Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় জরিমানা

শ্যামবাজার ও খাতুনগঞ্জে অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য তালিকায় পেঁয়াজ অপরিহার্য্য হওয়ায় মাঝে মধ্যেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে টুপাইস কামিয়ে নেয় অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। তবে এবার চটজলদি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও থেমে নেই অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা। বাজারে মূল্য তালিকা টানানোর কথা থাকলেও তা কার্যকর না হওয়ায় ঢাকায় যেমন ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। তেমনি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আরতে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন।

আইন অনুযায়ী পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকায় ও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির অপরাধে এক আড়তদারকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতায় অভিযান পরিচালিত হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, পেঁয়াজের বাজার তদারকি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম রাজধানীর শ্যামবাজারে অভিযান চালিয়েছে। এ সময় মেসার্স বেপারী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বার্মা পেঁয়াজ ৭৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করতে দেখা যায়। বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির মালিক। এছাড়া ভোক্তা আইন অনুযায়ী তাদের পণ্যের মূল্য তালিকাও ছিল না। এসব অপরাধে মেসার্স বেপারী এন্টারপ্রাইজকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনৈতিকভাবে যেন বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি না করে এবং ক্রেতা স্পষ্টভাবে দাম দেখতে পান এমন জায়গায় মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

এদিকে নানামুখী পদক্ষেপের পরও পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। কিছু অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৌশলে প্রতিনিয়তই দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। হঠাৎ করে গত তিন-চার দিনে পেঁয়াজ কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা।

চট্টগ্রামে পেঁয়াজের আড়তে
অভিযান জরিমানা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে খাতুনগঞ্জের আড়তে অভিযান চালিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানের খবর পেয়ে আড়ত বন্ধ করে পালিয়ে যান বেশ কয়েকজন আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট। অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় দুই আড়তদারকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে ভ্রাম্যমান আদালতের এ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) তৌহিদুল ইসলাম। তার সাথে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরীন আকতার। অভিযানের পর পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। অভিযানের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মূল্যতালিকা অনুযায়ী পেঁয়াজের দাম রাখার জন্য সতর্ক করেন ম্যাজিস্ট্রেট।

আমদানি মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় মেসার্স আজমির ভান্ডার এবং শাহ আমানত ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আজমির ভান্ডারে ৪২ টাকা দরে কেনা মিয়ানমারের পেঁয়াজ পাইকারিতে ৭০ টাকায় এবং শাহ আমানতে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছিল।

অন্যান্য আড়তে ভারতীয় পুরনো পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৭৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ আসছে এমন অজুহাত তুলে গত দু’দিনে আবারও দাম বাড়ানো হয়। অথচ মিয়ানমারের আমদানি চালানের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ পেঁয়াজ কিছুটা নিম্নমানের, কিন্তু বিক্রয় অযোগ্য নয়। তারপরও সেটাকেই অজুহাত করেছে তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মিয়ানমার থেকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪২ টাকায় কেনা হয়েছে। গাড়িভাড়া এবং নিম্নমানের পেঁয়াজের দামও সমন্বয় করলে পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৫০-৫২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমদানিকারক, আড়তদারেরা এবং কমিশন এজেন্টরা পঁচা পেঁয়াজের অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটি এক ধরনের মূল্য কারসাজি।

কারসাজি করে মূল্যবৃদ্ধির সাথে জড়িত বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেলেও আড়তে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি বলে জানান তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মূল্য কারসাজিতে যারা জড়িত তাদের তালিকা র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে দেয়া হয়েছে। মূল্য কারসাজিরোধে মহানগর এবং জেলায় অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এর আগে গত ১ অক্টোবর খাতুনগঞ্জে অভিযানের সময় পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখার অঙ্গীকার করে মুচলেকা দিয়েছিলেন আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।

এদিকে অভিযানের পর খাতুনগঞ্জের পর আড়তে প্রতিকেজি মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। তবে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ