Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর খবর

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ গ্রেফতার হওয়া সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ বলে দাবি করেছিল পুলিশ। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তি আসল জিসান নয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান এখন লন্ডনে। ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর আগেই তিনি দুবাই ছাড়েন। ইউরোপের একাধিক দেশ ঘুরে গত ১০ অক্টোবর তিনি আবার লন্ডনে যান।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুবাইয়ে যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই ব্যক্তিও তিন দিন আগে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দুবাই পুলিশের পাঠানো তথ্যের বরাত দিয়েই তারা গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে জিসান বলে শনাক্ত করেছিলেন।
গত ৩ অক্টোবর একটি প্রেস নোট দিয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এআইজি মহিউল ইসলাম সেসময় বলেন, দুবাই এনসিবি জিসানকে গ্রেফতারের পর আমাদের তা জানিয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আইপি ফোনে যোগাযোগ করি এবং ভেরিফাই করে নিশ্চিত হই গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিই জিসান। তাকে গ্রেফতার করার পর দুবাইয়ের জুডিশিয়াল কাস্টডিতে নেওয়া হয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা কথিত জিসানকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথাও বলেন। এমনকি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কথিত জিসানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দুবাই পুলিশের বরাত দিয়ে আমাদের এনসিবি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) জিসানের গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল। জামিনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে জিসানের গ্রেফতার হওয়ার দাবি ওঠার পর নির্ভরযোগ্য সূত্রে জিসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ওই সূত্রের বরাতে জানা গেছে, দুবাই পুলিশ যাকে গ্রেফতার করেছে, সে আসল জিসান নয়। জিসান সেসময় ইউরোপের একটি দেশে অবস্থান করছিলেন। নিজের গ্রেফতারের খবরে জিসান নির্ভরযোগ্য ওই সূত্রের সঙ্গে হাস্যরস করেন। পরদিন দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘প্রেস নোট’ দেওয়ার পর একই সূত্রের মাধ্যমে আবারও জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জিসান দাবি করেন, তার কাছে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট ছিল একথা সত্য। কিন্তু বেশ কয়েকবছর আগেই তিনি সেটি বাতিল করে দিয়ে অন্য একটি দেশের পাসপোর্ট বহন করছেন। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সেই দেশের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।

পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, চার দিন আগে দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তি জামিন পেয়েছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি বিভাগ টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি দুবাই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার পর তারাও দুবাইয়ে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি যে জিসান নন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হন। এজন্য এনসিবি বিভাগ থেকেও নতুন করে কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নব্বই দশকের শেষের দিকে সন্ত্রাসী হিসেবে জিসানের উত্থান ঘটে। কুমিল্লায় জন্ম নেওয়া জিসান ঢাকার রামপুরায় বেড়ে ওঠেন। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ যে ২৩ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে সেখানে জিসানের নাম ছিল। তার বিরুদ্ধে খুন-চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অনেক অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ ২০০৩ সালে মালিবাগে ডিবি পুলিশের দুই কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জিসানের নাম আসার পর তিনি দেশ ছাড়েন। এরপর থেকে বিদেশে অবস্থান করেই ঢাকার মতিঝিল-খিলগাঁও এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ঢাকায় তার অন্তত একডজন ক্যাডার রয়েছে; যারা তার নামে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি করে টাকার ভাগ তার কাছে পাঠাতো।

আইন-শৃংখলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জিসানকে ধরতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জিসান। সর্বশেষ ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগের দুই নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর জিসানের নাম আলোচনায় আসে। খালেদ ও জি কে শামীমের সঙ্গে একসময় জিসানের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। জিসানের ক্যাডার বাহিনীর ওপর ভর করেই ঢাকায় চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন খালেদ ও শামীম। কিন্তু বছরখানেক ধরে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। খালেদ ও শামীম নিজেরাই ক্যাডার বাহিনী তৈরি করে আধিপত্য বিস্তার করেন। এ নিয়ে ঢাকার আন্ডার-ওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হলে মাসখানেক আগে জিসানের দুই সহযোগীকে একাধিক অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ