পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিটি ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া থাকে। ঘটনার পেছনে থাকে আরো ঘটনা। ইচ্ছাকৃত কোনো লক্ষ্য সামনে নিয়ে কেউ কেউ বিশৃঙ্খলার প্লট সাজায়। সবকিছু যার কাঁধে থাকে, সব দায় যার নিতে হয়, সব লোড যাকে বহন করতে হয়, তার দায়িত্ব ও চিন্তাও বেশি। আবেগ, উষ্মা সবারই থাকে। কিন্তু সবসময় মন যা চায় বা পরিস্থিতি যা বলে, সব করে ফেলা যায় না। কেন যায় না, তা সবার সামনে বলাও যায় না। বিধিবিধান ও বাস্তবতা মানুষকে তার দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে আবার কখনো দায়িত্ব পালন সঠিকভাবে করতে না পারার যন্ত্রণায়ও ভোগায়। নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কটূক্তি ইসলামে মারাত্মক ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শরীয়তে এ বিষয়ে কোনো মার্জনা নেই। আমরা লক্ষ করছি, কয়েক বছর ধরে বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। কেউ খোদাদ্রোহী নাস্তিক পরিচয়ে, কেউ বিধর্মী পরিচয়ে নিজ আইডি থেকে এমন করছেন। কোনো সময় আইডি হ্যাকড হয়ে অন্য কোনো লোক এ নিকৃষ্ট কাজটি করছে বলে দেখা যাচ্ছে। এর আইনগত উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার বাংলাদেশের ৯২ ভাগ মুসলমান দাবি করে আসছেন। এ দাবি পূরণ এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইসিটি মামলায় এ বিষয়টি যতটুকু কভার করে মহানবী (সা.)-এর প্রতি কটূক্তি তার চেয়েও বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রকৃত মুসলিম মাত্রই এমন ঘটনায় ধর্মীয়ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সে তার আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করে। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। আইনের কাছে এর প্রতিকার চায়। এ বিষয়ে রাষ্ট্র বা সরকারের করণীয় খুব স্পষ্ট ও কার্যকর থাকার বিকল্প নেই।
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়ে চিন্তা ও কার্যক্রম করার দায়িত্ব ও অধিকার আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনসমূহের। তারা উসকানির ধরন ও এর কার্যকর প্রতিকার, সরকার প্রশাসন পুলিশ ইত্যাদির সাথে সমন্বয় করে বিষয়গুলোকে সমাধান করবেন। যেখানে একটি টেলিফোন, একটি সাক্ষাৎ কিংবা একটি সংলাপ যথেষ্ট; সেখানে কোনোরূপ পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত ছাড়া বড় গণআন্দোলন সংগঠিত করা অনেক সময় প্রকৃত ও বাস্তব জাতীয় জাগরণ কিংবা ব্যাপক গণআন্দোলনের মূল্যকে নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় একটি বাস্তব অন্যায়কে মন্দ উদ্দেশ্যে চক্রান্তকারীরা ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। ঈমানি আবেগ বা জাতীয় চেতনাসমৃদ্ধ জনগণকে তারা ময়দানে আনে ঠিকই, কিন্তু গোপন অভিসন্ধি থেকে তারা একটি যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। নিরীহ মানুষ জানেও না অথচ পুলিশের ওপর কেউ হামলা করে দেয়। অপরদিকে পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব পালনে রীতি মেনে চললেও চক্রান্তকারীদের অন্তর্ঘাতে পুলিশ পরিচয়ের কেউ নিরীহ মানুষকে হতাহত করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়া খুবই জরুরি। কেবল আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ মানুষ সচেতন হলেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে না। রাষ্ট্রবিরোধী দুষ্ট শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের দায়িত্বই প্রধান।
এমন ইস্যুতে দায়িত্বশীল জাতীয় পর্যায়ের অভিভাবক-আলেম, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, অন্যান্য সমমনা ইসলামী সংগঠন এক হয়ে বসে কিংবা নিজ নিজ বলয়ে পরামর্শ করে প্রতিটি ইস্যু এড্রেস করার পন্থা নির্ধারণ করে নিলে অনেক কাজ সহজ ও সফল হতে পারে। সারাদেশের মানুষ সংগঠন হিসেবে একীভূত না হলেও ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতিতে তারা একটি বৃহত্তর ঐক্যের অংশ। দু-চারটি ব্যানারে তারা অন্তত ৬০% এক হয়ে যায়। বাকি ২০% আঞ্চলিক মুরব্বি আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম-খতিব পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ। এ হিসেবে ৮০% সচেতন মুসলমান বাংলাদেশে কারা নিয়ন্ত্রণ বা নির্দেশনা প্রদান করেন সেটি যেমন তাদের নিজেদেরও জানতে হবে তেমনি সরকারকেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। যে কেউ একটি বার্নিং ইস্যুকে তৌহিদী জনতা নাম দিয়ে কৌশলগত ভুল পন্থায় প্রবাহিত করে দিতে পারে, এমন সুযোগ দেয়া যাবে না। এ দায়িত্বটির জিম্মাদার আলেম-ওলামাগণের। মিডিয়ায় কারা কথা বলবেন, সরকার পর্যায়ে কারা নিজেদের ধর্মীয় দাবি তুলে ধরবেন, নিন্দা ও প্রতিবাদ কোন ভাষায় করা হবে, নাগরিক অধিকার হিসেবে আন্দোলন কোন মাত্রায় এগিয়ে নেয়া হবে, দেশ ও জাতির আরো বড় কোনো সঙ্কট দেখা দিলে উল্লেখযোগ্য সবাই চিন্তা-ভাবনা করে কী ধরনের কতটুকু ভূমিকা নেয়া হবে এ সবই চিন্তা-ভাবনা ও বাস্তবায়নের বিষয়। বল্গাহীন যাত্রা ব্যর্থ হয়। নিয়ন্ত্রণহীন জনজোয়ারও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা ও প্রস্তুতি ছাড়া যেমন তেমন প্রতিক্রিয়া মানুষকে হতাশ করে দেয়। আন্দোলন হতে হবে আন্দোলনের মতো। সংগঠন হতে হবে সংগঠনের মতো। পরামর্শ ও সংলাপ অনেক কিছুকে সহজ করে দেয়।
এমন তো নয় যে, বাংলাদেশে এখন ঔপনিবেশিক শাসন চলছে। এমনও নয় যে, সরকারের সাথে ইসলামপন্থীদের মুখ দেখাদেখি নেই। প্রতিটি দলের, আন্দোলনের সংগঠনের সরকারের কাছে দাবি, পরামর্শ কিংবা সতর্ক বাণী পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে। দিনরাত নানা ইস্যুতে তাদের উচ্চপর্যায়েও ওঠাবসা চলছে। যোগাযোগ চলছে। তাহলে দ্বীনি স্বার্থ উদ্ধারে, ধর্মীয় বিষয়ে আইন তৈরিতে কেন আলাপ-আলোচনার সুযোগটি ব্যবহার করা হবে না, কেন ইসলামী ইস্যুতে নিজেরা দল, ব্যানার, নাম ইত্যাদির স্বতন্ত্র্য ধরে রাখার চেষ্টা বেশি বেশি করে মূল কাজটিকে ব্যর্থ করে দিতে হবে? ইসলামী ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারকে কেন বাধ্য করা হবে না? টেবিলের কাজগুলো কেন রাজপথে টেনে আনা হবে? ইস্যুগুলো ঠিক করে বড় আলেমরা কেন এসব নিয়ে সরকারের সাথে বোঝাপড়ায় বসছেন না?
একটি সাজানো প্রতিবাদ সভা হয়ে উঠতে পারে অজানা শত্রুদের অনুপ্রবেশের মহা সুযোগ। ঘটতে পারে নাটকীয় অন্তর্ঘাত। নিরীহ জনতা ধর্মীয় আবেগ নিয়ে এসে ইমানি দায়িত্ব পালনে যে মহৎ কাজটুকু করবে, এর পেছনে লুকিয়ে থেকে দেশি-বিদেশি অপশক্তি দেশকে অস্থির আর সমাবেশস্থলকে বধ্যভূমিতে পরিণত করতে যে পারে, তা ইতিহাসে তো আছেই, বর্তমান বাংলাদেশেও এর কিছু নজির দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা নিয়ে ভাববে, এটি তার নৈতিক অঙ্গীকার। সরকার তার স্থিতি ও সুবিধা নিয়ে ভাববে, এটিও তার অধিকার আর প্রচলিত রেওয়াজ। এর ফাঁকে পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার লোকের অভাব নেই। দেশি-বিদেশি, সংক্ষুব্ধ, হতাশ, স্বার্থান্বেষী, নানা ধরনের শক্তি ও ব্যক্তির অপকর্মের সুযোগ হতে পারে বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির অনিয়ন্ত্রিত বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে এ সময়ে প্রতিষ্ঠিত জনমান্য ও ইসলাম সম্পর্কে প্রাজ্ঞ শক্তিটিকে নিজেদের ইচ্ছা পরিকল্পনা পরামর্শ পরিমিতিবোধ ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জনগণকে পথ দেখাতে হবে। সরকারকেও ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে নসিহত করতে হবে। অন্যায় কাজে বাধাদান ও ন্যায়ের আদেশ চালিয়ে যেতে হবে। হুঁশের চেয়ে জোশ বেশি কাজে লাগালে আখেরে শত্রুরাই লাভবান হয়। নিজেদের কী হয় বা হয় না তা স্পষ্ট না হলেও যে মানুষগুলো জীবন দেয়, যারা চিরতরে আহত পঙ্গু অসুস্থ অভাবী হয়ে যায় তাদের আর ক্ষতিপূরণ হয় না। এ ক্ষেত্রে কথাগুলো ব্যক্তিগত চিন্তা বা বিবেচনা থেকে না দেখে সামগ্রিক ও দূরদর্শী বিবেচনা থেকে দেখলে সবার জন্য ভালো হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষকে যার তার হাতে কিংবা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে না এমন প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পেশাজীবী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ইত্যাদি নাগরিকদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে না দিয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্মীয় ইস্যুর দায়িত্বশীলগণ নিজেদের হাতে রাখতে হবে। সমন্বয় ও পরামর্শের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রের সাথে ইসলামপ্রিয় নাগরিকের সম্পর্ক রেখে দ্বীনি আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে। সরকারের সাথেও থাকতে হবে ধর্মীয় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নিঃস্বার্থ সংযোগ। যার নজির দুনিয়াবিমুখ নির্লোভ হকপন্থী আলেম-ওলামা-পীর-মাশায়েখগণ যুগে যুগে দেখিয়ে গেছেন। যারা সঙ্কীর্ণ পার্থিব স্বার্থ থেকে নিজেদের যোজন যোজন দূরে রেখেছিলেন। এমন দ্বীনি পরিবেশ তৈরি ও অগ্রসর করা প্রকৃত ধর্মীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব। তাদের দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা সম্পর্কে আরো বেশি সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।