Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

দাবি মানতে বুয়েটের ভিসিকে আল্টিমেটাম

অসম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেবে না বললেন নুর

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আজ শুক্রবারের মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১০দফা দাবি মেনে না নিলে প্রত্যেক প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানোর ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সাথে এদিন দুপুর ২টার মধ্যে ভিসি নিজে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে সব দাবি মেনে না নিলে আগামী সোমবার থেকে অনুষ্ঠেয় ভর্তি পরীক্ষা হতে দেওয়া হবে না বলেও জানান তারা। এদিকে আবরার হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সংহতি সমাবেশ পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক র‌্যালীতে অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়া হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘হল প্রশাসনের যে ব্যবস্থাগুলো নেয়া উচিত ছিল, তা নেয়া হয়নি। এমনকি এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়াও গ্রহণ করেনি। কাজেই এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১৪ অক্টোবর বুয়েটে যে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।’ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত বুয়েটে যত শিক্ষার্থীর ওপর নির্যাতন হয়েছে তার বিচার করতে হবে বলা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ বিরোধী’ দিল্লী যুক্তি নিয়ে সমালোচনা করায় গত রোববার বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বুয়েট শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন তারা। এরপর খুনিদের বিচার দাবিতে ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

গত বুধবার প্রশাসনের জবাবদিহিতা, বিগত সময়ের সব নির্যাতনের বিচার, ক্যাম্পাসে ও হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিটি দাবির সঙ্গে সেটি বাস্তবায়নের জন্য তারা আল্টিমেটাম দিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেসব দাবির বিষয়ে প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে জানান আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, বুধবার শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করে নানা সিদ্ধান্ত জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা বলছেন, ‘আমাদের দাবি অনুযায়ী হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেছেন বলে জানানো হলেও কোনও অফিসিয়াল নোটিশ আমরা পাইনি। শুক্রবারের মধ্যে এসব দাবির বিষয়ে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা ভিসি নিজে এসে আমাদের না জানালে, আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’

১০দফা দাবির ষষ্ঠ দাবিতে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে বলা আছে উল্লেখ করে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ চাই না। আমরা চাই সাংগঠনিক যে রাজনীতি সেটি বন্ধ হোক। গণমাধ্যমে বিভিন্ন টকশোতে যারা কথা বলছেন, তারা যেন এই পার্থক্যের জায়গাটা বুঝে নেন।’ তারা বলেন, ‘বছরের পর বছর সাংগঠনিক রাজনীতির নামে জোর করে মিছিল মিটিংয়ে নেওয়ার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে আমরা সেটি আর এগুতে দিতে চাই না।’

ভারতের সাথে অসম চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেব না
এদিকে আবরার হত্যার বিচার দাবি, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল ও সারাদেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংহতি সমাবেশ ও গণপদযাত্রা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বাম ছাত্রসংগঠনের সমন্বয়ে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রায় অংশ নেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘যখনই কোন ঘটনায় ছাত্র সমাজ ফুঁসে উঠে, তখনই সরকার তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেয়, যাতে আন্দোলন ব্যাপক না হয়। এসব লোকদেখানো ব্যবস্থা। এসব দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি মায়ের মতো হয়ে বিচার করবেন, এগুলো কথার ফুলঝুড়ি। ছাত্ররা রাজপথে থাকলে প্রশাসনের টনক নড়ে। ছাত্ররা রাজপথ ছেড়ে দিলে তাঁরা আবার আগের মতো হয়ে যাবে।’ ভিপি নুর বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয়; অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। ক্যাম্পাসে সরকারি দলের ছাত্রসংগঠের সন্ত্রাস ও গুন্ডামি বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আবরারের রক্ত ঝরানো অসম চুক্তি আমরা বাস্তবায়ন হতে দেব না উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারতের সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে।’ গণপদযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে ছাত্রলীগের শোক র‌্যালী
আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাবি ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালীর আয়োজন করে ছাত্রলীগ। এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অভিমুখী রোহীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয় নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন সড়ক দ্বীপের পাশে অ্যাম্বুলেন্সটি অনেকক্ষণ আটকে থাকার পরেও সেটিকে বেরিয়ে যাওয়া জন্য কোনো জায়গা করে দিতে দেখা যায়নি ছাত্রলীগকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে ছাত্রলীগের শোকর‌্যালীর সমালোচনা করেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ আবরার হত্যায় জড়িত আর সেই ছাত্রলীগই আবরার হত্যার বিচার দাবিতে শোক র‌্যালি করছে, এর চেয়ে উপহাস আর কী হতে পারে। এটা ছাত্রলীগের শোক র‌্যালি নয় বরং তারা শোডাউন করেছে।’ অ্যাম্বুলেন্স আটকে র‌্যালির বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, অ্যাম্বুলেন্স আটকে কোন র‌্যালি হয়নি, যদি আটকে থাকে, তাহলে হয়তো যানজটের কারণে আটকা পড়েছে।

ছাত্রলীগের শোকর‌্যালী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে শুরু হয়ে পরে মল চত্বর, স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সেখানে আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। পাশাপাশি এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেদিকে কড়া নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠনের ওপর পড়া উচিৎ না। কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবে যদি কোনো খারাপ কাজ করি, তাহলে সে দায় কিন্তু সংগঠন নেবে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি আদর্শিক সংগঠন। এখানে কোনো অপরাধীর জায়গা নেই। ব্যক্তিগতভাবে কেউ অন্যায় করে থাকলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।’##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ