পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) শান্ত পরিবেশ অশান্ত করতে মারিয়া হয়ে উঠেছে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলো। প্রতিবেশী দেশ থেকে অর্থ, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের জোগান ও আশ্রয় পেয়ে কার্যত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের জিম্মি করে গুম, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর হাতে জিম্মি থাকতে চায় না। তাদের কাছে এমন সব অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র রয়েছে, যা দেশের কোনো কোনো বাহিনীর কাছেও নেই। তাদের নির্মূলে পাহাড়ে সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন ও সীমান্ত সিল করে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধের দাবি করেছেন সমতল ও পাহাড়ের বাসিন্দারা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ বাসিন্দাদের অভিযোগ, হঠাৎ করে পার্বত্যাঞ্চলের রক্তপাত বেড়েছে। এ রক্তপাত এতই নৃশংস হচ্ছে যে, কাউকে যদি হত্যা করা হয় তার হয়ে কেউ থানায় যেতে পারছেন না, পরবর্তী টার্গেট হওয়ার ভয়ে। সাক্ষ্য দিতেও যাচ্ছেন না অস্ত্রের ভয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় পার্বত্যাঞ্চল থেকে প্রায় ২৪০ অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব সেনাক্যাম্পের অধিকাংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে দখল হয়ে গেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে পাহাড় দখল করে তৈরি করা হচ্ছে ধর্মীয় উপাসনালয়। ক্যাম্প দখল করে কী ধরনের কার্যক্রম হচ্ছে এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন তারা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পার্বত্যাঞ্চলের সীমান্তে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে ৪৪ কিলোমিটার পথ অরক্ষিত রয়েছে। বিশাল সীমান্ত এলাকা পাহারায় নেই কোনো ‘পর্যবেক্ষণ পোস্ট’। এমনকি টহল দেয়ার জন্য পায়ে হাঁটা পথও নেই। দুর্গম জঙ্গল ও পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত টহল দিতে পারে না। তাই ওই সীমান্ত এলাকা থাকছে অরক্ষিত। কিছু সংখ্যক বর্ডার অভজারভেশন পোস্ট (বিওপি) থাকলেও সেগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ফলে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবাধে অস্ত্র ও মাদক ঢুকছে পার্বত্যাঞ্চলে। শুধু তাই নয়, কোন অভিযান চালানো হলে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সহজের সীমান্তের ওপারে ভারতে চলে যায়। আবার অভিযান শীতল হলে ফিরে এসে খুন-চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
গত বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটিতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যারা চাঁদাবাজি করছেন, খুন করছেন, রক্তপাত করছেন তাদের জন্য ভয়ঙ্কর দিন অপেক্ষা করছে। কোনোভাবেই তারা রেহাই পাবেন না। চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। যারা করাচ্ছেন তারাও বিচারের মুখোমুখি হবেন। যে কোনো মূল্যে পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনাই মূল চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, দেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে কঠোর হাতে দমন করা হয়েছে। জলদস্যু ও চরমপন্থীরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামেও কেউ নিজেদের কৃতকর্মের ভুল স্বীকার করে যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চায়, আমরা স্বাগত জানাব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাঙ্গামাটির তিনজন কাঠ ব্যবসায়ী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ এনে ‘পাহাড়ে আবার আগুন জ্বলবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন। ওই ঘোষণার মাত্র দুই দিন পর ৫ ডিসেম্বর থেকে পাহাড়ে বেড়ে যায় হত্যাকান্ড। এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর জেএসএসের সভাপতি সন্তু লারমার সেই ঘোষণার পর পাহাড়ে গত ২২ মাসে ৯০ জন পাহাড়ি-বাঙালি প্রাণ হারিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলার সভাপিত আসাদ উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনার পূর্বশর্ত সেনাক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা। প্রায় ২৪০টি সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। ইউপিডিএফ ও জেএসএসসহ পাহাড়ে যে চারটি উপজাতীয় সংগঠন রয়েছে এদের মূল কাজ অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারের নামে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা। ভারত ও মিয়ানমার থেকে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অর্থ, অবৈধ অস্ত্র ও আশ্রয় পেয়ে এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাহাড়ের ৯৫ ভাগ মানুষ শান্তির পক্ষে। স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে হলে সেনাবাহিনীকে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্রধারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে অভিযানের খবর পেয়ে সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ জন্য সীমান্ত এলাকা সিল করে অভিযান চালানো হলে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। একই সাথে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাতে অবৈধ অত্যাধুনিক অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে পৌঁছাতে না পারে, সে বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় গ্রুপগুলোর হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ বাড়ছে। গত ২২ মাসে সশস্ত্র উপজাতীয় গ্রুপগুলোর হাতে খুন হয়েছে ৯০ জন সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালি। তিন পার্বত্য জেলা থেকে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার অধিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদার বেশির ভাগ টাকা অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। জেএসএস ও ইউপিডিএফসহ পার্বত্য চট্টগ্রামভিত্তিক বিভিন্ন আঞ্চলিক দল ও গোষ্ঠীর ক্যাডারদের হাতে রকেট লঞ্চার, ১৪-এমএম, এম-১৬, এসকে-৩২, সেনেভা-৮১, এম-৪ ও এম-১-এর মতো ভয়াবহ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। টার্গেট কিলিং বেড়ে যাওয়ায় পার্বত্য এলাকায় সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে এখন চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ওই সূত্র জানায়, প্রশিক্ষিত সশস্ত্র উপজাতিয় সংগঠনের ক্যাডারের হাতে ভারত থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এদের কাছে রয়েছে সামরিক পোশাকের আদলে কমব্যাট পোশাক ও ওয়াকিটকিসহ নানা সরঞ্জাম। চার হাজারের অধিক অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ক্যাডারদের কাছে। গত ১৮ মার্চ সোমবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে ৮ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছে। এর ১৪ ঘণ্টার মধ্যেই একই জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তংচঙ্গ্যাকে সকাল ৯টায় আলিখিয়ংয়ের তিনকোনিয়া পাড়া এলাকায় গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিন পার্বত্য জেলায় কৃষি থেকে শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরি, যানবাহন, ঠিকাদারি সব সেক্টর থেকেই আঞ্চলিক দলগুলো নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে থাকে। তাদের এ চাঁদাবাজি পার্বত্য এলাকায় এখন ওপেন সিক্রেট।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই তিন জেলায় সশস্ত্র ক্যাডার ও সেমি-আর্মড ক্যাডারের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। জেএসএস ও ইউপিডিএফ বিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন ও অপহরণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা সম্ভব না হলে আরও রক্তপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় জেএসএস এবং খাগড়াছড়ি জেলায় ইউপিডিএফের আধিপত্য রয়েছে। তবে নানিয়ারচরসহ কিছু কিছু স্থানে জেএসএস ও ইউপিডিএফের বিদ্রোহী গ্রুপগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠায় ওইসব স্থানে হানাহানি হচ্ছে। এসব হানাহানির অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি। সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্তের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সীমান্ত চৌকি (বর্ডার আউটপোস্ট-বিওপি) নেই। ফলে সেখানে বাধাহীনভাবে অস্ত্র ঢুকতে পারে। তাছাড়া শান্তিচুক্তি সই করার পর চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত মোতাবেক বেশ কিছু নিরাপত্তা ফাঁড়ি প্রত্যাহার করা হয়। শান্তিচুক্তির আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৫২টি অস্থায়ী নিরাপত্তা ফাঁড়ি ছিল।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনি জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে খুন, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্রের বিষয়টি সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। সমন্বিতভাবে অভিযান আরো জোরদার করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত থাকার সুযোগ নিচ্ছে। সব বিষয় মাথায় রেখেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ইউপিডিএফের সামরিক শাখার তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জাগুয়ার কোম্পানি (খাগড়াছড়ি), ড্রাগন কোম্পানি (রাঙ্গামাটি) ও ঈগল কোম্পানি (বাঘাইছড়ি)। এদের কোনো স্থায়ী সামরিক ক্যাম্প নেই। সবগুলোই ভ্রাম্যমাণ। এসব মারাত্মক অস্ত্রের বিপরীতে বাঙালিদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে বাঙালিরা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের অস্ত্রবাহক হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া চাঁদা সংগ্রহ, সোর্স হিসেবে স্থানীয়দের ব্যবহার করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।