পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতকে রাডার স্থাপন, গ্যাস রফতানি, ফেনী নদীর পানি দেয়া, বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে যে চুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন সেটিকে দেশের স্বার্থবিরোধী বলে দাবি করেছে বিএনপি। অবিলম্বে এসব চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। বিএনপি নেতারা বলেন, আমরা প্রতিবেশী ভারতের সাথে সমতাভিত্তিক সুসস্পর্ক চাই। কিন্তু এই সরকার যা করছে তাতে দেয়া-নেয়ার বিষয় নেই- আছে শুধু দেয়ার। এমনকি ভারতকে গ্যাস-পানি দেয়ার বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন ‘ঠাকুর’ পুরস্কার। দেশের স্বার্থবিরোধী এমন অসম চুক্তির অধিকার জনগণ সরকারকে দেয়নি। কাজেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সা¤প্রতিক সফরের সময় স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই এবং দেশের স্বার্থহানিকর সকল চুক্তি বাতিল চাই।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ার কারণে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয় এমন একটি শক্তি যখন কৌশলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তখন তার পরিণতি দেশ ও দেশের জনগণের জন্য কতটা ভয়াবহ ও ক্ষতিকারক হয় তার সাম্প্রতিক প্রমাণ প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের ফলাফল। সফরকালে স্বাক্ষরিত চুক্তির মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরের জনগণের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর নির্বিঘেœ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে যৌথ পর্যবেক্ষণের জন্য রাডার বসানোর অনুমতি দিয়েছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ থেকে এলপিজি গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে। অথচ বহু বছর ধরে তিস্তা এবং ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ব্যাপারে শুধুই আলোচনা করে চলেছে। এবারও শুধু আশ্বাসই পেয়েছে- কোনো স্পষ্ট নিশ্চয়তা পায়নি। আসামের নাগরিকপঞ্জির প্রেক্ষিতে কয়েক লাখ আসামবাসীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আসাম রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্পষ্ট হুমকির মুখে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির উল্লেখ নেই। ভারতে পাটজাত দ্রব্যসহ অন্যান্যে পণ্য রফতানির ওপর আরোপিত অন্যায় বাধা অপসারণে নিশ্চয়তা আদায় করতেও বাংলাদেশ সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সফরের আগে সরকার যথাযথ প্রস্তুতি নেয়নি, দেশের জনগণকে কিছু জানতেও দেয়নি। এসব নিজ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে শক্তিমান প্রতিবেশীকে খুশি করে ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার সাময়িক ও ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র।
ইতোমধ্যেই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী এসব চুক্তির প্রতিবাদে দেশবাসী ফুঁসে উঠেছে। সচেতন ছাত্রসমাজ আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছে।
প্রতিবাদী পোস্ট দেয়ায় বুয়েট ছাত্র আবরারকে খুন করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সমালোচনায় ভীত সরকার তার দলীয় লাঠিয়ালদের দিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেয়ার জন্য বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে খুন করেছে। কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকান্ড আন্দোলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে মাত্র- কাউকে ভীত করতে পারেনি। আজ গোটা দেশের জনগণ এই সরকারকে দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জনকারী এক ক্ষমতালিপ্সু শাসক বলে মনে করে। জনগণ মহান মুক্তিযুদ্ধের সোনালি ফসল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এই দূরাচারী শাসকের পতন চায়।
ড. মোশাররফ বলেন, ফেনী নদী আগে বাংলাদেশেরই নদী ছিল- যৌথ নদী ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকার আরো ৬টি যৌথ নদীর সাথে ফেনী নদীর নাম সংযুক্ত করে একসাথে এসব নদীর পানি বণ্টন দিয়ে আলোচনায় রাজি হয়। আমাদের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, এই পানি না দিলে সাব্রুম শহর কারবালা হয়ে যেত। কারবালা কারোরই কাম্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের তো প্রথমে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ দেখার কথা। ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল খরাক্রান্ত হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের আহাজারি তাকে স্পর্শ করেনি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ ও লাখো মানুষের আর্তনাদ তার কানে পৌঁছে না। ফেনী নদীতে শুকনো মওসুমে পানির অভাবে চাষাবাদের ক্ষতি, মুহুরী প্রকল্প অকার্যকর হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখেও তিনি ও তার সরকার সাব্রুমকে কারবালা হতে না দিতে যতটা উদ্যোগী- নিজের দেশের জনগণের আহাজারি, আর্তনাদ ও সর্বনাশ তাদের কাছে ততই মূল্যহীন। এটা কোনো দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কিংবা সরকারের অবস্থান হতে পারে না। দেশের স্বার্থে যা কিছু দরকার তার সবকিছুই অনিশ্চয়তায় ঝুলিয়ে রেখে অন্যের স্বার্থ পূরণ করা সরকারের নতজানুর নীতির প্রমাণ।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেড় হাজার কিলোমিটার পথের স্থলে এখন মাত্র ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে এলপিজি গ্যাস ভারত পৌঁছবে। তাদের এই সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার’ ছাড়া আমরা কি পেলাম? প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের স্বার্থে বিদেশিদের গ্যাস দিতে রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। এবার আমদানি করা ডিউটি ফ্রি এলপিজি দেয়ার উদ্দেশ্য তাহলে কি?
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে নির্বিঘেœ ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় আমাদের দেশের অবকাঠামো, নাগরিক পরিবহন, চলাচল এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে ক্ষয়ক্ষতির নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র উপক‚লে যৌথ নজরদারির ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেশবাসীর কাছে গোপন করা হয়েছে- যা জানার অধিকার তাদের রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অসত্য তথ্য দিয়ে ব্যর্থতা ঢাকার অপচেষ্টা করেছেন অভিযোগ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরের মাধ্যমে দেশের বিপুল লাভ ও উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে নানা অবান্তর বিষয়ের অবতারণা করেছেন। শুধু গঙ্গা চুক্তি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে তিনি যেসব তথ্য দিয়েছেন সে সম্পর্কে সত্য তথ্য জানাতে চাই। প্রকৃতপক্ষে ’৭৫-এর আগে গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি- সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি হয়েছে ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে। এই চুক্তিতে যে গ্যারান্টি ক্লজ ছিল তা ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে বাদ দেয়া হয়। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ভারত সফরকালে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও অসত্য। ওই সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারে বলা হয়, ‘সমতাভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত প্রক্রিয়ায় দুই দেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থে পানি বণ্টনের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হন’। কোনো আলোচনা না হলে যৌথ ইশতেহারে এই বক্তব্য থাকল কি করে?
আবরার হত্যার বিচার দাবি করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী ও সার্বভৌমত্ব-বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে খুন করা হয়েছে। আবরার দেশের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছে। আবরারের পুরো বক্তব্যটি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে তাই আবরার বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর। তার এই নির্মম মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না। বৃথা যেতে দেয়া হবে না। আবরারসহ এই সব দেশপ্রেমিক মানুষের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার এখনই সময়। যদি দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী প্রতিটি নাগরিক আজ এক পতাকাতলে এসে দাঁড়াতে পারে তাহলেই শুধু এই চুক্তি বাতিল সম্ভব। যেদিন জনগণের নির্বাচিত সরকার দেশের স্বার্থবিরোধী সকল চুক্তি বাতিল করবে।
কর্মসূচি : দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল ও এই চুক্তির বিরোধিতার কারণে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আগামী শনিবার ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগর সদরে জনসমাবেশ এবং আগামী রোববার দেশের সকল জেলা সদরে জনসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।