Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আহারে জীবন দুর্বৃত্তায়নে শেষ

নুর হোসেন ইমন : | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

কয়েকদিন পরেই টার্ম পরীক্ষা। তাই পূজা আর পরীক্ষা পূর্ববর্তী ছুটি শেষ করার আগেই পরিবারের মায়া ত্যাগ করে ক্যাম্পাসে চলে আসেন আবরার ফাহাদ। রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে পৌঁছেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের আবরার বাসা থেকে এসেই বিকেলে যান টিউশনীতে। এরপর সন্ধ্যায় হলে ফিরলে তার ডাক আসে কথিত বড় ভাইদের থেকে। তবে এ ডাকই যে তার জীবনের শেষ ডাক হবে তা কল্পনা করতে পারেননি তার বন্ধুরা। বলছি ছাত্রলীগের হাতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কথা। কেন আবরারকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে পরিবারের। কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে ক্ষণে ক্ষণে আহাজারির মধ্যে সবাই জানতে চাচ্ছেন হত্যাকান্ডের কারণ। 

আবরার ফাহাদ (রাব্বি) বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। রবিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে ওই হলের নিচতলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ কর্মকর্তারা।
আবরারের বাবা বরকতুল্লাহ একটি এনজিও সংস্থায় কর্মরত আছেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি। আবরারের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে।
ক্ষণে ক্ষণে মুর্ছা গিয়ে মা রোকেয়া খাতুন বুলি আওড়াচ্ছেন, ‘আমার ছেলের কোনও শত্রæ ছিল না। কেন তাকে হত্যা করা হলো? রবিবার সকালেও এই বাসায় আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে ফোনে আমার কথা হয়। বিকাল ৫টায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম। ও আর ফোন ধরেনি।’ ভাইয়ের কি হলো, কেন সে ফোন ধরছে না সে প্রশ্ন ছোট ভাই ফায়াজের। ফায়াজ বলেন, ‘ফোন না ধরায় আমি ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভাইয়াকে নক করি। ভাইয়া সে সময়ও ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিল। তবে সাড়া দেয়নি।’
দুর্বৃত্তায়নে রাজনীতির কবলে গড়ে জীবন হারান আবরার। ছাত্রলীগের দাবি আবরার শিবির করতো। তবে আবরারের চাচা মিজানুর রহমান বলছেন, ‘আবরার খুব উদার ছেলে ছিলো। তার বিরুদ্ধে বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে। সে নিয়মিত তাবলীগে যেত, বুয়েটে ভর্তির পরও দুই তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল।’
আচ্ছা যখন আবরারের উপর হায়নার দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তখন সে কি কারো সাহায্য চেয়েছিলো। সে কি তার সেই কথিত বড় ভাইদের কাছে জীবনের কাকুতি করেছিলো? নাকি তার শুকনো মুখ থেকে এক দলা থু থু ছুড়ে মেরেছিলো শুয়রের মুখে। এসব চিন্তা করতেই সেইসব বড় ভাইদের জন্য ঘৃণায় মন ভরে আসছে তার সহপাঠীদের। চিৎকার করে কাঁদছেন কেউ কেউ, তারপরও খুঁজছেন আড়াল।
ভোররাতে যখন সিঁড়ির পাশে আবরারের নিথর দেহ পাওয়া যায় তখন কেউ ছিল না তারপাশে। করিডোর থেকে শুরু করে পুরো বারান্দায় ছিলো সিনসিন নিরবতা। সন্ধ্যায় ১০১১ নাম্বার রুম থেকে ডেকে নেয়ার পর তার সাথে কি হয়েছিলো তা কেবল আবরারের জানা। আবরার নেই। তার রুম থেকে বের হওয়ার আগে রেখে যাওয়া চেয়ার-টেবিল, বিছানা, কাঁথা সেভাবেই পড়ে আছে। ছেড়ে যাওয়া এলোমেলো জিনিসই তার সাক্ষী। আবরারের শরীরে বিভিন্ন জায়গা থেতলানো, কালসিটে পড়া আঘাতের চিহ্ন। কী নিদারুণভাবে পেটানো হলে একজনের দেহ এভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ