পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবৈধ অস্ত্র জব্দ ও বিভিন্ন দেশে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং আইনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ও অস্ত্র আইনে শ্রীমঙ্গল থানায় পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-২ এর সিও লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ। গত বৃহস্পতিবার কাউন্সিলর মিজানকে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে এক বাসা থেকে আটক করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তিনি শ্রীমঙ্গলে তার এক বান্ধবীর বাসায় চার দিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র ও চার রাউন্ড গুলি জব্দ করে র্যাব। ঢাকা উত্তরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের (মোহাম্মদপুর) কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো কান্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
মিজানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় মোহাম্মদপুর থানার মানিলন্ডারিং আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সূত্র জানিয়েছে, শ্রীমঙ্গল সীমান্ত দিয়ে একাধিকবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কাউন্সিলর মিজান। পালানোর সময় ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন তিনি। শ্রীমঙ্গল থেকে আটকের পর মিজানকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে তার কার্যালয় ও বাসায় র্যাব অভিযান চালায়।
অভিযানে কাউন্সিলর কার্যালয়ে তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও তার বাসায় ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক এবং এক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর)-এর কাগজপত্র পায় র্যাব। সেই সঙ্গে আমেরিকার টেক্সাস ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দু’টি বাড়ি এবং আমেরিকার একটি বিলাসবহুল গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করে র্যাব।
সূত্র বলছে, স¤প্রতি রাজধানীতে চলমান শুদ্ধি অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানের নামও ছিল। ওই তালিকার সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে র্যাব। তদন্তে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট একাধিক অভিযোগের সত্যতা মেলে। এরপর তাকে ধরতে অভিযান শুরু করে র্যাব। তবে র্যাবের বিষয়টি টের পেয়ে যান তিনি। তাই গত মঙ্গলবার আত্মগোপনে চলে যান মিজান। তবে তাকে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব বিভাগ নজরদারি করতে থাকে।
র্যাবের একজন সদস্য বলেন, প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা তুলেছিলেন কাউন্সিলর মিজান। তবে তাকে আটকের সময় দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়। বাকি টাকা কোথায় রেখেছে সে বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি।
র্যাবের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের হাজারের অধিক দোকান থেকে তার নামে মাসিক চাঁদা তোলা হতো। যে টাকার পরিমাণ মাসে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মতো। এসব টাকা ছিল তার অন্যতম আয়ের উৎস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। কাউন্সিলর মিজান মানিলন্ডারিং করেছেন এর প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া তাকে আটকের সময় অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আরও নিশ্চিত হয়ে পরবর্তীতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মিজানের উত্থান
একটি সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ঝালকাঠি থেকে ঢাকায় এসে হোটেল বয় হিসেবে জীবিকা শুরু করেন হাবিবুর রহমান মিজান। অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয় ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির মাধ্যমে। এরপর চুরি, ছিনতাই, খুন-জখম, দখলদারিত্বসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ফ্রিডম পার্টির মাধ্যমে। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর মিজানুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান নাম পাল্টে হয়ে যান হাবিবুর রহমান মিজান। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিজান।
আওয়ামী লীগ এবং মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৫ পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর মিজান হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। বাড়ি দখল, জমি দখল, খুন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ অনেক অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, দলের কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করত না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মিজান কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তবে এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কোনো পদে মিজান নেই বলে জানা যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান সাংবাদিকদের বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যার যার নিজের কর্মকান্ডের ভার তাকেই বহন করতে হয়। হাবিবুর রহমান মিজান এক সময় মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকলেও তিনি এখন আর আওয়ামী লীগের কেউ নন। জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানীর খামারবাড়ি খেজুর বাগান এলাকায় ছিনতাই করতে গেলে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লালমাটিয়া মসজিদের পাশের পুকুরে নেমে পড়েন মিজান। যাতে পুলিশ কাছে আসতে না পারে সেজন্য কাপড় ছাড়াই উপরে উঠে আসেন। তার এ ধরনের কাজের জন্য পুলিশ তাকে ‘পাগলা’ আখ্যা দেয়। তখন থেকেই এলাকায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে পাগলা মিজান নামে।
অনেক অপরাধের নায়ক এই মিজান। তার নামে মোহাম্মদপুর থানায় ১৯৯৬ সালে ইউনূস হত্যা ও ২০১৬ সালে সাভার থানায় জোড়া হত্যা মামলা রয়েছে। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেফতার হন এই মিজান। মোহাম্মদপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবেই তাকে চেনে সবাই। এছাড়া ২০১৪ সালে মোহাম্মদপুরে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ ও তার স্ত্রী ময়িম বেগমকে প্রকাশ্যে অপমান করেন তিনি।
জমি দখলকে কেন্দ্র করে গত বছর একদল সন্ত্রাসী মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সংলগ্ন তুরাগ নদের ওপারে একটি রিয়েল এস্টেটের ছয় কর্মীকে গুলি এবং আরো ১৪ জনকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় সন্ত্রাসীরা জুয়েল নামের একজনকে হত্যা করে লাশ তুরাগে ফেলে দেয়। এ হত্যার নেপথ্যেও মিজানকে দায়ী করা হয়। মিজান শ্যামলী মাঠের পশ্চিম পাশের জমির একাংশ দখল করে বানিয়েছেন মার্কেট। সেখানে তিন শতাধিক ঘর তুলে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।