Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক রাতভর অবরোধ, আটক ৩

রাবি শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাত

রাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঠের সামনে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ফিরোজ নামের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার রাত পৌনে ৮টায় এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে রাত ৯টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত একটানা ৭ ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় রাজশাহী নগরী থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নগরীর তালাইমারী এলাকার জাহিদের ছেলে রুবেল হোসেন, শিরোইল এলাকার ছবির হোসেনের ছেলে রিফাত হোসেন। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। অন্যদিকে ভুক্তভোগী অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফিরোজ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার লক্ষ্যে প্রফেসর ড. লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে র‌্যাব ও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত ৯ টায় নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এতে রাস্তার দু’পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। এর পরপরই সেখানে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও অন্য সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে টানা হেচড়ার ঘটনা ঘটে। সেখানে সহকারী প্রক্টর হুমায়ন কবীর লাঞ্ছিত হন শিক্ষার্থীদের হাতে। পরে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কিশোরকে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেন ভুক্তভোগী সহকারী প্রক্টর। এরপর সড়কে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। প্রক্টর ও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। এবং আটকৃতকে ফেরত না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে এবং সারারাত মহাসড়ক অবরোধের হুশিয়ারি দেন তারা। পরে আটককৃত কিশোরকে ডিবি পুলিশ ফেরত দেয়। পরে প্রক্টর ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বার বার অনুরোধের পর শনিবার ভোর ৪ টার দিকে অবরোধ কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে প্রক্টর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত আটটার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান মাঠের তালগাছের নিচে ফিরোজ ও সঙ্গে থাকা একটি মেয়ের সঙ্গে বাকবিতন্ডা করে কয়েকজন যুবক। একপর্যায়ে ছুরি দেখিয়ে মানিব্যাগ, টাকাসহ সবকিছু দিতে বলে। এতে অস্বীকৃতি জানালে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। পরে সঙ্গে থাকা মেয়েটি চিৎকার শুরে করে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত মোটর সাইকেলে মাদার বখশ হলের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় ফিরোজকে উদ্ধার করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রামেকে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে থাকা মেয়েটি ফিরোজের স্ত্রী। তার বাড়ি রংপুর। একই কলেজে পড়াশোনা করেছেন।
শনিবারও উত্তাল ক্যাম্পাস
ছুরিকাঘাতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে শনিবার দুপুরে রংপুরের বদরগঞ্জ থানা, শাখা ছাত্রলীগ, সাধারণ শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথক ব্যানারে মানববন্ধন করেছে। পরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর সঞ্চালনায় শাখা সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ক্যাম্পাসে একের পর শিক্ষার্থী ছিনতাই চক্রের কবলে পড়ে আহত হলেও অপরাধীদের সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। যথাযথ বিচারও হয় না। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পুরো ক্যাম্পাস সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানান তারা।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সহ-সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, হাবিবুল্লাহ নিক্সন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদ প্রমুখ।
শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহসড়ক অবরোধ করে ‘আমার ভাই রক্ত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বহিরাগত মুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’, ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙ্গে দাও, গুড়িয়ে দাও’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা, এই রাবিতে হবে না’ এমন স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী জখমের পর থেকে কয়েক স্তরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে এবং টহল অব্যাহত রেখেছে। শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ