পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চলমান শুদ্ধি অভিযানে চরম আতঙ্কে আছেন বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন বিতর্কিত নেতা ও ক্যাডার। বহুল সমালোচিত ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সামনে আরও গ্রেফতার হবে’। ইতোমধ্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানেও এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বিতর্কিত সমালোচিত নেতা ও ক্যাডাররা চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে দিন গুজরান করছেন। বিশেষ করে গত বেশ কয়েক বছর ধরে যারা নানা অপকর্মের মাধ্যমে নামে বেনামে অঢেল অবৈধ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন তারা সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত। আবার তাদের নিয়ে সচেতন নাগরিকমহলে এখানে সেখানে সমালোচনার ঝড় থেমে নেই। চলমান শুদ্ধি অভিযানের শুরু থেকেই চট্টগ্রামে ঘুরেফিরে আসছে সামশুল হক চৌধুরীর নাম। হরেক অভিযোগের তীর তার দিকে। সেই সাথে দ্রæত যোগ হয়েছে তার পুত্র নাজমুল করিম শারুনের নামও। সরকার দলীয় হুইপ ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গণের ক্লাবের পদ-পদবি ব্যবহার করে দিনে দিনে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
তাকে নিয়ে দলের মধ্যেও নানামুখী সমালোচনা অব্যাহত আছে। দলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে। নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা দিদারুল আলম চৌধুরী হুইপের বিরুদ্ধে দলের হাই কমান্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। একই সাথে তিনি থানা-পুলিশেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। ৮০-এর দশকে হকার থাকাকালে টাইপ মেশিন চুরির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান সামশুল হক চৌধুরী।
সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের আমলে জাতীয়তাবাদী যুবদলের খাতায় নাম লেখান, ধীরে ধীরে উপরের পদও বাগিয়ে নেন। এরপর সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম এইচ এম এরশাদের আমলে ভোল পাল্টাতে দেরি করেননি। তখন জাতীয় যুব সংহতির সাথে জড়ান তিনি। জাতীয় পার্টির সময়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের একটি ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদও লাভ করেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম চৌধুরীর অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন সামশুল হক চৌধুরী। নগরীর বাকলিয়ার ওই জনসভা থেকে এজন্য জিয়া তাকে ‘বিচ্ছু’ আখ্যায়িত করেন। সেই থেকে ‘বিচ্ছু সামশু’ নামেই তার জনপরিচিতি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এখন তিনি হুইপের দায়িত্বে আছেন। পটিয়া থেকে নির্বাচিত সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে নগরীর হালিশহরে আবাহনী ক্লাবে র্যাব-৭ চট্টগ্রাম অভিযান পরিচালনা করে। ক্রীড়াঙ্গণের নামকরা সেই ক্লাব থেকেই উদ্ধার করা হয় মদ, জুয়ার আসরের নানান সামগ্রী। তবে অভিযান টের পেয়ে জুয়াড়িরা আগেই পালিয়ে যায়।
এ অভিযানের পরদিনই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক অনুষ্ঠান শেষে সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সামশুল। যার ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, জুয়ার আসর না চললে ক্লাব চলবে কিভাবে? সরকার কী ক্লাবকে টাকা দেয়? প্রশাসন কী টাকা দেয়? বড় বড় ক্লাব চলে এভাবে জুয়ার টাকায়। আর ক্লাব না থাকলে ছেলেরা তো রাস্তায় ছিনতাই করবে। শুধু তাই নয়, তার ক্ষুব্ধ বক্তব্যে বলেছিলেন, সবই জুয়া, ওইগুলো যেমন জুয়া কেউ ক্লাবে বসে তাস খেললে তাও জুয়া। তিনি র্যাবের অভিযান নিয়ে হাস্যরসও করেন। এ নিয়ে দল এবং দলের বাইরে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ ঝড়ের মধ্যেই বোমা ফাটান হালিশহর থানার সাবেক ওসি মাহমুদ সাইফুল আমিন। তিনি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান দেন মাত্র পাঁচ বছরে আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে সামশুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এমন স্ট্যাটাস দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে মামলা করেন হুইপ। অন্যদিকে পুলিশ বিভাগও সাইফুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
মদ জুয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরকার দলীয় হুইপ সামশুলের চলমান শুদ্ধি অভিযানের বিরোধিতায় দলের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। যার রেশ এখনও শেষ হয়নি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অতিসম্প্রতি এক বিবৃতিতে অভিযানের বিরোধিতাকারীদের ‘গণদুশমন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সামশুল হক চৌধুরীকে নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম চৌধুরীর সাথে তার পুত্র নাজমুল করিম শারুনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে আবাহনী ক্লাবের বিষয় নিয়ে বয়োবৃদ্ধ এ নেতাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন হুইপপুত্র। এক পর্যায়ে দিদারুল আলমকে থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দেয়া এবং নগ্ন করে রাস্তায় হাঁটানোর হুমকি দেন হুইপপুত্র শারুন। এরপরই দিদারুল আলম চৌধুরী পাঁচলাইশ থানায় একটি জিডি করেন।
এদিকে সামশুল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। জুয়ার আসর থেকে ১৮০ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলাও করেছেন। দিদারুল আলমের বিরুদ্ধেও মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। এদিকে ওইসব অভিযোগ সম্পর্কে সামশুল হক চৌধুরীর বক্তব্য জানতে গতকাল একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।