Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

খুলনায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাত কারাগারে শিল্পপতি মাহবুব

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম


সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় মাহবুব ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমানের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে মাহবুবুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলায় দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মুজিবর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চলতি বছরের ২০ জুলাই খুলনার দুদক কার্যালয়ে হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজল-ই-হোসেন ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে নগরীর লবণচরা এলাকার কুরাইশি স্টিল লিমিটেডের সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে উপ-সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, কুরাইশি স্টিল লিমিটেডের সরকারি অংশের শেয়ার না জানিয়ে বিক্রি, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিএসইসিকে অবহিত না করে মিলের উৎপাদন বন্ধ, প্রতিষ্ঠানটির যন্ত্রপাতি গোপনে বিক্রি ও মিলের জমির মালিকানার প্রকৃত তথ্য গোপন করে দু’টি পৃথক রেজিস্ট্রি সাব-কবলা দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট রোডের সরাফ আলী ছেলে ও হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজল-ই-হোসেন, তার ভাই সাফাকাত হোসেন ও মোহাম্মদ হোসেন, চট্টগ্রামের সদরঘাট রোডের মৃত মোহসীন আলীর ছেলে ফখরুদ্দিন মো. জালালী, খুলনা সদরের ১৭ ক্লে রোডের মৃত শরাফ আলী ছেলে এনায়েত হোসেন, খুলনার দৌলতপুরের শেখ মজনুর ছেলে ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাহাবুবুর রহমান, দৌলতপুরের মৃত মানিক আহম্মদ হাওলাদারের ছেলে ও মাহাবুব ব্রাদার্স প্রা. লিমিটেডের অ্যাসিসটেন্ট অফিসার মো. সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার, হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজল-ই- হোসেনের স্ত্রী আমাতল্লাহ এফ হোসেন এবং খুলনার গোবরচাকা এলাকার মৃত আ. হাকিমের ছেলে মো. মজিবর রহমান।

জানা যায়, ১৯৬৯ সালে নগরীর লবণচরায় ৬ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর ব্যক্তি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত কুরাইশি স্টিল লি. নামীয় প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতার পরে অবাঙালি মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রেসিডেন্ট আদেশে জাতীয়করণ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টিল মিলস্ করপোরেশন পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।
১৯৮৪ সালের সরকারের গৃহীত বেসরকারিকরণ নীতির আলোকে জনস্বার্থে কুরাইশি স্টিল লিমিটেডেরেআগের শেয়ার হোল্ডারদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি শর্তসাপেক্ষে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে সম্মত হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কুরাইশি স্টিলের শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষে ফজল-ই-হোসেনের চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী সরকার বা বিএসইসির শেয়ার ৪৩ দশমিক ৬ ভাগ ও ক্রেতা পক্ষ ফজল-ই-হোসেন গংদের নামে অবশিষ্ট ৫৬ দশমিক ৪ ভাগ শেয়ার হস্তান্তরের শর্ত ছিল। চুক্তিতে প্রধান বিষয় ছিল, ক্রেতাপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সব দেনা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের পাওনা পরিশোধ করবে। যতদিন পরিশোধ না হবে, ততদিন বিএসইসির প্রতিনিধির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া ক্রেতাপক্ষ তাদের শেয়ার হস্তান্তর ও মিলের পরিবর্তন করতে পারবে না।

পরে ক্রেতাপক্ষ শেয়ারের মূল্য সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় ও আংশিক পরিশোধিত মূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেকারণে প্রতিষ্ঠানটির সব ক্ষমতা সরকার বা বিএসইসির অনুকূলে বহাল থাকে। এঘটনার পর ২০১৭ সালের ১৩ জুন খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটির দখল নিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে মিলটিতে যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোর অস্তিত্ব নেই। ফজল-ই-হোসেন মালিকানার প্রকৃত তথ্য গোপন করে ৩ দশমিক ৪২ ও ৩ দশমিক ৩৬ একর জমি ৬ কোটি ১০ লাখ টাকায় মাহাবুব ব্রাদার্সের কাছে বিক্রি করে দেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ