পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের দ্রুত বিচার আইনে বিচার এবং বুয়েটে ছাত্রদের সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১০ দফা দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম নিজ ক্ষমতাবলে গতকাল এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে বুয়েটের হলগুলোর র্যাগিংয়ের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের নির্যাতন বন্ধ এবং আবরার হত্যা মামলায় ১৯ আসামীকে বহিস্কার করা হয়েছে। তদন্তে আসামীরা দোষী হলে তাদের স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করা হবে বলেও জানানো হয়। আবরার হত্যাকান্ডের পর ৩৬ ঘন্টা ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ভিসি। অবশ্য ছাত্ররা জানিয়েছেন সিদ্ধান্ত কার্যকর না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এর আগে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে না, বুয়েটের ভিসি চাইলে তার ক্ষমতাবলে সেটা করতে পারেন। উল্লেখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ‘কোটা বিরোধী’ আন্দোলন দমন করা হয়েছে। আর ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ/ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ’ শ্লোগান সম্বলিত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সরকার সব দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পরবর্তীতে ওইসব দাবির অধিকাংশ কার্যকর করা হয়নি।
ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনার পর ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার নিজ ক্ষমতায় বুয়েটের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি। এখন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে এবং মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে বুয়েট থেকে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে।
আবরার হত্যার সাথে জড়িত এজহারভুক্ত ১৯ আসামীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে অভিযুক্ত ছাত্রদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যায় আমরা মর্মাহত। সে তোমাদের ভাই, আমার সন্তান। আমি তোমাদের ১০ দফা নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আবরারের খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আমাদের আশ^স্ত করা হয়েছে। বুয়েট ভিসি বলেন, ‘আজ থেকে বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো। কেউ গোপনে রাজনীতি করলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এ ব্যপারে আমরা সরকারের সাথে কথা বলেছি। বুয়েটে ছাত্র সংগঠনগুলোর কমিটি বিলুপ্ত করা হবে।’ গতকাল শুক্রবার আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মত বিক্ষোভ করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ১০ দফা দাবিতে সকাল সাড়ে ১০টায় বুয়েটের শহীদ মিনার চত্ত্বরে সমবেত হলে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। দাবি আদায়ে বিকাল ৫টায় বুয়েট অডিটোরিয়ামে ভিসি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়। এরআগে দাবি মানা না হলে বুয়েটের সব ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় শিক্ষার্থীরা।
১০ দাবির মধ্যে আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ এবং ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহন করা, দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি রয়েছে।
গতকাল আন্দোলনকারীদের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো, মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দুপুরে প্রতিবাদী পথনাটক ও গ্রাফিতি আঁকা। এছাড়া বুয়েট ডিবেটিং ক্লাবের আয়োজনে একটি প্রতীকী বিতর্কের আয়োজন করা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে সবাই একসঙ্গে বুয়েট অডিটোরিয়ামে গিয়ে ভিসির সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন। ভিসির সঙ্গে ছাত্রদের বৈঠকে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইয়াজ হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাসুদসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিসি শিক্ষার্থীদের সাথে আয়োচনায় প্রথমে গণমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতি দিতে রাজি না হলেও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরাসরি সম্প্রচার না করার শর্তে রাজি হন। মূলত গত কয়েকদিন ভিসির সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আন্দোলনকারীরা। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট তালাবদ্ধ করে পকেট গেট দিয়ে ছাত্রদের আইডি কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষ প্রবেশ করতে দেয়।
ছাত্রলীগে অনিহা
এদিকে বুয়েট অডিটোরিয়ামে ভিসি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনায় ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীকে নেয়া হয়নি। ভিসির সঙ্গে বৈঠকের আগে বেলা আড়াইটার দিকে বুয়েটের বিভিন্ন আবাসিক হলে আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানা যায়, আবাসিক হলগুলোর প্রতিনিধিরা সবাই একমত হয়েছেন যে, ‘ভিসির সাথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত বৈঠকে ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মী থাকতে পারবেন না।’ অবশ্য বৈঠকে ছাত্রলীগকে না রাখার প্রস্তাবে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করলেও শেষ পর্যন্ত ভিসির সঙ্গে মিটিংয়ে ছাত্রলীগকে না রাখার সিদ্ধাস্ত গ্রহণ করা হয়।
বুয়েটের শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত রোববার রাতে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। পৈচাশিক কায়দায় পিটিয়ে হত্যার ই দৃশ ফেসবুকে ভাইরাল হলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় আবরার হত্যাকান্ড খবরের শিরোনাম হয়। পুলিশ তৎপর হয়ে আসামীদের গ্রেফতারের পর তাদের মুখ থেকে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বণর্না বেরিয়ে আসে। কিন্তু ভিসি ক্যাম্পানে না এসে পর্দার আড়ালে চলে যান। ছাত্ররা হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন। আবরার হত্যাকান্ডের পর ‘দ্রæত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য’ সমালোচনার মুখে থাকা ভিসি সাইফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সামনে এসে তোপের মুখে পড়েন। সেদিন তাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তালাবন্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। পরদিন কুষ্টিয়ায় আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ঢাকায় ফিরে আসতে হয় তাকে। দায়িত্বে ‘ব্যর্থতার জন্য’ ইতোমধ্যে ভিসির পদত্যাগ দাবি করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভিসির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে ভিসির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক এবং ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে ছাত্ররা আন্দোলন থেকে হলে ফিরে গেছেন।
হলে হলে অভিযান
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে হলে অভিযান চালাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বুয়েটের ছাত্র কল্যাণ দফতরের পরিচালক (ডিএসডবিøউ) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি জানান বুয়েটের সব হলে পাঁচজন করে সিনিয়র শিক্ষক নিয়ে অভিযান চালাবে বুয়েট প্রশাসন।
কার বিরুদ্ধে বা কোন বিষয়ে এই অভিযান? জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিটি হলেই বহিরাগতরা থাকে, সাবেক শিক্ষার্থী থাকে, তাদের বের করে দেয়া হবে। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্রশস্ত্র যদি থাকে তা উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। পাস করেও ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকছেন হলে। তিন জনে রুমে একজন থাকা ও রাজনৈতিকভাবে দখল করা রুমের দখল মুক্ত করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়!
এদিকে বাংলাদেশ বুয়েট প্রশাসনের দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা ও ১৯ জনকে সাময়িক বহিষ্কারের আশ্বাসের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, হলগুলোতে এখনও দলীয় নেতাকর্মী রয়েছে। ১৯ জন সাময়িক বহিষ্কার হলেও তাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়নি। এছাড়া সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা হলেও আবারও যে শুরু হবে না তার নিশ্চয়তা তারা পাচ্ছেন না। এ কারণে আগামী ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষে মত দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ক্যাম্পাস এখনও অনিরাপদ। তাই ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুনদের বিপদের মুখে ফেলতে চান না তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় পরীক্ষা নিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিএসডবিøউ পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি জানান, স্থায়ী বহিষ্কার করা হলে পরে আদালতে হেরে যেতে হয়। এবার যাতে হেরে যেতে না হয়, সেজন্য আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি করেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।
সুত্র জানান, ১০ দফার মধ্যে যেগুলো প্রশাসনের এখতিয়ারে রয়েছে সেগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে। ভর্তি পরীক্ষা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে থাকায় সেটিও বন্ধ থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।