Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪, ২ শ্রাবন ১৪৩১, ১০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আজ বিসর্জন

উৎসবের আমেজে মহানবমী পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

শারদীয় দুর্গোৎসবের গতকাল ছিল ৪র্থ দিন। এ দিন মহানবমীর পূজা পালন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে এ দুর্গাপূজা উৎসবের শেষ হবে। চন্দ্রের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় মহানবমী কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। শাস্ত্র অনুযায়ী, শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দেবীর মহানবমী পূজা হয়ে থাকে। নানা আচারের মধ্যদিয়ে মহানবমীর পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি নিবেদন ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। মূলত চতুর্থ দিন মহানবমীই পূজার শেষ দিন। তবে বিজয়া দশমীর দিনেও বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকে।

নবমী সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা। মহিষাসুর নিধনের সময় দেবী দুর্গা প্রচন্ড ক্রোধে কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধারণ করেছিলেন। নবমীর পূণ্য তিথিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীতে শুভ শক্তির প্রকাশ ঘটান দেবী দুর্গা। নবমী তিথি শুরু হয় সন্ধিপূজা দিয়ে। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট আর নবমীর প্রথম ২৪ মিনিট মোট ৪৮ মিনিটে সন্ধিপূজা হয়। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা করা হয় এসময়। এই ৪৮ মিনিটেই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। আর রাবণকে বধ করেছিলেন রামচন্দ্র। গত রোববার দুপুর ২ টা ২৬ মিনিট থেকে ৩ টা ১৪ মিনিট পর্যন্ত সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টমীর আনুষ্ঠিকতা শেষে গতকাল সোমবার সকাল থেকে নবমীর আমেজ শুরু হয়েছে। ভিড় দেখা গেছে মন্ডপগুলোতে।

নবমীর সূচনাপর্বে সন্ধিপূজা বিশেষভাবে পালিত হয়। ১০৮টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ও ১০৮টি পদ্মফুল দেবীর চরণে নিবেদন করা হয়। পূজা শেষে অঞ্জলি দেওয়া হয়। নবমীর বিশেষত্ব হলো হোমযজ্ঞ অনুষ্ঠান। ২৮ বা ১০৮টি নিখুঁত বেলপাতা লাগে যজ্ঞের জন্য। বালু দিয়ে যজ্ঞস্থান তৈরি করে তাতে বেলকাঠ সাজিয়ে আগুন জ্বালাতে হয়। বেলপাতাগুলো ঘি এর মধ্যে চুবিয়ে যজ্ঞে দিতে হয়। হোমযজ্ঞের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়।
আশ্বিনের শারদপ্রাতে শুরু হয়েছিল দেবী পক্ষ। মহালয়া থেকে দেবীপক্ষের সূচনা। দুর্গাপূজার আনন্দ মূলত তখন থেকেই শুরু হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী, মহানবমী তিথি অন্যান্য তিথির তুলনায় শুভ। তাই এই তিথিতে দেবীর আরাধনা করলে পূণ্য লাভ হয়।

রাজধানীর পূজা মন্ডপগুলোতে সকাল ১০ টার মধ্যেই নবমী পূজা শেষ হয়েছে। পূজা শেষে অঞ্জলি দিয়েছেন ভক্তরা। গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের সভাপতি শ্রী সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, নবমী পূজার অঞ্জলী হয়েছে সকাল সাড়ে ১১ টায়। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে। গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের ১২ বছরে পদার্পন উপলক্ষে এবারের আয়োজনে একটু ভিন্নতা আছে। নিরাপত্তাসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টা পর্যন্ত থাকবে দশমী তিথি। দেবী দুর্গার বিসর্জন এই সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে মহানবমী মায়ের পূজা দেওয়া হয় গতকাল সোমবার সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। প্রতিদিনের মতো সন্ধ্যায় দেশের প্রতিটি মন্ডপে আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আর সারাদিন চলে চন্ডীপাঠ। আজ পূজার শেষ দিন, বিজয়া দশমী। ওইদিন মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে স্বামীগৃহে ফিরে যাবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। বিজয়া দশমীতে দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে। এদিনই প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে বিকেলে। এর আগে রাজধানীর ২৩৭টি পুজামন্ডপের অধিকাংশই এসে জমা হবে পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা ও পুজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিজয়ার শোভাযাত্রা। এরপর সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হবে প্রতিমা।
দুগাপূজার বিজয়া দশমীর দিন আজ সরকারি ছুটি। শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল হামিদ সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে হিন্দু স¤প্রদায়ের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।

গতকাল সোমবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির ও টিকাটুলীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মন্দিরের পূজামন্ডপ
পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করবেন যেন দেশের সকল মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে থাকতে পারে। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের যেন মঙ্গল হয়, উন্নত জীবন হয়, দারিদ্র্যের হাত থেকে যেন মুক্তি পায়।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার।

এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু (সনাতন) ধর্মাবলম্বীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলাদেশে একটি সার্বজনীন উৎসব। আবহমান কাল ধরে উপমহাদেশে এই ধর্মীয় উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ উল্লেখ করে তিনি শারদীয় দুর্গার সার্বিক সাফল্য কামনা করেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকার বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে ইশরাক হোসেন এ কথা বলেন। এসময় ওয়ারী থানা বিএনপি সেক্রেটারি মোজাম্মেল হক মুক্তা, ডিএসসিসি কাউন্সিলর আবদুল কাদের, সাবেক কাউন্সিলন মোহাম্মদ মোহনসহ স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ