Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তদন্ত প্রতিবেদন বছরজুড়ে অন্ধকারে কারাভোগী কর্মচারীও স্বপদে বহাল

বিআইডব্লিউটিএর সচিবালয়ে অনিয়ম

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রায় এক বছর ধরে অন্ধকারে আটকে রাখার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঋণখেলাপি মামলায় সংস্থার একজন কর্মচারী দুই সপ্তাহ কারাভোগ করলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত না করায় বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশেষ কোনো উদ্দেশে অভিযুক্তদের রক্ষায় এমন বিধিবহির্ভূত কাজ করা হয়েছে। কিন্তু সংস্থার সচিব ওয়াকিল নওয়াজ আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কাছে সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেননি। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শও করেছেন সচিব। তবে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দপ্তরে প্রতিবেদন জমা হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তারা হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক (নৌনিট্রা) বিভাগের সহকারী পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য এবং একই বিভাগের নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক শমর কৃষ্ণ সরকার। আর কারাভোগী কর্মচারী হলেন প্রকৌশল বিভাগের ‘অফিস সহায়ক’ ইসমাইল হোসেন। সংস্থার সচিব ওয়াকিল নওয়াজ ইনকিলাবকে বলেন, এ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান নিদেশনা দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শমর কৃষ্ণ সরকার গত বছরের (২০১৮ সাল) ২৪ জুন নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের ৫ নম্বর ঘাটে অবস্থানরত বালুবাহী নৌযান ‘এমভি সিরাজ’-এর চালক মঈনুদ্দিন মিস্ত্রীকে কার্যালয়ে ধরে নিয়ে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু চালক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর শমর কৃষ্ণ ওই কার্যালয়ের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (সহকারী পরিচালক) বাবুলাল বৈদ্যর সঙ্গে পরামর্শক্রমে ওই নৌযানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। খবর পেয়ে নৌযানের মালিক তাৎক্ষণিকভাবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে ঘটনাটি জানান।
চেয়ারম্যানের নির্দেশে ২৮ জুন সংস্থার হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক ও নৌনিট্রা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. এনামুল হক ভূঞাকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, যার দপ্তর আদেশ নম্বর ১১৪৩/২০১৮। কমিটিকে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য সাত কার্যদিবস সময় বেঁধে দেয়া হয়। তবে কমিটি প্রায় ছয় মাস পর ১২ ডিসেম্বর বিআইডব্লিউটিএ’র সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়; যার নথি নম্বর ১৮.১১.০০০০.৪৮৫.০৩.০৫.৯.১৭/৩৪। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঘটনার দিন নারায়ণগঞ্জের নৌনিট্রা কার্যালয়ে এমভি সিরাজ নামক নৌযানের চালক মঈনুদ্দিন মিস্ত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। কোনো কারণে আটককৃত নৌযানে বসেই তার বিরুদ্ধে পরিবহন পরিদর্শকের মামলা করার এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং মামলা দায়েরের জন্য ওই নৌযানের স্টাফ, সুকানি, মাস্টার অথবা চালককে দপ্তরে আনার প্রয়োজন ছিল না। পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, মামলা দায়েরের জন্য নারায়ণগঞ্জের নৌনিট্রা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের (তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবুলাল বৈদ্য) সঙ্গে পরিবহন পরিদর্শক শমর কৃষ্ণ সরকারের আলোচনা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ঘটনার দিন পরিবহন পরিদর্শক শমর কৃষ্ণ সরকার বালুবাহী নৌযান ‘এমভি সিরাজ’-এর চালক মঈনুদ্দিন মিস্ত্রীকে কার্যালয়ে নিয়ে আসেন এবং নৌনিট্রা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্যর সঙ্গে আলাপ/পরামর্শক্রমে নৌযানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তাদের এহেন কার্যকলাপে সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে কমিটি।
তবে দীর্ঘ প্রায় এক বছরেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিবেদন জমা হওয়ার দুই মাস পর বিআইডব্লিউটিএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান বদলি হন। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন চেয়ারম্যান যোগদান করেন। কিন্তু সংস্থার সচিব ওয়াকিল নওয়াজ আজ পর্যন্ত চেয়ারম্যানের কাছে সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেননি। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এ দিকে সঞ্জীব কুমার দাস রেকর্ড কিপার হিসেবে চাকরি করেন। ২০১৬ সালে কর্তৃপক্ষের সচিব আবুল বাশারকে মারধর করেন। এ ঘটনায় একই বছরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়, এর পরে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ২০১৭ সালে আবার খুলনা বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

প্রকৌশল বিভাগের ‘অফিস সহায়ক’ ইসমাইল হোসেন ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকের এক ঋণখেলাপি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ কেরানীগঞ্জ কারাগারে থাকেন। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ’র সচিবকে জানানো হলেও অদৃশ্য কারণে তিনি ওই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য চেয়ারম্যানের দপ্তরে নথি উপস্থাপন করেননি। অথচ সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলাবিধিতে ফৌজদারি অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অভিযোগ, সংস্থার সচিব অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীকে রক্ষার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন ও হাজতবাসের তথ্য চেয়ারম্যানের কাছে গোপন রেখেছেন। এর পেছনে তার কোনো বিশেষ স্বার্থ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ