Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিসর্জনের মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পলাশী থেকে বিজয়া শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা শেষে প্রতিমাগুলো বুড়িগঙ্গা নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল দুপুরের পর এ শোভাযাত্রা শুরু হয়। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন মন্দির থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে পলাশীতে হাজির হন অসংখ্য পূণ্যার্থী। হিন্দু ধর্মানুসারী শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধরা রঙ-বেরঙের পোশাক ও গালে-কপালে সিঁদুর লাগিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নাচছেন অনেকেই।

গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তিনি হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশের সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুপুর দেড়টা থেকে রাজধানীতে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটের ওয়াইজ বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটসহ (কেন্দ্রীয় বিসর্জন নিয়ন্ত্রণ ঘাট) নদীটির তীরে অন্যান্য এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দয়া হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে ওয়াইজ ঘাটে প্রথম প্রতিমা বিসর্জন দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আসে ধানমন্ডি পূজা উদযাপন কমিটিসহ বেশ কয়েকটি কমিটি। এদিকে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে গতকাল মঙ্গলবার মন্ডপে মন্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণ। গত শুক্রবার বোধনে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে মর্ত্য।ে হিন্দু বিশ্বাসে- টানা পাঁচদিন মৃন্ময়ীরূপে মন্ডপে মন্ডপে থেকে ফিরে গেছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। আর শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।

ধান-দূর্বার দিব্যি, ফের এসো মা/মা তুমি আবার এসো- ভক্তদের এমন আকুতিতে বিদায় নিয়েছেন দেবী। গতকাল সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের কায়মনো প্রার্থনা আর ঢাক-উলুধ্বনি-শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম আকাক্সিক্ষত সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবার ওয়াইজ ঘাটে ৯৭ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়েছে। আর এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৭টিসহ ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১টি মন্ডপে পূজা হয়।
উদযাপন পরিষদ জানায়, গতকাল দুপুর একটা থেকে রাত দশটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মধ্যরাত পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলে। এদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী, তাঁতী বাজার, শাঁখারী বাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মন্ডপে চলে বিষাদে-আনন্দে শেষ বিদায় উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ হয়।

নিরঞ্জনে অংশ নিতে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামন্ডপ থেকে ভক্তরা ট্রাক ও ঠেলাগাড়িতে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। শোভাযাত্রার পূর্বে নারীরা দেবীর ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেন। পুরুষরা অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করেন। তাদের অন্তরের কামনা আগামী শরতে আবার বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে ফিরে আসবেন মা উমা।

মন্দির ও শোভাযাত্রার পথে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় র‌্যাব সদস্য। ট্রাকে প্রতিমা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা, নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর হেঁটে এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত হয়ে ভক্তরা ঢাক-ঢোল, করতাল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়।
রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানো হিন্দু নারী পুরুষের আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক। বিকেল তিনটার পর ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে বিজয়ার শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, গুলিস্তান, নবাবপুর, রায় সাহেব বাজার হয়ে সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেয়।

প্রতিমা ঘাটে নিয়ে যাওয়ার পর ভক্তকুল শেষবারের মতো ধূপ-ধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়। নদীপাড়ে ধর্মীয় রীতি মেনে অপরাজিতা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শেষে প্রতিমা পানিতে ফেলে গ্রহণ করা হয় ‘শান্তিজল’। অনেকে ঘরে নিয়ে যান সেই ‘জল’।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় জানান, এবারের পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের এ আয়োজনের শেষ হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ