Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড. মীজান টক অব দ্য কান্ট্রি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দেশের প্রসিদ্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। টিভি টকশোর বদৌলতে তার দলবাজি এবং দলদাসত্বের খবর মানুষ আগ থেকেই জানেন। সম্প্রতি তার এক অভিপ্রায় প্রকাশে ব্যাপক ভাবে আলোচনায় উঠে এসেছেন। বর্তমানে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, ‘আমাকে যদি যুবলীগের সভাপতি পদ দেয়া হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ ছেড়ে দেব’। তার এই বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চললেও বাস্তবতা হচ্ছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হালফিল চিত্র উঠে এসেছে তার বক্তব্যে। অধ্যাপক মীজানুর রহমান যেন দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

দেশের বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০টি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্য প্রায় দেড় গুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাঞ্চেলর হচ্ছেন মহামান্য প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্টের পরই ভিসির পদের অবস্থান। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল তথা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংয়ে এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও নেই। অথচ ভারত, পাকিস্তান, নেপালের বিশ্ববিদ্যালয় ওই তালিকায় রয়েছে।

‘যুবলীগের সভাপতি পদ পেলে ভিসি পদ ছেড়ে দেব’ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের এই বক্তব্য প্রকাশের পর নানা জনে নানান মন্তব্য বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ ঘরানার কিছু বুদ্ধিজীবী বিষয়টি হালকা করতে ড. মীজানের বক্তব্য হিন্দি শব্দ ‘বাত কা বাত’ বলে মন্তব্য করছেন। তবে ‘তার বক্তব্য ভুলভাবে মিডিয়ায় তুলে ধরা হয়েছে’ এমন প্রত্যাশা থেকে সরকার সমর্থিত টিভি মিডিয়া তাকে টকশোতে নিয়ে আসেন। সেখানেও তিনি নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এটিএন নিউজ নামে একটি চ্যানেলের টকশোতে গত শনিবার অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, এবং দুজন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত ও মাসুদ কামালকে নেয়া হয়। সেখানে উপস্থাপিকা সুকৌশলে ড. মীজানকে তার বক্তব্য ‘ভুলব্যাখ্যা’ করা হয়েছে বলানোর চেস্টা করেন। কিন্তু দলদাস ভিসি কিছুতেই নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তবে অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান স্পষ্ট বলেন, ভিসি হিসেবে ড. মীজানের একটি দলের সভাপতি পদ বসার লোভ প্রকাশ কার্যত অপরাধ। কারণ রাজনৈতিক বিশ্বাস যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিরপেক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা। তা না করে একজন ভিসি যখন প্রকাশে এমন বক্তব্য দেন তা অপরাধই বটে। অজয় দাস গুপ্ত বলেন, ওনার (ড. মীজান) ভিসি হিসেবে নিরপেক্ষ থাকার কথা। কিন্তু উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিরপেক্ষ না থেকে দলবাজি করেছেন তা স্পষ্ট। ওনি ভিসি পদকে কলঙ্কিত করেছেন। মাসুদ কামাল বলেন, এখন উচিত ভিসি পদ ছেড়ে দিয়ে ড. মীজানের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা। ভিসি সমাজের সন্মানিত পদ। দলবাজি করে ওই পদকে কলঙ্কিত করেছেন ড. মীজান। তিনি ভিসি পদ থেকে নিজে সরে না গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাঞ্চেলরের (প্রেসিডেন্ট) উচিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. মীজানকে সরিয়ে দেয়া।

ড. মীজানের যুগলীগের সভাপতি পদের লোভ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। ফেসবুক, বøগ, টুইটারে বক্তব্য, লাইন, পোস্ট দেয়া হচ্ছে নানান কথায়। অধিকাংশের বক্তব্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের বক্তব্য দেশের পাবলিব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিচ্ছবি। দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অভিন্ন চিত্র। যোগ্যতার বদলে দলবাজির যোগ্যতায় শিক্ষকদের ভিসি পদে বসানোয় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের অর্থে পরিচালিত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দলীয় ক্যাডারদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কার্যত ছাত্রলীগের ‘নাচের পতুল’ হিসেবে প্রশাসন চালাচ্ছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং এর এক হাজারের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠেনি। বিষয়টি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. খন্দকার মোশারররফ হোসেন বলেছেন, নৈমিক স্খলন কোন পর্যায়ে গেলে ভিসির পদ ছেড়ে যুবলীগের সভাপতি পদে বসতে চায় তা অনুমেয়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভিসি পদটি একটি সম্মানিত পদ। ভিসি পদের মর্যাদা রক্ষ করা যেমন ভিসিদের দায়িত্ব, শিক্ষকদের দায়িত্ব এবং সরকারের দায়িত্ব। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ কলামিস্ট আলী রীয়াজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য (ভিসি) ড. মীজানুর রহমানের বক্তব্য প্রসঙ্গে লিখেছেন, তিনি হচ্ছেন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উপাচার্য’, এরপরও বুঝতে অসুবিধা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা কোথায়, কেন ছাত্রাবাসে গণরুমের নাম দিয়ে নির্যাতন চলে, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একাধিপত্য, কেন তারা সব বিচারের ঊর্ধ্বে? এসব লোকজন কি কারণে শিক্ষকতার পেশায় আসেন বলতে পারেন? কেন উপাচার্য হন তা তো বুঝতে পারি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ