Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বর্ণদ্বীপ উন্নয়নে এগিয়ে পিছিয়ে সড়ক যোগাযাগে

জাকের উল্লাহ চকোরী. কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কক্সবাজারের স্বর্ণদ্বীপ মহেশখালীর প্রায় ৫০ হাজার একর জমি নিয়ে উন্নয়নের মহাকান্ড শুরু হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে এযাবৎকালের সবচয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে এগুলো। যা অতীতের কোন সরকারের আমলে তা গৃহীত হয়নি।
তবে এ দ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। দ্বীপের ৩টি প্রধান সড়ক দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় ৫০ শতাংশই খানাখন্দকে ভরপুর হয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলো হচ্ছে জনতাবাজার-মাতারবাড়ী সড়ক। জনতাবাজার ভায়া শাপলাপুর গোরকঘাটা সড়ক। জনতা বাজার ভায়া কালামার ছড়া গোরকঘাটা সড়ক। এ ৩টি সড়কের মধ্যে শাপলাপুর গোরকঘাটা সড়কটি এলজিইডি’র তত্ববধানে। বাকি ২টি সড়ক বিভাগের নিয়ন্ত্রাণাধীন।
বর্তমানে মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে (সওজ) অংশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে ৫৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি প্যাকেজের অধীনে নির্মিত হচ্ছে ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার সড়ক, ৬৮০ মিটার পিসি গার্ডার সেতু এবং ৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ-কাম সড়ক নির্মাণ ও ¯øুইচ গেট নির্মাণ। ধলঘাটা দ্বীপের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য মহেশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কোহেলিয়া নদীতে নির্মিত হচ্ছে ৬শ মিটার দৈর্ঘ সেতু। এসব কাজ দ্রুত সম্পন্ন হলে দ্বীপ মহেশখালীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে যোগাযোগ ক্ষেত্রে।
প্রকল্প পরিচালক শফিক রায়হান শোভন ইনকিলাবকে জানান, ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০০ মিটার দৈর্ঘ ও ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ কোহেলিয়া নদীতে সেতু নির্মার্ণের পাইলিংয়ের কাজ বর্তমানে চলছে। এ ব্রিজে পিলার থাকবে ১২টি ও ষ্পেন থাকবে ১১টি। ৫ দশমিক ৩ কিলোমিটার পাকা সড়কটির প্রস্থ হবে ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার। ৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ-কাম সড়কের প্রস্থ হবে ৭ দশমিক ৩ কিলোমিটার, ওই বাঁধের উচ্চতা হবে ৬ মিটার। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হকে একটি বড় ¯øুুইচ গেট। এসব কাজের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে, হাল্লা মীর আক্তার জয়েন্টভেঞ্চার। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সরকারের গত ২৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে রাজঘাট হতে মুহুরীঘোনা পর্যন্ত ৭.৩৫ কিলোমিটার বাধ-কাম সড়ক নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
আজ থেকে ২৪০ বছর আগে ১৭৭৯ সালে মহেশের নামকরণে মহেশখালী দ্বীপটি আবিষ্কিৃত হয়। তখন দ্বীপের আয়াতন ছিল ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার। কালের বিবর্তনে সোনাদিয়া, ধলঘাট ও মাতারবাড়ি উপদ্বীপ মহেশখালীর সাথে সংযুক্তি হলে, দ্বীপের আয়াতন বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ বর্গ কিলোমিটারে। ২২১ বছর ধরে মহেশখালী দ্বীপটি মূল ভ‚খÐের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল। পরে ২০০০ সালের ১৭ জুন চকরিয়ার বদরখালী ও মহেশখালী জনতা বাজারের মধ্যাংশে মহেশখালী চ্যানেলের উপর একটি সেতু নির্মিত হলে মহেশখালীর সাথে সারাদেশের সড়ক নেটওয়ার্ক চালু হয়। এখন মহেশখালীকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ আর বলা যাবে না।
মহেশখালী দ্বীপের আয়াতন দিন-দিন বাড়ছে। ১৭৭৯ সালে মহেশখালী চ্যানেলের গড় গভীরতা ছিল ১৫ থেকে ৩৩ মিটার। বর্তমানে এর গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে, মাত্র ৫ থেকে ১০ মিটার। এর কারণ হিসেবে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদী থেকে বর্ষার সময় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিপুল পরিমাণ পলিমাটি এসে মহেশখালী চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে কক্সবাজার সদর ও চকরিয়া উপজেলার মহেশখালী চ্যানেল লাগোয়া অংশটুকু মহেশখালীর সাথে একাকার হয়ে যাবে। এ অভিমত গবেষকদের।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বর্ণদ্বীপ মহেশখালীকে মেক্সিকোর মতো বাণিজ্য নগরীতে পরিণত করতে ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রকল্প সমুহ হচ্ছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল ধলঘাট। ধলঘাট ইউনিয়নে ৬০৪.০৬ একর জমিতে অর্থনীতিক অঞ্চল। মহেশখালী মাতারবাড়ি মৌজায় ১৪১৪.০৫ একর জমিতে ১২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। মাতারবাড়ির অপর অংশে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ৭০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ।
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ও কালামার ছড়া ইউনিয়নের ৬টি মৌজায় ৫৫৮৯.৬০৩৫ একর জমিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কতৃক ৮৩২০ মেগাওয়াট এলএনজিও কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন প্রকল্প। মহেশখালী উপজেলায় এক কিলোমিটার ও পেকুয়া উপজেলায় ১৪ কিলোমিটারসহ মোট ৪৫ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য ৮৫.৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ পূর্বক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া মহেশখালী উপজেলায় ৬০০মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি হেফাজত স্থানান্তর মিটারিং ষ্টেশন (সিটিএমসি) স্থাপনের লক্ষ্যে বর্তমান ভ‚মি উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। মহেশখালী উপজেলার ঘটিভাঙ্গা মৌজায় চরভরাট ৫০০ একর জমিতে ভ‚মিভিত্তিক (এলএনজি) স্টেশন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে বাংলাদেশকে বিদেশে আর ভিক্ষা চাইতে হবে না। সোনাদিয়া দ্বীপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক সমদ্র বন্দর উপযোগী স্থান। যা হংকং ও সিঙ্গাপুরের চেয়ে বড়। আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার জাহাজ সোনাদিয়া দ্বীপে সরাসরি ভিড়তে পারবে। বর্তমানে যা চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারে না। তাই মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দরের একমাত্র নিরাপদ স্থান। সরকার দোহাজারী ঘুমধুম রেল লাইন নির্মাণের পাশাপাশি মাতারবাড়ি পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের জরিপ চলানোর কাজ শুরু করেছে। এলাকার জনগণ মেগা প্রকল্পের কাজগুলো সুষ্ঠু মনিটরিংয়ের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম গঠন করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



 

Show all comments

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ