Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্মাণের আগেই ব্যয় বৃদ্ধি!

শাহজালাল তৃতীয় টার্মিনাল

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরুর আগেই এর সম্ভাব্য ব্যয় বাড়লো প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছিল সর্বনিম্ন দরদাতা অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম। সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদন শেষে নভেম্বরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেক সভায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যয় অনুমোদন দেয়া হয়। এ প্রকল্পে জাইকার সাথে চুক্তি হয়েছে আগেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, যে কোনো সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শুরু করা হবে। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে রয়েছে। সে কারণে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮১ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থানান্তরিত হয়। তখন থেকে এই টার্মিনাল দিয়ে সকল জিয়া আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু টার্মিনাল ভবনে কোনো বোর্ডিং ব্রিজ ছিল না। পরে আটটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই টার্মিনাল দিয়ে বছরে ৫২ শতাংশ যাত্রী ওঠা-নামা করে। আর ১৭ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর। বাকিরা সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহার করে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ এবং এশিয়ার ১৮টি রুটে চলাচল করছে। এ বিমানবন্দর দিয়ে বার্ষিক প্রায় ৪০ লাখ আন্তর্জাতিক ও ১০ লাখ অভ্যন্তরীণ যাত্রী চলাচল এবং ১ লাখ ৫০ হাজার টন ডাক ও মালামাল পরিবহন হয়।
তৃতীয় টামিনালের দরপত্র আহ্বান নিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনের বিরুদ্ধে তুরস্কের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গ্যাপ-ইনসাত-টিএভি’র করা রিটসহ নানা কারণে কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়। ২২টি দরপত্র বিক্রি হলেও দরপত্র খোলার পর পাওয়া যায় মাত্র ২টি। যাচাই বাছাই শেষে গত ১৩ অক্টোবর অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম কাজের অনুমোদন দেয়া হয়। এই কোম্পানির সাথে মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং নামের তিনটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। প্রায় দশ লাখ বর্গফুট আয়তনের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আয়তন তৃতীয় টার্মিণাল নির্মাণ শেষে বেড়ে হবে প্রায় সাড়ে ৩২ লাখ বর্গফুট। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে কমবে বিমানের একচ্ছত্র আধিপত্য।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা ও সময়সীমা ধরা হয়েছে সাড়ে তিন বছর। জাইকার আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ১২টি। প্রতি ৪টি বোর্ডিং ব্রিজের জন্য একটি লিফট থাকবে। কনভয় বেল্ট থাকবে ১২টি। চেকইন কাউন্টার হবে ২০টি। প্রতিটি কাউন্টারে সিকিউরিটি স্ক্যানার থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় ২ হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার সক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কাউন্টারে। এ ছাড়া ১ হাজার ২০০ গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, শাহজালাল বিমানবন্দরের স¤প্রসারণ প্রকল্পের এই থার্ড টার্মিনালের নির্মাণশৈলী হবে অত্যাধুনিক। এটি নির্মিত হলে দেশের অ্যাভিয়েশন সেক্টর নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জাইকার একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করেছে। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজকে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়েছে। এ প্রকল্প নিয়ে জাইকার প্রতিনিধিরা বহিঃসম্পদ বিভাগ ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেন। জাইকা নিশ্চিত করেছে, প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব খুব দ্রুত জাপান সরকারের অনুমোদন পাবে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জের দক্ষিণ দিকের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। ওই এলাকায় রয়েছে ফ্লাইং ক্লাব, কয়েকটি দেশি-বিদেশি হেলিকপ্টার সার্ভিসের হ্যাঙ্গার ও আর্মি অ্যাভিয়েশনের ইউনিট। এসব প্রতিষ্ঠান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উত্তর পাশে স্থানান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত এসব স্থাপনা সরানোর কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বছরে ৬৫ লাখের মতো যাত্রীসেবা দেয়া যায়। যে হারে যাত্রী বাড়ছে তাতে চলতি বছর শেষে কম করে হলেও পাঁচ লাখ যাত্রী বাড়বে। ২০২০ সালে তা ৮০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এত যাত্রী সামাল দেয়া বর্তমান অবকাঠামোয় সম্ভব নয়। যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় অনেক এয়ারলাইন্স ফ্লাইট সিডিউল চাচ্ছে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগের মেয়াদে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে সিঙ্গাপুরের সিপিজে, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনসিন ও বাংলাদেশের শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডিডিসি যৌথভাবে থার্ড টার্মিনালের সমীক্ষা, নকশা ও আকৃতি তৈরির কাজ করে। এরই মধ্যে সমীক্ষা প্রতিবেদন ও নকশা প্রণয়ন হয়েছে। এখন চ‚ড়ান্ত মূল্যায়ন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করবে জাপানের নিপ্পন কোম্পানি। তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হলে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে ১ নম্বর টার্মিনালে। ভিভিআইপি সরানো হবে দক্ষিণ পাশে পদ্মা ডিপোর কাছাকাছি স্থানে। বর্তমান আমদানি-রফতানি কার্গো সরানো হবে উত্তর দিকে। শতভাগ অটোমেশন সিস্টেম চালু করা হবে এ দুটো কার্গোতে।
জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক বিমানবন্দরের মতোই সব রকম অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা থাকবে তৃতীয় টার্মিনালে। পর্যাপ্ত বোর্ডিং ব্রিজ, লিফট, চেকইন কাউন্টার, কনভয় বেল্ট, ডিজিটালাইজ লাগেজ কেরিয়ার, পর্যাপ্ত দোকান, রেস্তোরাঁ, ইমিগ্রেশন পয়েন্ট, কার পার্কিংসহ যাত্রী ছাউনি থাকবে। যোগাযোগের জন্য থাকবে আন্ডারপাস, ওভারপাস ও ফ্লাইওভার। টার্মিনাল থেকে বের হয়ে একাধিক লেনের রাস্তা যাবে মূল সড়কের গোলচত্বরে। গাজীপুর ও উত্তরা হয়ে আসা যাত্রীরা প্রবেশ করবেন বলাকার সামনে থাকা একটি ইউলুপ দিয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন্স অব ট্রাভেলস এজেন্টসের (আইএটিএ) মতে, বিশ্বে যাত্রী বৃদ্ধির শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। বিদেশগামী শ্রমিকের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থানের কারণেই যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এশিয়ার উদীয়মান বাঘ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়ায় যাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারপরও তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করা যাবে সর্বোচ্চ ১০-১৫ বছর। এর মধ্যেই নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করতে হবে। এতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ