Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কট যেখানে নিত্যসঙ্গী

দিগরাজ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন

মনিরুল ইসলাম দুলু মংলা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

পুঞ্জিভুত নানা সঙ্কটে মুখ থুবড়ে পড়েছে মংলার দিগরাজে অবস্থিত মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের দুর্নীতি অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি বছরের পর বছর ধরে বিকলঙ্গ হয়ে পড়ে আছে। এ প্রতিষ্ঠানের বরফ কল, ফিস মিল ও ফিস নেট ফ্যাক্টরি শেষ কবে নাগাদ চালু হয়েছিল তাও কেউ জানেন না। বছরের পর বছর ধরে অকেজ হয়ে পড়ে থাকা কেয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ মরিচা পড়ে নষ্টসহ লাখ লাখ টাকা মূল্যের মেশিনারিজ লোপাট হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ তিনটি পুকুরের পানি বিক্রি, ফলজ, কৃষি বহিরাগতদের জমি লিজ ও ঘর ভাড়া দিয়ে এখন কাগজে-কলমে আর নামেই শুধু টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে মংলার দিগরাজ এলাকায় ৩০ একর জমির ওপর বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে। তৎকালীন সময়ে এ প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারি কোষাগারের প্রায় ২০ কোটি ব্যয় হয়। স্থাপিত হওয়ার পর এটি বেশ খ্যাতি অর্জন করে। তখন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা ও কর্মচারিসহ চুক্তি ভিত্তিক জনবলের সংখ্যা ছিল ২৫০ জন। অর এ প্রকল্প থেকে বরফ, ফিস মিল, নেট জাল, কীটনাশক উৎপাদন ও বিদেশে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানি করে লাভজনক হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি খুব অল্প সময়েই পরিচিত নেয়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি যৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। এ প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খুবই করুন। এ প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, একাউন্ট্যান্টসহ ৩৯টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মকর্তা ও কর্মচারির সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। একমাত্র বরফ কলটি দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, ফিস মিল ফ্যাক্টরি ও ফিস নেট ফ্যাক্টরি বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্ধ ৬টি নৌযান এখনও কাগজে কলমে রয়েছে। এ সব নৌযান কেউ চোখে দেখেছে এমন লোক খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।

কর্তৃপক্ষ জানান, কয়েক দশক আগেই ওই নৌযান সমূহের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে। কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারিদের বসবাসের জন্য ২০ কক্ষ বিশিষ্ট ৫ তলা ভবন একটি, আধাপাকা ১৫-১৬ কক্ষ বিশিষ্ট ৭ টি ভবন রয়েছে। লোকবল কম থাকায় আবাসিক ভবনগুলো ব্যবহৃত না হওয়ায় জরাজীর্ণ কুটিরে পরিণত হয়েছে। এমনকি ভবনের জানলা-দরজাও নেই, খসে পড়ছে প্লাস্টার ও ভবনের ইট। ইতোমধ্যে বন্ধ কল কারখানার লাখ লাখ টাকার মেশিনারিজ লোপাট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারি চাকরি থেকে বহিস্কার সহ হাজতবাসও খেটেছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৬ -৯৭ অর্থ বছরে কর্পোরেশনের ৫ তলা ভবনের ২০টি কক্ষ বিদ্যুৎ-পানিসহ মাসিক ৩ হাজার টাকা এবং আধাপাকা টিন শেডের ১৭টি কক্ষ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বহিরাগতদের আনাগোনা এবং মাদক ও জুয়াসহ এখানে চলছে নানা অনৈতিক কর্মকান্ড। আর এ নৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় বর্তমান প্রকল্প ম্যানেজারের ইন্দনে বহিরাগতদের হাতে প্রতিষ্ঠানের নৈশ্য প্রহরী ও মসজিদের ইমামকে শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারনে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মুখ খোলাস সাহস পান না অন্য কর্মচারিরা। অভিযোগ রয়েছে-প্রকল্পের অভ্যন্তরে ম্যানেজারের রয়েছে সক্রিয় লাঠিয়াল বাহিনী চক্র।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি পুকুর থেকে পানি বিক্রি, ঘর ভাড়া ও নারকেল-সুপারি ফলফলাদি এবং জমি ইজারার আয়ের উপর নির্ভর করে চলছে। এছাড়া প্রকল্পের ৩ টি পুকুরের পানি ওয়াটার প্লান্টের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতিমাসে গড়ে ১ লাখ টাকা ঘর ভাড়া আর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার পানি বিক্রি, ফলজ গাছের ইজারায় ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা আয় হয়। এছাড়া ৩টি পুকুরে শৈখিন মাছ শিকারীদের বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জনপ্রতি ১২শ’ টাকা ধরে টোকেন দেয়া হয়। প্রতিদিন অসংখ্য শৈখিন মাছ শিকারীদের ভীড় থাকে প্রকল্পের ৩টি পুকুরে। প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে আয়ের এ নগদ অর্থ কর্মকর্তার পকেটস্থসহ হরিলুট হয়ে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তবে কর্পোরেশনের ম্যানেজার নাইম অহমেদ রিয়াদ জানান, বর্তমানে অনেক অব্যবস্থাপনা দূর হয়েছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি লাভে রয়েছে দাবি করে তিনি জানান, পুকুরের পানি বিক্রি, ঘর ভাড়া আর ফলজ বাগানের ইজারা দিয়ে এখন আগের তুলনায় বেশ ভাল আয় হচ্ছে। গড়ে বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হলেও কর্পোরেশনের ভবন, রাস্তা সংস্কার ও পুকুরে মাছ অবমুক্ত, কর্মচারিদের বেতনসহ সকল খরচ মিটিয়ে গত অর্থ বছরে ৪৬ লাখ টাকা মুনাফা রয়েছে। অনিয়ম অব্যবস্থপনার বিষয় তিনি বলেন-এ সব আগে হয়েছে, তিনি আসার পর সংশোধনীসহ নজরদাড়ি বাড়িয়েছেন। প্রকল্পের অভ্যন্তরে নিয়ম ভঙ্গ করে থাকা বহিরাগতদের উচ্ছেদ করতে করার চেষ্টা করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ