Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিযানে সর্বত্র স্বস্তি

সারা দেশের ছাত্রলীগ-যুবলীগের ‘মনস্টার’ লাপাত্তা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দুর্নীতি ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অনিয়ন এখন ওপেন সিক্রেট। একটানা প্রায় ১১ বছর ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো কার্যত ফ্যাংকেস্টাইনের দানবে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা এক একটা ‘মনস্টার’। সহযোগী এই সংগঠনগুরোর কারণে সরকারকে পদে পদে পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বিভিন্ন সময় এমপি-মন্ত্রী ও বিতর্কিত নেতাদের সতর্ক করেছিলেন। তাকে কাজ হয়নি। এখন বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। প্রধামন্ত্রীর নির্দেশের পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানে শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্রতিটি সেক্টরে প্রায় শুদ্ধি অভিযানের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইনকিলাবের প্রতিনিধিরা যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তাতে শুদ্ধি অভিযানে স্বস্তির চিত্রই উঠে এসেছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অভিযানে যাতে সাধারণ মানুষ হয়নারীর শিকার না হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে দিকে দৃষ্টি রাখবে।

দুর্নীতিবাজ, ক্যাসিনো জুয়াড়ি, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, কিশোর গ্যাং, দখলদার, নদীখেকো, মাদক ব্যবসায়ীসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় সর্বত্র অনেকটা স্বস্তি বিরাজ করছে। এ অভিযানের ফলে ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই খুশি। চাঁদাবাজ দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি ফুটপাথ দখল মুক্ত এবং বিভিন্ন স্থানে সরকারি জায়গা অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযানও সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। অভিযানে ইতোমধ্যে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ আরও কয়েকজন চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও ক্যাসিনোর সাথে জড়িত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবলীগের সভাপতি কার্যত আত্মগোপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজদের কোনো ছাড় নেই। দুর্নীতিবাজ-চাঁদাবাজ যেই হোক, যে দলেরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ কথায় জনগণ আরও আশান্বিত হয়েছেন। কারণ দেশের মানুষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা তিনি করেন। তাই এবার তিনি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তা অব্যাহত থাকলে এবং সমাজে শান্তি বিরাজ করবে বলেই সবাই বিশ্বাস করেন।

এ অভিযানের ফলে সারাদেশে ব্যবসা, পরিবহনসহ আরও অন্যান্য খাতে এরই মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত ১৮ সেপ্টম্বর যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে এ অভিযান শুরু হয়েছে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদা না দিয়ে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন। বাস-টেম্পু চালকরাও বাড়তি চাঁদা ছাড়া অনেকটা নির্বিঘেœ তাদের গাড়ি চালাতে পারছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ফলে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠা ছোটখাট ক্লাবের জুয়া বা মাদকের আড্ডাও বন্ধ রয়েছে। কিশোর গ্যাং এর আতঙ্কও অনেকটা কমে গেছে। রাজনৈতিক দলের ছত্র ছায়ায় যে সব নেতারা চাঁদাবাজি বা মাদক ব্যবসার প্রয়োজনে কিশোরদের ব্যবহার করতো তারই এখন আত্মগোপনে। কেউ গ্রেফতার হয়েছেন কেউ গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোনো কোনো স্থানে কিশোর অপরাধীরাও গ্রেফতার হচ্ছে। এ অবস্থায় বড় ভাইদের শেল্টারে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংও এখন নীরব হয়ে পড়েছে। গডফাদার বা শেল্টার দাতারাই যখন গ্রেফতার হচ্ছে তখন তারা ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।

দুর্নীতি-চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাথ দখলমুক্ত, সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করারও উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এ অভিযানও সবার কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। ফুটপাথ দখল মুক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষ যানজট এড়িয়ে অনেকটা স্বস্তি ও শান্তিতে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। এ ছাড়া ফুটপাথে দোকান না থাকায় মার্কেটের দোকানের বিক্রি ভালো হচ্ছে। এ বিষয়ে মৌচাক-আনারকলি মার্কেটের ব্যবসায়ী আমিনুল হক বলেন, সরকারের চলমান অভিযানকে আমরা স্বাগত জানাই। এ অভিযান আরও জোরালো হবে বলে আমরা আশা করি। অভিযানের ফলে চাঁদাবাজি কমেছে। ফুটপাথ দখলমুক্ত এখনো পুরোপুরি হয়নি। এটা পুরো দখল মুক্ত হলে মার্কেটের দোকানিরা আরও লাভবান হবে।

খিলগাঁও শাহজাহানপুর এলাকায় রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে উঠেছিল ক্লাব, ছাত্রলীগের অফিস এবং বিভিন্ন দোকান পাট। গত কয়েকদিনের অভিযানে এসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে এলাকাবাসী এবং খিলগাঁও রেলগেইট বাজারের ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত খুশি। বাজারের বনিক স্টোরের মালিক তপন বনিক বলেন, রেলওয়ের জায়গা দখল করে মার্কেটের চারপাশে যেভাবে অবৈধ দোকানপাট চলছিলো তাতে ভেতরের দোকানীরা ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল। এবার তাদের উচ্ছেদ করায় মার্কেটের প্রকৃত ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন।

সরকারের চলমান অভিযান সম্পর্কে আমাদের যশোর ব্যুরো প্রধান মিজানুর রহমান তোতা জানান, ভৈরব নদ দখলমুক্ত, সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, র‌্যাব, পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মাদক ও কিশোর গ্যাং-এর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানে যশোর শহরের চেহারা পাল্টে গেছে। সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের বক্তব্য অভিযান যেন অব্যাহত থাকে। তা না হলে আবার জঞ্জালে ভরে যাবে। বাসা বাঁধবে নানা বিশৃঙ্খলা। জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন শিকদার জানান, শুধু মাদক ও কিশোর গ্যাং নয় সব ধরণের অপরাধী, জুয়াড়ি, জঙ্গি, চোরাচালান, ছিনতাইকারী, মাসলম্যান ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান শফিউল আলম জানান, ক্যাসিনো জুয়াড়ি মাদকাসক্ত চাঁদাবাজ গডফাদার বিরোধী চলমান অভিযানে স্বস্তি ব্যক্ত করছেন চট্টগ্রামবাসী। সর্বত্র প্রকাশ পাচ্ছে জোরালো নৈতিক সমর্থন। জুয়ার ক্লাবে ক্লাবে, জুয়াড়িদের বাড়ি, আখড়ায় এবং জুয়াড়ি কালোটাকার কুমিরদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বলিষ্ঠ, সৎসাহসী এ অভিযানের প্রশংসা উচ্চারিত হচ্ছে সবশ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে। সবাই বলছেন, এই শুদ্ধি অভিযান অনেক আগেই দরকার ছিল। অভিযান আরও কঠোর হতে হবে। পিছু হটলে চলবে না। রুই-কাতলা অপরাধী ও গডফাদাররা যাতে কেউ পার পেয়ে না যায়। এখনও অধরা রয়ে গেছে দুষ্টচক্রের অনেকেই।

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, লেনদেন এবং হরেক উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকান্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে চলমান এ অভিযানের ইতিবাচক প্রভাব। কেননা এসব খাত উপখাত থেকে সরকার দলীয় কিংবা নামধারী গডফাদার ও ক্যাডাররা ইতোপূর্বে হামলা-মামলা, অস্ত্র ও অপহরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে এমনকি পুলিশসহ প্রশাসনের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্তাকে ব্যবহার করে অবাধে ভাগ-বখরা বসাতো। এ মুহূর্তে চট্টগ্রামের সৎ, প্রকৃত ও ঐতিহ্যবাহী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিগণ স্বস্তিতে আছেন। দৈনিক লুটে নিতো কোটি কোটি টাকা। এখন সেই উৎপাতের কথাগুলো আপাতত শোনা যায় না। চিহ্নিত জুয়াড়ি ও গডফাদাররা গা-ঢাকা দিয়ে আছে। ওরা পারছে না পুলিশ কিংবা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করতে। ক্লাবে ক্লাবে দরজায় তালা অথবা ফাঁকা। জুয়ার হাট ভাঙা। ভেঙে গেছে জুয়াড়ি গডফাদারদের কোমর। তবে সুযোগ ফেলেই আবার ছোবল মারবে। চট্টগ্রামেও এহেন দুষ্টক্ষত অনেক রয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বললেন, দল এসব আপদ বোঝার দায় আর টানবে না। কেননা এ অভিযানের মধ্যদিয়েই দলের টপ টু বটম শেখ হাসিনার স্পষ্ট একটা বার্তা পৌঁছে গেছে- ‘যথেষ্ট বাড়াবাড়ি হয়েছে। আর নয়। এবার থামাও’। চট্টগ্রাম নগরের অপর এক নেতা স¤প্রতি দলীয় সভায় বলেন, ক্যাসিনো ক্লাব জুয়ার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সিদ্ধান্তে চলমান অভিযানের সুফলের কারণে আজ স্ত্রী ফিরে পেয়েছেন স্বামীদের (জুয়াড়ি)। সন্তানরা ফিরে পেয়েছে পিতাকে। সামগ্রিকভাবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চলমান অভিযানে সন্তুষ্ট। তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই একমাত্র পারেন। এ প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ক্যাসিনো জুয়াড়ি অসৎচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ সমর্থন আছে। অপরাধী যতই শক্তিশালী হোক না কেন যাতে ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে পার পেয়ে না যায়। আমরা সুষ্ঠু, নিরুপদ্রব পরিবেশে এবং সততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প পরিচালনা করতে চাই।
রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু জানান, ক্যাসিনোর জুয়ার আসরে হানা দেবার প্রভাব পড়েছে রাজশাহী মহানগরীতে। রাজশাহী স্টেডিয়ামে বসত নিয়মিত হাউজির আসর। সেই আসর বন্ধ হয়েগেছে। এ হাউজির আসরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও কম ঘটেনি। এখানকার টাকার ভাগ যেত অনেক স্থানে। সেটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ক্লাবের আড়ালে বসতো তাস খেলার নামে জুয়া আর মাদক সেবনের আসর। সেগুলো এখন প্রায় বন্ধ। বিষয়গুলো ওপেন সিক্রেট এখন চলছে গোপনে। ক্রিকেট নিয়ে বাজী ধরার খেলা প্রকাশ্যে নেই। এসব জুয়ার আসরে সব সময় প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ মদদ থাকতো ক্ষমতাসীন দলের। এবারো তার ব্যতিক্রম ছিল না। হঠাৎ করে এসবের বিরুদ্ধে সরকার তৎপর হওয়া। ডাক সাইটে যুবলীগ নেতার ধরা খাওয়ায় খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারের কারণে একটু হোঁচট খেয়েছে।

মহল্লায় মহল্লায় গড়ে ওঠা রাজনৈতিক বড় ভাইদের আশীর্বাদ পুষ্টরা একটু থেমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যাদের নিত্য কাজ ছিল চাঁদাবাজি দখলবাজি আর মাদক নিয়ে। তারা খানিকটা চেপে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। রাজনৈতিক বড় ভাইরাও সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। নিজেদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগে একে অপরকে সাইজ করে কিনা এনিয়ে রয়েছে টেনশানে। গত কয়েক বছরে ক্ষমতার সুবাদে যারা জিরো থেকে হিরো হয়েছেন তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। কিছুক্ষণ আগেও তাদের দাপুটেপনা চলা ফেরায় এখন খানিকটা সংযত ভাব। সময়ের সুযোগ ব্যবহার করার জন্য অনেক বেনামে গোপন তথ্য পাঠাচ্ছে দুর্নীতি দমন বিভাগসহ হাইকমান্ডে। গণমাধ্যমের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন জিরো থেকে হিরো হওয়াদের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরার জন্য। যেন এখন ওরাই ঘরের শত্রু বিভিষনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বড় ভাইদের সতর্কতা দেখে অন্যরা বেশ সতর্ক। কিশোর গ্যাং যুব গ্যাংয়ের তৎপরতায় ক্ষণিকের জন্য লাগাম পড়েছে। মাদক সম্রাটরাও বেশ খানিকটা চুপ। অনেকেই এলাকায় নেই। তাদের অনেকেই বলছেন এখন পরিস্থিতি ভালো না। কদিন পর আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। আবার অনেকের সংশয় অভিযান নিয়ে। চলমান থাকবে না থামবে। বড়রা ধরা পড়বে কি না। কারো ভাষায় আইওয়াস। আবার অনেকে দুর্নীতি বাজদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি আস্থাশীল।

বগুড়ার ব্যুরো প্রধান মহসিন রাজু জানান, ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ও এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পক্ষে জনমত লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি খোলা মেলাভাবেই সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ কবীর আহম্মেদ মিঠু এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় ইনকিলাবকে বলেন, এ ধরনের অভিযান শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ রাখা যথেষ্ট নয় এটা বগুড়াতেও শুরু করতে হবে। বিশেষ করে পরিবহন খাতের চাঁদাবাজি এখন জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দেশের পরিবহন খাতকে সব ধরনের চাঁদাবাজির হাত থেকে বাঁচানো গেলে, পণ্য ও যাত্রী ভাড়া কমবে, গতিশীল হয়ে উঠবে অর্থনীতির চাকা।

সিলেট ব্যুরো প্রধান ফয়সাল আমীন জানান, সরকারের চলমান অভিযান সর্বমহলে প্রশংসিত হলেও এখন পর্যন্ত রাঘব বোয়ালরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। তারপরও জনগণ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রাখতে চায়। বড় বড় দুর্নীতিবাজরাও এবার ধরা পড়বে এমনটা তারা দেখতে চান। সু-শাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সিলেট সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সংগঠক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতিক সিন্ডিকেট নির্ভর দখলদারীতে আস্থার সকল স্থান এখন ইমেজ সংকটে। রাজধানীতে ক্যাসিনোসহ অনিয়মমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হ্ওয়ায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে তাদের আশপাশের দুর্বৃত্ত, দখলবাজ, বালু খেকো পাথরখেকো, ফুটপাথ দখলবাজ চক্রের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযান পরিচালিত হবে। তবে সময়ক্ষেপণ হলে জনগণ গোটা বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ধারণা করবে।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার সাদিক মামুন জানান, ক্যাসিনোসহ মাদক, সন্ত্রাস, পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে রাজধানীতে অভিযান শুরুর প্রভাব কুমিল্লাতেও পড়েছে। কুমিল্লায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকায় অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমে এসেছে। এতে কুমিল্লার ব্যবসায়ি, রাজনীতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সাধারণ মানুষ বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

কুমিল্লা দোকান মালিক সমিতির সাধার সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন বলেন, চলমান অভিযানে ব্যবসায়ি সমাজ অত্যন্ত খুশি। পর্যায়ক্রমে এ অভিযান অব্যাহত থাকলে সমাজের সব জঞ্জাল পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের কারণে কুমিল্লায় হাউজিসহ অভিজাত ক্লাবে জুয়া, মদের আসর বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার কিশোর গ্যাংগুলোকেও এখন আর আড্ডায় দেখা যায় যাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংস্থাতেও অভিযান চলছে। সবমিলে সরকারের চলমান অভিযান কুমিল্লাবাসীকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ কুমিল্লা দেখার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

 



 

Show all comments
  • ফয়েজুল ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:২৯ এএম says : 1
    ভারতের কথাই দেশ চলে অতএব দেশে শান্তি আসবেনা
    Total Reply(0) Reply
  • Rukunuzzaman Sheikh Babu ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
    জয় হোক জননেত্রী শেখ হাসিনার জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Badshah Faisal ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহকে ভয় না করলে স্বাধীন হওয়া যায় না। অন্যকে ভয় পেলে ১০০% পরাধীন থাকবে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথ দেখান।
    Total Reply(0) Reply
  • সায়ীদ আরমানী ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
    দুদকের অনেকেই দুর্নীতিতে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত , তার দুর্নীতি দমন করার জন্য আর একটি দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam Chowdhury ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    দুর্নীতি বিরোধী অভিযান এগিয়ে নিতে সরকারের অন্যান্য বিভাগ সক্রিয় থাকলেও দুদক এর নিষ্ক্রিয়তা হতাশাজনক।
    Total Reply(0) Reply
  • Rokibul Hasan ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সাথে সাথে ন্যায় নীতিতে অটল থাকতে হবে, রাজনৈতিক কালো ছায়া থাকা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Look Around ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৪ এএম says : 0
    দুর্নীতি? বাংলাদেশে দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে সরকার কে, প্রশাসন থেকে শুরু করে এমপি মন্ত্রী পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে হবে, তাহলে দেশ আরো উন্নতি ও দুর্নীতি মুক্ত হবে, ইনশাআল্লাহ ৷
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Mizanur Rahman ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৫ এএম says : 0
    আমি মনে করি এই বাংলাদেশের একজন মানুষ ৬০% স্বাধিন আর প্রায় ১৭ কোটি মানুষ কারো না কারো কাছে জিম্মি....
    Total Reply(0) Reply
  • নিশা চর ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বলিষ্ঠ ভূমিকায় আমরা দেশবাসী খুশি। আশা করবো এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • তাসলিমা বেগম ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৫৬ এএম says : 0
    এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে।
    Total Reply(0) Reply
  • ash ১২ অক্টোবর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
    SATRO RAJNITI BONDHO KORA WICHITH ! WORLD ER KONO DESH E BANGLADESHER MOTO SATRO RAJNITI NAI ! BANGLADESHER SATRO RAJNITI DESHER MEDHA KE DHONGSHO KORE DICHE, SATRO RAJNITIR NAME CHADABAJI, DORSHON , KHUN GUM , MADOK AI HOCHE, HOLE HOLE MOD,JUA, SATRI DORSHON, TORCHUR SALE BANANO HOCHE, DESH KE DHONSHO KORE DICHE AI SATRO RAJNITI ! ONNANNO DESHER MOTO KONO SATRO KONO DOL KE POSONDO KORLLE OBOSHO E SUPPORT KORTE PARBE TAI BOLE BNAGLADESHER MOTO SATRO LIG , SATRO DOL, SATRO SHIBIR NAI ! BANGLADESHER SATRO RAJNITI SATRODER GUNDA RAJNITITE PORINOTO KORE, ETE DESHER MEDHA DHONGSHO HOE JACHE
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ