Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০৩০ সালে জিডিপি বর্তমান থেকে ৪ গুণ বাড়বে

মুক্ত আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, আমাদের দেশ যে উন্নয়ন হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০৬ সালে আমাদের যে জাতীয় আয় ছিল এটি ২০১৮-২০১৯ সালে চার গুণ বেড়েছে। জাতীয় বাজেট বাড়ছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১৯১৫ মার্কিন ডলার। এখন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি। আমরা যদি ৮ থেকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারি, তাহলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। আর দেশের উন্নতি হলে সবাই সুবিধা ভোগ করবে। আমাদের জিডিপি ২০০৬ সালের তুলনায় ৪ গুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০৩০ সালে আরো চার গুণ বাড়বে।

গত সোমবার রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সুরাইয়া হোসেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের মধ্যে সরকারকে ঠকানোর বিষয়ে আগ্রহ বেশি। কারণ সরকার বেশিরভাগ সময় ধরতে পারে না। কিন্তু কর দেয়া যে আমাদের দায়িত্ব সেটা আমরা বুঝতে চাই না। দেশের চার কোটি মানুষের আয়কর দেয়া উচিত। কিন্তু মাত্র ২০-২২ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দেয়। তিনি বলেন, উন্নয়নের পরে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো শান্তি শৃঙ্খলা এবং নৈতিক শিক্ষা। অনেকে আছেন, শান্তিতে থাকতে দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে যায়। আমাদের দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসলে, মানুষ আর বিদেশ টাকা রাখবে না। এজন্য আমাদের আমাদের নৈতিকতা সমৃদ্ধ ও সৎ হতে হবে। ঘুষ দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই স্ব-উদ্যোগ স্ব-পরিকল্পনা ও স্ব-অর্থায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ভারতের ১০ থেকে ১৫ লাখ, শ্রীলংকার ৫ লাখ, নেপাল ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ কাজ করছে। তারা আমাদের দেশ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বিদেশিদের বেতন অনেক বেশি। কারো বেতন ১০ লাখ টাকা হলে বেশিরভাগ সময় ব্যাংকে দেয় এক থেকে দুই লাখ টাকা। বাকিটা ক্যাশে দেয়। আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া বেতনের ওপর কর নেই। কর ফাঁকি দেয়ার এমন প্রবণতা অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সরকারকে ঠকানোর বিষয়ে আগ্রহ বেশি। কারণ সরকার বেশিরভাগ সময় ধরতে পারে না। কিন্তু কর দেয়া যে আমাদের দায়িত্ব সেটা আমরা বুঝতে চাই না। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ও উন্নতির কথা বিবেচনা করলে ৪ কোটি মানুষের কাছ থেকে আয়কর পাওয়া উচিত। কিন্তু সেখানে ১ কোটি মানুষের কাছ থেকেও আয়কর পাই না। মাত্র ২০-২২ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দেয়। যদিও পরোক্ষভাবে সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। দেশের উন্নয়নের জন্য বেশি বেশি কর দিতে হবে। সরকারকে ভরণ-পোষণ করার দায়িত্ব আমাদের। এদেশে অনেক টাকার মালিক হলেও কর দিতে চায় না। বাড়ির মালিক লাখ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করলেও অনেকেরই ট্যাক্স ফাইল নেই। অনেক ভাড়াটিয়া আছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা ভাড়া দেন কিন্তু কর দেয় না। তাদের দাবি ভাড়ায় থাকি আবার কর দেব কেন?

দুর্নীতি প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, মানুষের দুর্নীতির প্রথম তীর সরকারি অফিসের দিকে। সর্বত্রই দুর্নীতি। আসলে প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে দুর্নীতি আছে। পণ্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, বন্ডের সুবিধা নিয়ে কাপড় খোলা বাজারে বিক্রির প্রবণতা দেখা যায় ব্যবসায়ীদের। ধরতে গেলে আমদানি কমে যায়।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মানবিক ও সেবা কর্মকাÐের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আরো বলেন, এ সংগঠনের সাথে একাত্ম সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের শৃঙ্খলার চর্চা দেখা যায়। স্বেচ্ছায় রক্তদান, বান্দরবানের লামার দুস্থদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি মনে করি, সেবামূলক এই সংগঠনটির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে প্রশাসনসহ সর্বস্তরের এগিয়ে আসা উচিত।
প্রসঙ্গত, সক্রিয় সদস্যদের মুক্ত চিন্তা, সুস্থ মানসিক গঠন ও মননশীলতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি মাসে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে আসছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এর ৯২টি আয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজিত হলো এর ৯৩তম আয়োজন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ