Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক কমিশন গঠন সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়

ঋণ পুনঃতফসিলের সার্কুলার রিটের শুনানি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা আনয়নে কমিশন গঠন করা হবে কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। কারণ এটি সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ বিষয়ে দুদকের কোনো মতামত দেয়া সমীচীন হবে না-মর্মে মন্তব্য করেছেন সংস্থার আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। এর আগে সংস্থাটি কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছিল। তবে ওই মতামত প্রদানকারী আইনজীবী এম.এস. হাসান আজিমকে প্রত্যাহার করে তার স্থলে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খানকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করে খেলাপিদের ঋণ ১০ বছরের জন্য পুন:তফসিলের সুবিধা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে গতকাল বুধবার দুদকের আইনজীবী এ বক্তব্য দেন। বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চে এ শুনানি চলছে। গতকাল দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান নতুন করে একপি সম্পূরক আবেদন দেন। তাতে তিনি পূর্বতন আইনজীবীর (ব্যারিস্টার এম.এস. আজিম) দাখিলকৃত লিখিত বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং সেটি প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, ওটা দুদকের বক্তব্য নয়। সেটিতে কিছু মিসটেক রয়েছে। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকও একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠানই নিজস্ব আইন এবং বিধি-বিধান দ্বারা পরিচালিত হয়। স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আরেকটি কমিশন গঠন করা হবে কি না এটি দুদকের পক্ষে বলা সমীচীন হবে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধে কোনো কমিশন গঠন হবে কি-না এটি সরকারের নীতি-নির্ধারনী বিষয়। এ বিষয়ে আদালতেরও হস্তক্ষেপ করা সঠিক হবে না। খুরশিদ আলম খান বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপিদের ঋণ ১০ বছরের জন্য পুন:তফসিলীকরণের যে সার্কুলার বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে এটির সঙ্গেও দুদকের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এ বিষয়ে দুদকের কোনো বক্তব্য নেই।

এদিকে গতকাল রিটকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ একটি সম্পূরক আবেদন দেন। তাতে তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ দুর্নীতি দমন কমিশন কিছুই করতে পারছে না। কারণ অর্থ পাচাররোধে সংস্থাটির আইনগত ক্ষমতা সীমিত করে ফেলা হয়েছে। দুদকের পক্ষে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই। এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে আলাদা কমিশন গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে অ্যাডভোকেট শামীম খালেদ, অ্যাডভোকেট মুনীরুজ্জামান, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’র পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত সোমবার দুদকের পক্ষে ব্যারিস্টার এম.এস. আজিম এই মর্মে লিখিত অভিমত দেন যে, কমিশন অ্যাক্টের ধারা-৩ অনুযায়ী ব্যাংকিং ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করা হলে সেটি ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি খাতে যে মৌলিক সংকট রয়েছে তা চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি ব্যাংক ও অর্থনীতি খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তার এ বক্তব্যের পরদিন মঙ্গলবার দুদক এম.এস. আজিমকে প্রত্যাহার করে নেয়। তার পরিবর্তে খুরশিদ আলম খানকে আইনজীবী নিয়োগ দেয়। তিনি কমিশন গঠন প্রশ্নে ইতিপূর্বে দেয়া দুদকের মতামত প্রত্যাহার করে নেন। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-এই মর্মে রুলনিশি জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে রুলে ২ শতাংশ সুদ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত ১৬ মে’র প্রজ্ঞাপন কেন বাতিল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই এ রুল জারি করা হয়।

গত ১৩ অক্টোবর থেকে রুলের চূড়ান্ত শুনানি চলছে। এতে দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে লিখিত বক্তব্য দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ২৪ জুন বাংলাদেশ সিলগালা করে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। রিটকারীদের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্তু স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বারকোর্ট ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ান। তবে যারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুবিধা নেবেন তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না। এছাড়া বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালতে রুল শুনানি করতে বলেন। সে অনুসারে রুলের চূড়ান্ত শুনানি চলছে। এ অবস্থায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে আদালতের আদেশের সময়সীমা কয়েকবার বাড়ানো হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ