পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কুমিল্লার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম রসমালাই। স্বাদে, গন্ধে ও মানে শতভাগ খাঁটি হওয়ায় দেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ ভরসা করে আসছে যুগ যুগ ধরে।
জানা যায়, উনিশ শতকের প্রথম দিকে কুমিল্লার ঘোষ স¤প্রদায় দুধ ঘন করে ক্ষীর বানিয়ে তাতে ছোট আকারের শুকনো ভোগ বা রসগোল্লা ভিজিয়ে যে মিষ্টান্ন তৈরি করে তা ক্ষীরভোগ নামে পরিচিতি পায়। ক্রমান্বয়ে এই ক্ষীরভোগ রসমালাই নামে পরিচিত হয়ে উঠে। খনিন্দ্র সেন ও মণিন্দ্র সেন নামের দুই ভাই রসমালাই তৈরি করে বিক্রি শুরু করলে তা খুব অল্প দিনের মধ্যে রসমালাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। যেকোনো আচার-অনুষ্ঠান এবং মিষ্টি প্রিয় মানুষের কাছে রসমালাই এক প্রিয় নাম হয়ে ওঠে। প্রতি কেজি রসমালাইয়ের বিক্রি হয় ২৬০ টাকা। তাও লাইন ধরে কিনতে হয়।
কুমিল্লায় কোনো পর্যটক বা অতিথি এলে রসমালাইয়ের স্বাদ নেননি এমন ঘটনা বিরল। তবে আসল রসমালাইয়ের স্বাদ পেতে চাইলে পেতে হবে আসল জিনিস। কারণ কুমিল্লা শহরকে ঘিরে নকল রসমালাইয়ের অগণিত দোকান গড়ে ওঠায় আসল যে রসমালাই তার স্বাদ অনেকেই পান না। কুমিল্লার বিখ্যাত এই রসমলাই পেতে যেতে হবে কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরের কুমিল্লা মাতৃভান্ডার নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। এইখান থেকেই অমৃত এই রসমলাই যাত্রা শুরু করেছিল।
জানা গেছে, সুনাম ধরে রাখতে অত্যন্ত সতর্কতা ও পরিবেশ সম্মতভাবে রসমালাই উৎপাদন করা হয়। রাঁধুনি ও ভোজন রসিকদের কাছে এর স্বাদ আলাদা, ঘ্রাণও আলাদা। এ সম্পর্কে কুমিল্লার বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, এই পদ্ধতি তো সবাই জানে। তবু আসল মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের স্বাদ কেন আলাদা, সেটাই তো রহস্য! এই স্বাদ বলে বোঝানোর মতো না। নকল মাতৃভান্ডারের ক্ষীরের স্বাদ কড়া, কিন্তু এই ক্ষীরটা হালকা মিষ্টি।
১৯৩০ সালে বর্তমান সত্বাধিকারী শঙ্কর সেনগুপ্তের বাবা ফণীন্দ্র সেন এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে রসমালাইয়ের জন্য মাতৃভান্ডারের নাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের অঞ্চল এমনকি সারা দেশে। এখন সেই সুনামকে ব্যবহার করে কুমিল্লার যত্রতত্র মাতৃভান্ডার নামে প্রচুর দোকান গড়ে ওঠার ফলে ক্রেতারা যে বিভ্রান্ত বা প্রতারিত হচ্ছেন, এ কথা স্বীকার করলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাণিজ্য-সনদ পরিদর্শক (ট্রেড লাইসেন্স ইন্সপেক্টর) আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, আসল মাতৃভান্ডারের মালিক যদি একটু সক্রিয় হতেন, অভিযোগ জানাতেন, তাহলে এটা বন্ধ করা সম্ভব হতো।’ আতিকুর রহমান গত ছয় মাসে কুমিল্লা শহরে মাতৃভান্ডার নামে কোনো দোকানের লাইসেন্স দেননি বলেও জানালেন। তবে কুমিল্লার বাসিন্দারা কিন্তু আসল মাতৃভান্ডার টিকে ঠিকই চেনেন।
মাতৃভান্ডারের ব্যবস্থাপক অনুপম দাস জানান, মাতৃভান্ডার নামে এ মিষ্টি দোকান প্রতিষ্ঠিার পর তাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তাদের দোকানে উত্তম দে এবং ক্ষিতিষ মোদক নামে দুই জন অভিজ্ঞ কারিগর এই রসমালাই তৈরি করছেন। তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্মের কারিগররা রসমালাই তৈরি শিখে নিচ্ছেন।
কারিগর ক্ষিতিষ মোদক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের ঐতিহ্যবাহী রসমালাই তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। একটি পাতিলে বা কড়াইয়ে একমন দুধ দুই ঘন্টা ধরে জ্বাল দিলে তা ঘন হয়ে ১৩/১৪ কেজি ক্ষীর তৈরি হয়। এর দুধ থেকে পাওয়া ছানার সাথে কিছু ময়দা দিয়ে খামির তৈরি করে বানানো হয় ছোট ছোট গুলি বা রসগোল্লা। এক কেজি ছানাতে এক ছটাক পরিমাণ ময়দা দিয়ে এ গুলি বানানো যায়।
মাতৃভান্ডারের কারিগর উত্তম দে জানান, এক মণ দুধ দিয়ে ঘন ক্ষীর তৈরি করে তাতে ছোট গুটি বা শুকনো রসগোল্লা দিয়ে ১৪ কেজির মতো রসমালাই বানানো যায়।
ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের উদ্ভাবক মাতৃভান্ডারের নামের সামনে কুমিল্লা, কুমিল্লার, আদি, খাঁটি, মা, নিউ ইত্যাদি নাম ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে আলেখারচর পর্যন্ত চোখে পড়বে অসংখ্য মিষ্টির দোকান। সবারই দাবি তাদের দোকানে কুমিল্লার আসল রসমালাই পাওয়া যায়। এ রকম অন্তত ২০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে মহাসড়কের পাশে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।