Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মন্ত্রিত্বের উচ্চাকাক্সক্ষা ঘনিষ্ঠদের প্ররোচনায় এ পরিণতি

এমপি বুবলীর জালিয়াতি

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মন্ত্রী হবার উচ্চাকাক্সক্ষা থেকেই বিএ পাস করার আকাক্সক্ষা জাগরিত হয় এমপি তামান্না নুসরাত বুবলীর। এক্ষেত্রে তাকে প্ররোচনা দেয় তারই কিছু অতি উৎসাহী ঘনিষ্ঠ লোকজন। 

তারা প্ররোচনা দেয় যে, গাজীপুরের এমপি মেহের আফরোজ চুমকি গত পিরিয়ডে যেভাবে মন্ত্রী হয়েছিলেন আপনিও সেভাবে মন্ত্রী হতে পারবেন। স্বামী লোকমান হোসেনের ইমেজের উপর ভিত্তি করে যেহেতু এমপি হতে পেরেছেন, মন্ত্রী হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। নরসিংদী জেলা শহরে বর্তমানে কোন মন্ত্রী নেই। মন্ত্রী হতে হলে দরকার একটি শিক্ষা সনদের। আপনাকে গ্রাজুয়েশন অর্জন করতে হবে। শিক্ষা সনদে যোগ্য হলে আপনি মন্ত্রীত্ব পেয়ে যেতে পারেন। আপনি যখন এইচএসসি পাশ করেছেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রক্সি পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে অতি সহজেই ডিগ্রি পাস করা যায়। ঘনিষ্ঠ লোকদের এই প্ররোচনায়ই এমপি বুবলি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বিএ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ লাভ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার জানিয়েছেন, বুবলি এমপি হতে পারবেন, এটা ছিল তার একান্ত ঘনিষ্ঠজনদের কাছে স্বপ্নের মতো। বুবলিকে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে তার এপিএস পরিচয়দানকারী পিএ ফারুক আহমেদ। প্রতিটি পরীক্ষার দিন এই কথিত এপিএস ফারুক আহমেদ ভাড়াটে প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে নিয়ে নরসিংদী কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতেন ভারতে ছাত্রীকে হলে ঢুকিয়ে সিটে বসিয়ে তিনি বাইরে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত পাহারা দিতেন।
এভাবেই বুবলির পরীক্ষার সিটে বসে ৮জন ভাড়াটে প্রক্সি পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে সক্ষম হয়। এসব ঘটনা জেনেও নরসিংদী সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর হাবিবুর রহমান আকন্দ টু শব্দটি করেননি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়েও তিনি একদিন পরীক্ষার হলে যাননি। পরীক্ষার হলে না যাওয়া, কলেজ ক্যাম্পাসে বুবলির কথিত এপিএস ফারুক আহমেদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে অবস্থান করার সুযোগ দেয়া,পরীক্ষার হলের ৮ দিনের সিসি ফুটেজ গোপন করে রাখা, পরীক্ষার্থীকে ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র না দিয়ে থানার জিডির কপি এলাও করা। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের অশুভ প্রভাব। যার প্রভাবে প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান আকন্দ এমপি বুবলিকে প্রক্সি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এমপি বুবলির স্বামী নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন নিহত হবার পর অনেকের ধারণা ছিল দলের পক্ষ থেকে মেয়র লোকমানের স্ত্রী বুবলিকেই মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু বুবলির দেবর মেয়র লোকমানের ছোটভাই কামরুজ্জামান কামরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। এসব নিয়ে পরিবারের ভিতরে কিছু দ্ব›েদ্বর আভাসও পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বুবলি জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই সুবাদেই জেলা আওয়ামী লীগ বুবলিকে নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হয় দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু তিনি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন। এরপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তিনি সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বহু তদবির করে নরসিংদী গাজীপুর সংরক্ষিত মহিলা আসনে এমপি হিসেবে মনোনয়ন লাভ ও নির্বাচিত হন। এর পরই এমপি বুবলীর মধ্যে মন্ত্রী হবার উচ্চাকাক্সক্ষা জন্মে। তার এই অতি উচ্চাকাক্সক্ষাই তাকে নীতি-নৈতিকতার বাইরে নিয়ে যায়। এমপি হয়েও নিজের মর্যাদা বুঝতে পারেননি এমপি বুবলি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ