ মানুষ জানতে চাই এর সাথে কারা জড়িত
    Total Reply(0) Reply
  • MD Alamgir Khan ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:০৯ এএম says : 0
    জুন জুলাই বাজেট ঘোষণা হবে টাকা নাই বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকার কিভাবে আগাবে আপনারা বলেন আমরা কি করছি দেশের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আকর্ষণ করছি সবাইকে বিচারের এনে সাজা দেন
    Total Reply(0) Reply
  • Mukhlesur Rahman ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    ক্যাসিনোর শুদ্ধি অভিযানে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে পড়েছে। মিড নাইট সরকারের অনেক ক্ষমতাধর প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি এবং রাঘব বোয়ালরা ক্যাসিনো, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও ঘুষ দুর্নীতির মত বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে সরাসরি জড়িত। প্রশাসনসহ ক্যাসিনোর পৃষ্ঠ পোষক ও ক্ষমতাধর প্রভাবশালীদের বাঁচাতে সম্রাটের দেয়া অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছে। তাই চলমান ক্যাসিনো অভিযানে ইতিমধ্যেই ভোট ...সরকারের মধ্যে বিভিন্ন তাল বাহানা, লুকোচুরি, অস্বস্তি, ইতস্তত ও আমতা আমতা ভাব চলে এসেছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ