Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

থমকে আছে বিনিয়োগ

ঋণ পুনঃতফসিল রিটের শুনানি আদালতে চলছে

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দীর্ঘ দিন থেকেই খেলাপি ঋণ দেশের ব্যাংকিং খাত তথা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমনকি এই ঋণকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীরব ঘাতকও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে দেশের খেলাপি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এই নীরব ঘাতক দুরীকরণে নজর দেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছেন, ধীরে ধীরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে। ব্যাংকে আর এক টাকারও খেলাপি ঋণ বাড়বে না। অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বিভিন্ন সময়ে তিনি হিসাব দিয়ে খেলাপি ঋণ যে বাড়েনি তা উল্লেখ করেছেন। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আ হ ম মুস্তফা কামাল মন্দ ও ক্ষতি জনিত মানে শ্রেনীকৃত খেলাপি ঋণে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত স্থিতির উপর ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট জমা প্রদান সাপেক্ষে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেন। গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সার্কুলারও জারি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা ওই সার্কুলার অনুযায়ী ২ শতাংশ এককালীন নগদ জমা (ডাউন পেমেন্ট) দিয়ে ১০ বছর মেয়াদে ঋণ পুনঃতফসিল বা সম্পূর্ণরূপে পরিশোধের বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় ঋণখেলাপিদের। এ ক্ষেত্রে তাদের ঋণের সুদ হার হবে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ, যা কোনোভাবেই ৯ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু এই সার্কুলার জারির পর পরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করা হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সার্কুলারকে স্থগিতাদেশ দেয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের এই আদেশকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করা হয়। বর্তমানে এই রুলের চূড়ান্ত শুনানি চলছে। একই ঘটনায় আপিল বিভাগ ২০ অক্টোবর সময় বেঁধে দিয়ে রুল নিষ্পতি করার পরামর্শ দেয়। রুল নিষ্পত্তিতে সময়ক্ষেপন করায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের নেয়া একটি ভালো উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। কারণ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সময়োপযোগী এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে গ্রাহকরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তাদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে।
অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার বাস্তবায়নে মাত্র দুই কার্যদিবস (আজ বৃহষ্পতিবার এবং আগামী রোববার) বাকী রয়েছে। দুই কার্যদিবসে কি করবেন এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরণের হতাশা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। অপরদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রাহকরা কি করবেন এ নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ারও লোক নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে জানা যায়, গভর্নর ফজলে কবির ওয়াশিংটনে আইএমএফ’র সভায় যোগদান করতে আমেরিকায় গেছেন। ফিরবেন আগামী ২০ অক্টোবরের পর। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলামও দেশে নেই। গ্রাহকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালতের রায়ের অপেক্ষায় থাকবেন নাকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবেন এই নিয়ে দোটানার মধ্যে আছেন।
এদিকে গতকাল ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)র পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক। বিচারপতি এএফএম নাজমুল আহসান এবং বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। পরে আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
শুনানিতে শাহ মঞ্জুরুল হক ঋণ গ্রহীতা এবং ব্যাংকের অনুকূলে বিভিন্ন আইন, বিধি ও দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সার্কুলার জারি আইন বহির্ভুত কার্যক্রম নয়। এক্ষেত্রে আদালতের আদেশ-নির্দেশেরও কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। এর আগে সরকারপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং পিটিশনার পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন।
জানতে চাইলে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেশের অর্থনীতির জন্যও দীর্ঘমেয়াদে সুফল বয়ে আনবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে সঙ্কটে থাকা ব্যাংকিং খাতে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। অর্থাৎ তারল্য সংকট কাটবে। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
ঋণ খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগকে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বাস্তবধর্মী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুছ ছালাম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ব্যবসা থমকে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আবার সচল হবে। নগদ অর্থ ব্যাংকে আসবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন, বন্ধ কলকারখানার চাকা সচল হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সুদের হার ৯/৬ সিদ্ধান্ত জনতা ব্যাংক যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেছে। তেমনি খেলাপি ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে ঋণ পুনঃতফসিল সিদ্দান্ত বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপনকে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, সঠিক সিদ্ধান্ত না আসায় গ্রাহকরা কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।



 

Show all comments
  • কেরামত আলী ১৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
    সারা বাংলাদেশের মানুষ বলে আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশকে গিলে খাইছে, অনুরূপভাবে ১০ কোটি গরিব মানুষেরা ক্ষুধার জ্বালায় তাদের গিলে খাবে, কয়েক ডজন র‌্যাব পুলিশে গুলি চালিয়ে থামিয়ে রাখতে পারবেনা, এবং অন্য তিনটা দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তখেব করে কোনো রাজনৈতিক দলকে বাঁচাতে কোনোদিন আসবেনা.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ