পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা প্রায় ৬০ হাজার মামলার বিচার বন্ধ। গত দশ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মামলাগুলোর সকল বিচারিক কার্যক্রম। ২০১৮ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন হওয়ার পর বিচার নিয়ে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে উদ্ধারকৃত মদ, মাদক দ্রব্য, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সেবীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হচ্ছে সেগুলোর বিচারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, সর্বশেষ সংশোধিত আইনটি অনুসরণের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ধারা প্রয়োগ করতে হবে। না হলে মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা সহজে পার পেয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে নগদ অর্থ, মূল্যবান রতœ , বিপুল পরিমাণ মদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার হচ্ছে। উদ্ধারের পরপরই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা হচ্ছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি বিরোধী অভিযান শুরু হয়। রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবসহ অফিস, বাসা-বাড়িতে অন্তত ৩৫টি অভিযান চালানো হয়। এতে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরি সম্রাট, আরমান, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, টেন্ডারবাজ জি.কে. শামীম, লোকমান হোসেন ভুইয়াসহ যুবলীগ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। এসব ক্লাব এবং গ্রেফতারকৃতদের দফতর থেকে উদ্ধার করা হয় দেশী-বিদেশী মদ ও মাদক দ্রব্য। মাদক উদ্ধারের পরপরই বিদ্যমান মাদক আইনে দায়ের করা হচ্ছে মামলা। আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষমান প্রায় ৬০ হাজার মামলার সঙ্গে যোগ হচ্ছে মাদকের নতুন মামলা। নতুন মামলার তদন্ত, চার্জশিট দাখিল এবং তা আমলে নেয়ার পর শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া। এটি এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে বিচারের জন্য আদালতে উঠবে মামলাগুলো। সে সময় মামলাগুলোর বিচারিক পরিণতি কি হবে- সে নিয়ে শংকা ব্যক্ত করেছেন আইনজ্ঞরা।
সুপ্রিমকোর্ট বারের আইনজীবী মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর সংশোধিত ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮’ গেজেট হয়। ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৯’ রহিত করে প্রণয়ন করা হয় এ আইন। এখন যে মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলো কোন আইনের আওতায় হচ্ছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মামলার এজাহারে মাদক আইনের কোন কোন ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে-সেটি দেখতে হবে। ধারা প্রয়োগে ত্রুটি থাকলে মামলাগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেটির সুবিধা আসামিরা অবশ্যই নেবে। ২০১৮ সালের মাদকের যে আইন পাস করা হয়েছে এটির ৪৪ ধারা অনুযায়ী মাদক দ্রব্য অপরাধের মামলার বিচার করতে হবে পৃথক ‘মাদক দ্রব্য দমন ট্রাইব্যুনালে’। অতিরিক্ত জেলা জজ পদ মর্যাদার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা ট্রাইব্যুনালের বিচার হবে। তবে ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে সংশ্লিষ্ট জেলার যেকোনো অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে মাদক ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দিতে পারবেন। কিন্তু আইনটি পাসের পর ১০ মাস পার হতে চললেও কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি। কেন গঠিত হয়নি ট্রাইব্যুনাল-জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘ইনকিলাব’কে বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের আগে সিনিয়র জজ নিয়োগ দিতে হবে। যখনতখন বিচারক নিয়োগ দেয়া যায় না। আমরা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
সুপ্রিমকোর্ট বারের আরেক আইনজীবী এমএম আনোয়ার হোসেন বলেন, নতুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫১ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে চার্জশিট হাতে পাওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালকে বিচার কার্য সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে সম্পন্ন করা না গেলে অতিরিক্ত আরো ৩০ কার্যদিবসে শেষ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টকে অবহিত করতে হবে। সুপ্রিমকোর্ট অনুমোদিত অতিরিক্ত ৩০ কার্যদিবসেও সম্পন্ন করা না গেলে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। এরপর আর সময় বাড়ানো যাবে না। অথচ এদিকে এখন অবধি ট্রাইব্যুনালই গঠিত হয়নি। ফলে আইনের এ ধারা প্রতিপালন সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মাদকের এক মামলায় হাইকোর্ট এই মর্মে আদেশ দিয়েছেন যে, ইতিমধ্যে যেসব মাদক মামলায় চার্জ গঠিত হয়েছে সেগুলোর বিচার ৬ মাসে সম্পন্ন করতে হবে। তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে সাক্ষী আনলে, বিচারক ও সরকারি কৌঁসুলি আন্তরিক থাকলে অভিযোগ আমলে নেয়ার পর এক দিনের মধ্যেই মামলার নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ পৃথক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পাশাপাশি বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
আইনমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আইনে উল্লেখিত ট্রাইব্যুনাল গঠনে সরকার আন্তরিক নয়। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারোয়ার বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আইনে উল্লেখ থাকলেও ট্রাইব্যুনাল গঠনে জটিলতা রয়েছে। যেমন ধরুন, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে সরাসরি হাইকোর্টে আপিল করতে হবে। পঞ্চগড় কিংবা খাগড়াছড়ির মতো দূরবর্তী কোনো জেলার একটি ট্রাইব্যুনাল যদি মাদকের কোনো মামলায় একজনকে ৬ মাসের কারাদন্ড দেয় তাহলে এটির আপিলের জন্য তাকে ঢাকায় আসতে হবে। এতে বাদী-বিবাদী উভয়ের আর্থিক ক্ষতি হবে। হয়রানিও বাড়বে। এসব ছোটখাটো মামলার বিচারের এখতিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাতে থাকলে সেই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।