পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সামরিক ও বেসামরিক বিমান চলাচলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরাপদ উড্ডয়নের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মনে রাখবেন, পেশাগত দক্ষতা ও সততার কোনো বিকল্প নেই। আর দেশের মান-মর্যাদাও এর সঙ্গে জড়িত।
গতকাল বুধবার ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সুরক্ষা সেমিনার-২০১৯ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর একটি হোটেলে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃৃপক্ষ।
এ সময় বিমান বাহিনী ও বিমানে ভ্রমণে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিমান ভ্রমণকে আরও সহজতর করবে। পৃথিবীর আরও অনেক দেশের সঙ্গে নতুন নতুন রুট সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। সেই সঙ্গে আমাদের পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটবে বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, বিমান ভ্রমণ নিরাপদ, আরামদায়ক ও সহজতর করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ জন্য আমরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল স্থাপন করছি। এর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটা বাস্তবায়িত হলে এখন আমরা যে পরিমাণ যাত্রীসেবা দিতে পারি, আগামীতে এর আড়াই গুণ বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১২ মিলিয়নের বেশি যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হবে। আমরা কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই। এ ছাড়া বাগেরহাটে আমাদের আরও একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করারও লক্ষ্য আছে। ইতোমধ্যে বিমানবাহিনীতে স্টেট অব আর্থ-থ্রিডি হেলিকপ্টার সিসুলেট স্থাপন করা হয়েছে, যা থেকে আমাদের পাইলটরা রিয়েল টাইম ফ্লাইংয়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, গত পৌনে ১১ বছরে বিমানবহরে আমরা বোয়িং কম্পানির চারটি অত্যাধুনিক ড্রিম লাইনারসহ মোট ১০টি বিমান সংযুক্ত করেছি। আরও দু’টি ক্রয় করার প্রস্তুতি নিয়েছি। কারণ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আমরা বিশ্বের সঙ্গে আকাশপথের যোগাযোগ স্থাপন করতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করি, নিউইয়র্ক, টরেন্টো, সিডনির মতো দূরবর্তী গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারব। এ ব্যাপারে আমরা আগ্রহী। এ লক্ষ্যে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃৃপক্ষকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নতকরণের কাজ এগিয়ে চলছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃৃপক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করে নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন, অবতরণ নিশ্চিত করে যাচ্ছে। এতে আমাদের বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উন্নত যুদ্ধবিমান, র্যাডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমানকে আধুনিকীকরণের জন্য নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছি। নতুন র্যাডার স্থাপন থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি আমরা জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারো স্পেস বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস করেছি। আমরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করছি, কারণ বিশ্বমানের এভিয়েশন শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে চাই। এটা হবে লালমনিরহাটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার স্থাপন করেছি। নিকট ভবিষ্যতে এ সেন্টারে যুদ্ধবিমানসহ ব্যবহৃত বিমানও মেরামত করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা রাখি।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের পাশের দেশ যেমন- নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ আরও সহজতর করতে চাই। ওই দেশগুলোও যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে এ জন্য সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি, যা আন্তর্জাতিক মানেরই একটি বিমানবন্দরে উন্নীত হবে।
আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে সমাপনী অধিবেশনে উপস্থিত থেকে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত। সেমিনারে উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, স্বাগতিক বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন, মালয়েশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, মিসর, ওমান, মরক্কো, নাইজেরিয়া এবং জিম্বাবুয়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল অর্গানাইজেশনের দু’জন প্রতিনিধিগণ সেমিনারে অংশ নেন। তা ছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, এমআইএসটি, বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন, পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লি., ফ্লাইং ক্লাব, মেঘনা এভিয়েশনসহ বিভিন্ন বেসামরিক বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরাও এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করে। অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহাবুব আলী, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে আজ আজারবাইজান যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮তম জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ চারদিনের সরকারি সফরে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ১শ’ ২০টি উন্নয়নশীল দেশের ফোরাম ন্যামের দুই দিনের সম্মেলনটি আগামী ২৫ ও ২৬ অক্টোবর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিবেন। সফর সূচি অনুযায়ী আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ বিমান বাকুর উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি বাকু হায়দার আলিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজই স্থানীয় সময় রাত ৮ টা ৫৫ মিনিটে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানানোর পর মোটর শোভাযাত্রা সহকারে তাকে হিলটন বাকু হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। আজারবাইজান সফরকালে তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। শেখ হাসিনা আগামীকাল বাকু কংগ্রেস সেন্টারে ১৮ তম ন্যাম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। অনুষ্ঠান স্থলে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকার ন্যাম নেতৃবৃন্দদের অভ্যর্থনা জানাবেন।
অন্যান্য ন্যাম নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাকু কংগ্রেস সেন্টারের প্ল্যানারী হলে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের লাঞ্চন হলে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রতিনিধিদলের প্রধানদের জন্য দেয়া ওয়ার্কিং লাঞ্চন-এ যোগ নেবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হেয়দার আলিয়েভ সেন্টারে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, প্রতিনিধিদলের প্রধানদের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চন ও সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। তিনি হিলটন বাকুতে একই সঙ্গে আজারবাইজানের দূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেয়া নৈজভোজে অংশ নিবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
আজারবাইজানে চারদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী রোববার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় বাকু হেইদার আলিয়েব আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। বিমানটি ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা ৪৫মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। ন্যাম বিশ্বের ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি ফোরাম, যা বড় কোনো পাওয়ার বøকের সঙ্গে বা বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত নয়। জাতিসংঘের পর এটি বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর বৃহত্তম গ্রুপিং।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ও সাবেক যুগোসøাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসিপ ব্রোজ টিটোর উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে বানডং সম্মেলনে সম্মত নীতিমালা প্রণয়নের পর ১৯৬১ সালে যুগোসøাভিয়া বেলগ্রেডে ন্যামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভেনেজুয়েলার মারগারিটা দ্বীপে ২০১৬ সালে ১৭তম ন্যাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো হলেন চলতি ন্যাম সম্মেলনের চেয়ারপারসন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।