পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দক্ষিণাঞ্চল ‘মাছে ভাতে বাঙালি’র বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করে মৎস্যখাতেও স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। গত এক দশকে দক্ষিণাঞ্চলে মাছের উৎপাদন প্রায় ৭৫% বৃদ্ধি পেয়ে এখন প্রায় সোয়া দুই লাখ টন উদ্বৃত্ত। এ অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত প্রায় ৭ লাখ টন। গত এক দশকে দেশে মাছের উৎপাদন ৫২.৭০% বাড়লেও দক্ষিণাঞ্চলে এ বৃদ্ধির হার ৭৫%। এমনকি এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১১২%। আর সারা দেশে ইলিশের ৬৬%-ই আহরিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে। এ পরিসংখ্যান মৎস্য অধিদফতরের।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্ত ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে এবং বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে ৫ম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলও এক্ষেত্র যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর বদ্ধ জলাশয়, ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৪২ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় ছাড়াও দেড় সহস্রাধিক বেসরকারি মৎস্য খামার, ৫০টির মত সরকারি-বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারি, ৯২০টি নার্সারি খামার ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার চিংড়ি খামার মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি ফসলের চেয়ে মাছে মুনাফা বেশি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের মৎস্য চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, একজন মানুষের দৈনন্দিন ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে আমাদের দেশে তা ইতোমধ্যে ৬২.৫৮ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলে তা আরো বেশি। যা ইতোপূর্বে ছিল ৫৩ গ্রাম। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮ এর হিসেব অনুযায়ী, দেশের মোট জিডিপির ৩.৫৭% এবং কৃষিজ জিডিপির ২৫.৩০% মৎস্যখাতের অবদান। দক্ষিণাঞ্চলে এ হার আরো বেশি বলে মৎস্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। অধিদফতরের মতে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশেরও বেশি মানুষ মৎস্য সেক্টর থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ২০১৬-১৭ সালে দেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও দক্ষিণাঞ্চল আরো পাঁচ বছর আগে অর্জন করেছে।
তবে অব্যাহত নগরায়নের ফলে বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শহরগুলোর পুকুর, দীঘি ও খালগুলো ক্রমাগত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। যা মৎস্য সেক্টরের জন্য একটি অশনিসঙ্কেত বলে মনে করছে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। এরপরেও বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার পুুকুর ও দীঘি, ৬৬৭টি বরোপীট, ৯০টি প্রবাহমান নদ-নদী, ৪৩টি বিল, একটি বাঁওড় বা মরা নদী, প্রায় দেড় হাজার খাল ও সোয়া ৬শ’ প্লাবন ভ‚মিসহ মোট জলাশয়ের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের মত। এসব জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ২০০৮-০৯ সালে ২ লাখ ৯৮ হাজার টন থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার টনেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার মধ্যে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ২৯ হাজার ২৫ টন। এছাড়াও রুই জাতীয় মাছ প্রায় ৭৬ হাজার টন। পাঙ্গাস, শিং, মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া এবং চিংড়ি ছাড়াও অন্য মাছের উৎপাদনও ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ২৫০ টনের মত। এসময়ে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি ৫০টি হ্যাচারি ও ৯২৩টি নার্সারিতে প্রায় ২৪ হাজার কেজি রেনু ও ২৮ লাখ ১৯ হাজার মাছের পোনা উৎপাদন হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ৫ লাখ জেলে মৎস্য সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। যার মধ্যে মৎস্য অধিদফতরের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৪। তবে মৎস্য অধিদফতরের মতে, এ অঞ্চলে জেলে পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ২৮ হাজারের মত। মৎস্য অধিদফতরের অপর এক পরিসংখ্যান দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলাতেই প্রায় সোয়া ৩ লাখ জেলে ইলিশ আহরণে জড়িত। যার ৬৫% সার্বক্ষণিক জড়িত বলে মৎস্য অধিদফতর সূত্রে বলা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন উন্মূক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ কার্যক্রম জনপ্রিয়তা অর্জনের অংশ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় প্রায় দেড় হাজার খাঁচায় মাছ চাষ করে গত বছর প্রায় ১ হাজার টন বিভিন্ন ধরনের মাছ উৎপাদন হয়েছে। প্রায় ১২শ’ মৎস্য চাষী এর সুফল ভোগ করেছেন। এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ সম্প্রসারণে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হচ্ছে। গত অর্থ বছরে এ অঞ্চলের ৫টি জেলার ১১টি উপজেলায় পুকুরে কিশোর কাঁকড়া চাষ, পেনে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ, খাঁচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ ও সামাজিক পর্যায়ে কুচিয়া চাষের ২৫টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে।
ফলে গত অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ১১০ হেক্টর জমির ৭৩৫টি খামারে ৩শ’ টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়েছে। যা আমাদের রফতানি খাতকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হচ্ছে। এছাড়াও গত অর্থবছরে দক্ষিণাঞ্চলের ৮টি উপজেলার প্রায় তিন হাজার মৎস্যজীবী ১ হাজার টন শুটকি উৎপাদন করেছে।
তবে এসব অর্জনের পরেও দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য অধিদফতরের অবস্থা খুব ভাল নয়। জনবল সঙ্কটে বরিশাল বিভাগে মৎস্য অধিদফতরের কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম। এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলার জন্য মৎস্য অধিদফতরের যে মাত্র ১৬৭টি পদে জনবল মঞ্জুরি রয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি পদ শূন্য। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ৮৩টি পদে লোকবল থাকলেও শূন্য পদের সংখ্যা ৮৪। এ অঞ্চলে সিনিয়র সহকারী পরিচালকের ৭টি পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ১ জন। সহকরী পরিচালকের একমাত্র পদটিও শূন্য। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার ১৮টি পদের ১২টি শূন্য। ২৪টি উপজেলা কর্মকর্তার ৪টি পদে কোন জনবল নেই। মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তার ৬টি পদের ১টি শূন্য। মৎস্য সম্প্রসারণ ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার ৩৬টি পদ এবং মৎস্য জরিপ কর্মকর্তার ৬টি পদের সবগুলোই শূন্য। ৯টি খামার ব্যবস্থাপকের বিপরীতে কর্মরত ৬ জন। সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার ৪২টি পদে কর্মরত আছেন ২৪ জন। শূন্য ১৪টি পদ। উপ-সহকারী প্রকৌশলীর ৪টি পদের ১টি শূন্য।
এসব বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চল নদ-নদী বহুল এলাকা। এ অঞ্চলে মাছ চাষের অপার সম্ভবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ সম্প্রসারণে। এ লক্ষ্যে মাছ চাষে সাধারণ মানুষকে আগ্রহী করে তোলাসহ সব মৎস্য চাষীকে উন্নত প্রযুক্তিতে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। জনবল সঙ্কট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি সদর দফতর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এ সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।