Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারকে হটাতে আর কিছুদিন অপেক্ষা

আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় ব্যারিস্টার মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সরকার হটাতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, কিছুদিনের মধ্যে রাজপথে আন্দোলনে গণবিস্ফোরণ ঘটবে। তিনি বলেন, অনেকে মনে করেন আর কতদিন। এতোদিন তো সহ্য করেছি। আমাদের আরো কিছুদিন সহ্য করতে হবে। কিন্তু সময় আসবে।এমন একটি সময় আসবে যখন এদেশের এই জালেম সরকারকে উৎখাত করার জন্য বা অপসারণ করবার জন্য গণবিস্ফোরণ ঘটবে বলে আমি মনে করি। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। 

ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে বলে আমি মনে করি না। সুতরাং এর অবসান একমাত্র হতে পারে রাজপথে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়ার মুক্তি হবে, প্যারোলের মাধ্যমে নয়। এই মুক্তি আমাদের আনতে হবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার। তিনি বলেন, এই সরকার যত শিগগিরই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়, ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমরা দাবি করব যে, অবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত, একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন করার সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
ছাত্রলীগ-যুবলীগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হয় না যে, দেশে কোনো সরকার আছে। এই সরকারের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় দুর্নীতি ছাড়া আর কিছু নাই। আওয়ামী লীগের গত ১০ বছর যাবত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নিপীড়নে, তান্ডবলীলায় দেশের মানুষ জর্জরিত হয়েছে। আগে শুনতাম এরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে। এবার যেটা প্রকাশ পেলো যেটা আগে আমরা জানতাম না যে, এরা ৮৬ কোটি টাকা নিয়ে টেন্ডারবাজী করবে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা- এটা বাংলাদেশের মানুষ হতবাক হয়েছে। গেলো ছাত্রলীগের কথা, গেলো রাব্বানী এবং শোভনের কথা। তারপরে এসে গেলো যুবলীগের ব্যাপার। দেখা গেলো খালেদ, শামীম এবং সম্রাটের মতো নিশ্চয় আরো শত শত সম্রাট-খালেদ-শামীম বিরাজ করছে। এদের যে টাকা এটা তো অকল্পনীয়। তারা এই শত শত কোটি টাকায় ক্যাসিনো-জুয়ারি-টুয়ারি বানিয়েছেন, বিদেশে টাকা পাঁচার করেছে, ব্যাংককে নাইট ক্লাব খুলেছেন। এই টাকা সুইজারল্যান্ডে জমা রেখেছেন। ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে এক শ্রেনীর মানুষ এই সরকারের মদদে, এই সরকারের নেতৃবৃন্দরা এবং যারা এই সরকার পরিচালনা করছেন তাদের প্রভাবে ও তাদের প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্বে এই ধরনের দুর্নীতি এখন বাংলাদেশ চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টর্চার সেলের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আবরার ফাহাদ শহীদ হয়েছে, সে চলে গেছে, জান্নাতবাসী হবে। সে একটা জিনিস প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে ভিন্নমত যদি অবলম্বন করা হয় তাকে হত্যা পর্যন্ত করতে তারা কার্পণ্য করে না। এই যে মনোভাব, এই যে মাইন্ড সেটটা এটা হলো ফ্যাসিস্ট মনোভাব। এজন্য আজকে বুয়েটের মতো আমাদের প্রেস্টিজিয়াস ইন্সটিটিউশন সেখানে আজকে যে অবস্থা আমরা দেখলাম, আবরার হত্যাকান্ড ... ।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, শুধু বুয়েটে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রত্যেকটি হলে ৫/৬ টা করে টর্চার সেল আছে। এটা তো আগে আমরা জানতাম না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত ডরমেটরি আছে, যত হল আছে প্রত্যেকটা হলে সরকারি দলের এই লালন-পুষ্ট তাদের সন্তানরা টর্চার সেল করেছে বিরোধী মতাবলম্বী যারা তাদেরকে ওপর অত্যাচার করার জন্য আর চাঁদাবাজী করার জন্য এবং নিরহ ছাত্রদের নিয়ে প্রহার করে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করার জন্য। এই ধরনের বিভৎস চিত্র বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারতো না এই আবরার হত্যাকান্ড যদি না ঘটত তাহলে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভবপর হতো না।
২০ দলীয় জোটসহ আরো বৃহত্তর ঐক্যজোট সৃষ্টি করতে হবে জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, সকল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে আন্দোলন শক্তিশালী করতে হবে যাতে করে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারি, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমরা এখন ভোটারবিহীন সরকারের অধীনে একটা দাসত্বমূলক সমাজে বাস করছি, এই দাসত্বমূলক সমাজে আমাদের দেশবাসী কোনো রকমের অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষিত নাই। সেটা মৌলিক অধিকার বলেন, সাংবিধানিক অধিকার বলেন কোনো ধরনের আমাদের স্বাধীনতা বা অধিকার এখন আর নাই। ভোটারবিহীন এই সরকার দেশের প্রতিটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান, প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের করায়ত্ব করে প্রত্যেক সেক্টারে নতুন নতুন সম্রাট জন্ম দিয়েছে। যেমন ক্যাসিনো সম্রাট, বিদ্যুত সম্রাট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্রাট, সম্রাটের ভাই বাংলাদেশে এখন আর অভাব নাই। একটা ভোটারবিহীন বড় সম্রাট, তার অধীনে এই ছোট ছোট রাজ্য গড়ে উঠায় অনেকে সম্রাটের জন্ম দিয়েছে। এই সম্রাটেরা অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, মনুষ্যত্ববিহনী চিন্তা-ধারা ছাড়া আর কিছুই নাই।
জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দেশবিরোধী চুক্তি এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। এর বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিকে সোচ্চার হয়ে মাঠে নামতে হবে, দেশের সার্বভৌমত্ব, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সকলকে সোচ্চার হতে হবে। স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পারওয়ার, আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, এনপিপির অ্যডাভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, কল্যাণ পার্টির মাহমুদ খান, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, এনডিপির আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নূরুল ইসলাম প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ