Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাত্রলীগের ‘নির্দেশনায়’ ‘টর্চার সেল’ অস্বীকার করল হল সংসদ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে কোনো ধরনের ‘টর্চার সেল’ নেই বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে হত সংসদগুলো। এ ধরণের প্রায় ৫ থেকে ৬ টি বিজ্ঞপ্তি ইনকিলাবের হাতে এসেছে। এসব হল সংসদের অধিকাংশ নেতাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। এসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও সোশ্যাল মিডিয়ার বরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে টর্চার সেল নামক যে বিশেষ কক্ষের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে তাতে গভীর বিস্ময় প্রকাশ করছি।’
তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘টর্চার সেল’ নাম দিয়ে কোন কক্ষ না থাকলেও হলে হলে বিভিন্ন নামে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ‘টর্চার’ কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষে গত ৭ বছরে অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল সংসদের শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সমস্যা নিয়ে কথা বলার কথা থাকলেও তারা ছাত্রলীগের পক্ষে সাফাই গাইছে। টর্চার সেলের রকানো অস্তিত্ব নাই এটা একধরণের মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তি। শিক্ষার্থীদের যেসব রুমে নির্যাতন করা হয় সেসব রুমের নাম টর্চার সেল না হলেও সেগুলো টর্চার সেলের মতই।
ছাত্রলীগের নির্দেশনা
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির উপস্থিতিতে ঢাবিতে টর্চার সেল নেই এ ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কয়েকটি হল সংসদের নেতারা বিষয়টি ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন। এদিন দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে বসেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। এসময় শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে হল সংসদের ভিপি-জিএসদের ‘টর্চার সেল’ না থাকার বিষয়ে বিবৃতি দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জাল স্বাক্ষরে নোটিশ!
এদিকে হল সংসদেও বিবৃতিতে যাদের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থী নির্যাতন এবং ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা এবং হলের ক্যান্টিনে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। বিবৃতিতে হল সংসদের যেসব নেতার রয়েছে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তাদেও অনেকেই পূজার ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছেন, যারা বিবৃতির বিষয়ে কিছুই জানেন না। সূর্যসেন হল সংসদের বহিরঙ্গণ ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক, বিজয় একাত্তর হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক, জসিম উদদীন হল সংসদের চারজন সদস্যসহ অনেকের সাক্ষর জাল করে হল সংসদে বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
সূর্যসেন হল সংসদের বহিরঙ্গণ ক্রীড়া সম্পাদক মো. জুলহাস সুজন বলেন, আমি গত দশদিন ধরে বাড়িতে। টর্চার সেল সম্পর্কিত হল সংসদের কোন বিবৃতি সম্পর্কে জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কিত কোন বিবৃতি সম্পর্কে আমি জানি না। আর আমার সাক্ষর কে দিয়েছে সেটা সম্পর্কেও অবগত নই। একই হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক সাব্বির হাসান সৌরভ বলেন, আমি গত ৭ অক্টোবর বাড়িতে এসেছি। এখনও বাড়িতে অবস্থান করছি।
এ বিষয়ে সূর্যসেন হল সংসদের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান বলেন, এ সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। হল সংসদের সকল সম্পাদক এবং সদস্য থেকে স্বাক্ষর সাধারণত জিএস নিয়ে থাকে। তবে বিবৃতিটি তড়িঘড়ি করে দেয়ার কারণে সাক্ষর সংগ্রহের কাজটি হলের পিয়নদের দেয়া হয়েছে। তারাই এটি সংগ্রহ করেছে। তবে আমি জানি হল সংসদের সকলে এই বিষয়ে একমত। কেউ ভিন্নমত পোষণ করার কথা না।
বিজয় একাত্তর হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ সুজন শেখ বলেন, পূজার বন্ধে বাড়িতে আসার পর আমার আম্মু অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই গত ১০ দিন যাবত হল সংসদের কোন কর্মকান্ড সম্পর্কে আমার জানা নেই। এর মধ্যে কোন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকলেও এ ব্যাপারে আমি জানিনা। স্বাক্ষরের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। হল সংসদের কেউ হয়তো দিয়ে থাকবে।
জসিম উদদীন হল সংসদের সদস্য আহসানুল হক শিমুলকে কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, পূজোর ছুটিতে আমি বাড়ি এসেছি। সাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা। আমরা হল সংসদ বা ডাকসুর কেউ না। আমরা হল সংসদকে বিবৃতি দিতে কোনো নির্দেশনা দেইনি। হল সংসদগুলো তাদের মতো করেই বিবৃতি দিয়েছে।’
ডাকসু ভিপি নুরল হক নুর এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রশাসন হলগুলোকে ছাত্রলীগের কাছে অলিখিতভাবে ইজারা দিয়েছে। তাই তারা যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে গেলে শিবির বেøইম দিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। যদি হলগুলোতে টর্চার সেলই না থাকত তাহলে হাফিজুরদের মৃত্যুবরণ করতে হতো না। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এহসানের চোখ নষ্ট করা হতো না।’

 



 

Show all comments
  • আবু আব্দুল্লাহ ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩৬ পিএম says : 0
    শুধুই ওখানে না আজ সারা দেশে ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ